1. admin@sokalerbangla.com : সকালের বাংলা :
মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরবাম:

সিরাজগঞ্জে সরিষা চাষাবাদে এখন মাঠে মাঠে  ফুলের  হলুদ ফুলের সমারোহ 

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ২০৮ Time View

আজিজুর রহমান মুন্না, সিরাজগঞ্জঃ
উত্তরবঙ্গের শস্যভান্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের ৯ টি উপজেলাতে  জমিতে  রেকর্ড পরিমাণ সরিষা চাষ করা হয়েছে।  এখন মাঠে মাঠে শুধু হলুদ ফুলের সমারোহ। সরিষা ফুল প্রকৃতি প্রেমীদের মুগ্ধ করছে। দূর থেকে মনে হয় যেন হলুদ চাদর।
এমন নয়নাভিরাম সরিষা ফুলের দৃশ্য, ফুলের মৌ মৌ গন্ধ আর মৌমাছির গুঞ্জন মনকে বিমোহিত করে। এ দৃশ্য দেখে দুচোখ ফিরিয়ে নেওয়া কঠিন। বিশেষ করে তরুণ- তরুণীরা, বধূরা সরিষা ক্ষেতে গিয়ে তুলছেন সেলফি, কেউবা আবার চুলের খোপায় গুছছেন ফুল।

ফসলের চেয়ে ভালো দাম পাওয়ায় এবার সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকেরা। কুয়াশা উপেক্ষা করে জমি  পরিচর্যা করছেন তারা।

বৃহস্পতিবার  (২১ ডিসেম্বর) জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি সিরাজগঞ্জের উপপরিচালক কৃষিবিদ বাবলু কুমার সূত্রধর  জানান যে-  আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বাম্পার ফলন আশা করা হচ্ছে।
চলতি মৌসুমে ৮৭ হাজার ২৩৯ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় ৬৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে গত বারের চেয়ে ২৩ হাজার ৭৩৯ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। গত বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯৩ হাজার ৯৮০ টন। এ বছর আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৮৬০ মেট্রিক টন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিদর্শনায়  আগামী ৩ বছরে ভোজ্য তেলের ৪০ শতাংশ বাড়াতে হবে।
সরকারের ভোজ্য তেলের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে আমরা সরিষার চাষাবাদ বৃদ্ধি করতে সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি। শুধু সরিষাই নয় জেলায় গত বছর ৩০০ মেট্রিক টন মধু আহরণ করা হয়েছিলো। এ মৌসুমে ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জমিতে মৌ-বাক্স বসানো হয়েছে। সিরাজগঞ্জ সহ বিভিন্ন স্থান হতে আগত মৌচাষীরা এসব মৌ বক্স বসিয়েছেন। এর মধ্যেই মধু উৎপাদন করা হয়েছে প্রায় ১২০ মেঃ টন। এ মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৪০০ মেট্রিক্স টন। এ মধু সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে আশা করছি।
ফসলের মাঠে মৌমাছির এই মধু সংগ্রহের ফলে সরিষার ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবার সিরাজগঞ্জসহ চলনবিল থেকে অন্তত ৭০০ মেট্রিক টন মধু আহরণ করা হবে।
যার কারণে বিদেশ থেকে সয়াবিন তেল ও মধু আমাদানি কমে আসবে। একই সঙ্গে এই পেশায় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ  সদর উপজেলার ছোনগাছা গ্রামের সরিষা চাষী আব্দুল হাই বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে সরিষার আবাদ করি। গত বছর ৮ বিঘা জমিতে টরি-৭ জাতের সরিষার আবাদ করতাম। ফলন হতো প্রতি বিঘায় তিন-চার মণ। কিন্তু চার বছর ধরে উন্নত বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করে বিঘাপ্রতি সাত-আট মণ ফলন পাচ্ছি। আর লাভবান হওয়ায় এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে উন্নত বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। ফলনও ভালো দেখা যাচ্ছে।
জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সব থেকে বেশি সরিষা  উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে উল্লাপাড়া উপজেলায়।

উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমী জানান- উল্লাপাড়া  উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার ৬১১ হেক্টর।  কৃষি বিভাগ থেকে ১ কেজি বীজ ও বিভিন্ন ধরনের ৩০ কেজি করে প্রণোদনা হিসেবে ৪১ হাজার ২০০ কৃষককে সার দেওয়া হয়েছে। এবার বারি-১৪, বারি-১৭, বারি-৯১ ও বিনা ৪ ও ৯ জাতের উন্নত মানের সরিষা আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে  পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উন্নত জাতের সরিষা আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করণ, প্রণোদনা দেয়ায় উৎপাদন বেড়েছে। এতে কৃষক লাভবান হচ্ছেন এবং জেলায় সরিষার আবাদ প্রতি বছরই বাড়ছে। জেলায় গত বছরে ৪০ হাজার লিটার সরিষার তেল উৎপাদন হয়েছিলো। এ বছর ৫৫ হাজার ৬১৬ লিটার সরিষা তেল উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। ফলে দেশে ভোজ্যতেলের ঘাটতি অনেকটা মিটবে বলে মনে করা হচ্ছে।

উল্লাপাড়ার কয়ড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘জমি থেকে দ্রুত পানি নেমে যাওয়ায় ও আবহাওয়া ভালো থাকায় আমি ৫ বিঘা সরিষার আবাদ করেছি। ভালো ফলন হবে আশা করছি।
কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  এক বিঘা জমিতে সরিষা আবাদে (হাল, বীজ, সার) খরচ হয় ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। এক বিঘা জমিতে ৭ থেকে ৮ মণ সরিষা পাওয়া যায়। প্রতি মণ দাম দাঁড়ায় ৩ হাজার ২০০ টাকা। আর প্রতি বিঘায় খরচ বাদে লাভের পাশাপাশি নিজেদের তেলের চাহিদাও পূরণ হয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে সময় মতো সরিষা ঘরে তুলতে পারবেন তারা। এ বছরের মতো আগামীতেও ভালো দাম পাবেন বলে তাদের আশা।আদর্শ মৌ খামারের মালিক শহিদুল ইসলাম জানান, ‘সরিষার ক্ষেতে এবার ৩ শতাধিক মৌ বাক্স বসানো হয়েছে। এতে প্রতি সপ্তাহে ৮ থেকে ১০ মণ মধু সংগ্রহ করা যায়। সরিষার ক্ষেতে মৌ বাক্স বসানোর কারণে সরিষার ফলনও বাড়ে। খাঁটি মধু কিনতে অনেকেই মাঠে আসছেন।মৌ চাষি আশরাফুল ইসলাম জানান, ‘দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মধু সংগ্রহ করতে এসেছে পাইকারি ব্যাবসায়ীরা। ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা উন্নতমানের মধু পাইকারি ২৫০-৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে মধু সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় কাঙ্খিত দাম পাওয়া যায় না।

তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের সরিষা চাষী আবুল হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে সরিষা চাষ করি। প্রতি বিঘায় ছয়-সাত মণ হারে ফলন আসে। দামও ভালো পাওয়া যায়। এ বছর এক বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved , sokalerbangla.com
Theme Customized BY LatestNews