আবুল কাশেম :
টাকা পেয়েও অত্যাচার থামাননি ডিবি হারুন একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন বিএনপি নেতা বিল্লাল।
সাত বছর আগে গাজীপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হন জুয়েলারি ব্যবসায়ী বিল্লাল বেপারি।সেই কথা মনে পড়লে এখনও শিউরে ওঠেন তিনি।
তার দাবি গাজীপুরের শ্রীপুরের স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকার জেরেই এ অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হয় তার উপর।
সাংবাদিকদের বলেন বিল্লাল জানান, অনেক চেষ্টা করেও তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুনের নির্যাতনের কথা ভুলতে পারছেন না। ২০১৭ সালের ২৮ মে দুপুরে বিল্লালের চন্নাপাড়ার নিজ বাড়িতে পিস্তল হাতে ঢোকে সাদা পোশাকের কয়েকজন। কর্মকর্তা ডেরিক কুইয়ার নেতৃত্বে ডিবি সদস্যরা তল্লাশির নামে বাড়ি তছনছ করে। প্রতিবাদ করলে স্ত্রী-সন্তানদের সামনে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে জানায়, তুই কি জানিস, গাজীপুরের বাপ এসপি হারুন! তিনি তোকে নিয়ে যেতে বলেছেন।
বিল্লাল আরো বলেন,গাড়িতে তুলে মাওনা চৌরাস্তা পার হতেই আমাকে চোখ বেঁধে ফেলে জানতে চায়– আমি হেফাজতের সমাবেশে কত টাকা খরচ করেছি? না বলা মাত্র ডান হাতের মধ্যমার নখ তুলে ফেলে। টের পাচ্ছি রক্তে জামা ভিজে যাচ্ছে। তখন থেঁতলে দেওয়া আঙুলে সুই ঢুকালে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফেরার পর পায়ে রড দিয়ে বেদম পেটায়। তখনও চোখ বাঁধা ছিল। পরিবারের কথা মনে পড়ছিল। আল্লাহ, তোমার জাহান্নামের শাস্তি তাহলে কতটা ভয়াবহ– এই বলে সান্ত্বনা খুঁজছিলাম।
এরপর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আবারও গাড়িতে তুলে দুই পায়ের পাতায় পেটায়। দুই হাতের আরও তিন আঙুলের নখ তুলে ফেলে। এভাবে ১৮ ঘণ্টা নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে ৫ কোটি টাকা দাবি করে এবং এক স্বজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুযোগ দেয়। এ সময় তাদের শেখানো কথা বলি, ‘আমাকে বাঁচাও, ৫ কোটি টাকার ব্যবস্থা করো।’
এক পর্যায়ে আমাকে গাজীপুর পুলিশ লাইন্সে নিয়ে মসজিদের ইমামকে ঘুম থেকে তোলা হলো। তওবা পড়াতে বললেও আমার শরীর অপবিত্র দেখে তিনি রাজি হলেন না। সেখান থেকে গাড়িতে তুলে একটি বনে নিয়ে হাতকড়া পরা অবস্থায় দৌড় দিতে বলে। আমি তাদের বলি, দৌড় দেব না। দাঁড়িয়ে আছে, এভাবেই আমার বুকে গুলি করেন। এ সময় কল আসে ওই ডিবি কর্মকর্তার ফোনে। পরে তারা ফের গাড়িতে তুলে ছোটে।’পরদিন সকালে পরিবারের সদস্যরা ৫০ লাখ টাকা জোগাড় করে ডিবি অফিসে এক কর্মকর্তাকে দেন। ছেড়ে দিতে চাইলেও কয়েক মিনিট পর পুরোনো জঙ্গি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে দু’দিনের রিমান্ডে নেয়। রিমান্ডে ডিবির আয়নাঘরে আমার সামনে আরেক ব্যক্তিকে বেদম মারধর করা দেখে আমি ভড়কে যাই এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চাই। তারা সুযোগ দিলে পরিবারকে বলি, আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাঁচাও। যা সম্পত্তি আছে, সব বিক্রি করে হলেও টাকা দেও। রমজান মাস চলছিল। রোজা অবস্থায় নির্যাতনের পর আমাকে এসপি হারুনের সামনে হাজির করা হয়। তাঁর প্রথম প্রশ্ন ছিল, হেফাজতের সমাবেশে কত টাকা ঢেলেছি? না-সূচক জবাব দিলে ভয় দেখিয়ে তিনি বলেন, আমার অফিসাররা যা বলে তাই কর। পরে স্বজনরা দুই দফায় ডিবিকে আরও ৮০ লাখ টাকা দেয়। রিমান্ডে অবশ্য কোনো নির্যাতন করেনি। পরে ৪১ দিন জেলে থাকার পর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হই।
বিল্লাল বলেন, হারুন আমার মতো অসংখ্য মানুষকে নির্যাতন করেছে। আমি তার মুখোমুখি হয়ে বলতে চাই– কোথায় গেল তোমার টাকা? নির্যাতন আল্লাহ দেখেছেন। তিনি সর্বদা ন্যায়বিচারক।