বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঢাকার আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর মান্নান মোল্লার বাড়ি দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, রবিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ৭—৮ জনের একদল ডাকাত গ্রীল কেটে বাড়িতে ডুকে পিস্তল ও দেশি অস্ত্র ঠেকিয়ে বাড়ির লোকজোনকে জিম্মি করে প্রায় এক ঘন্টাব্যাপী ডাকাতি করে নগদ ৩৮ লাখ টাকা ও প্রায় ৭০ ভরি স্বর্ণের অলংকারসহ প্রায় এক কোটি টাকার বেশি মালামাল নিয়ে পালিয়ে গেছে ডাকাত দল।
সোমবার ২২ জানুয়ারি ২০২৪ইং তারিখ ভুক্তভোগী মোঃ মান্নান মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, রাত ২টার দিকে হঠাৎ শব্ধ শোনে বাহিরে আসলে ৭—৮জনের ডাকাত দল ২টি পিস্তল ও রাম দা, ছ্যান ঠেকিয়ে আমাদের সবাইকে বেঁধে ফেলে তিনটি পৃথক জায়গায় রাখা নগদ ৩৮ লাখ টাকা এবং প্রায় ৭০ ভরি সোনার অলংকার লুট করে নিয়ে বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে চলে যায়। সাথে সাথে “৯৯৯” এ কল করলে পুলিশ ও র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সদস্য ও সাংবাদিকরা আসেন, তিনি আরো বলেন, এর আগে আশুলিয়ার আরো অনেক বাড়িতে একই ভাবে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও এ পর্যন্ত কোনো ডাকাত গ্রেফতার হয়নি, পিস্তল ও দেশি অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি, তাই এই ডাকাত দল আরো সাহস পাচ্ছে ডাকাতি করতে, আমাদের নিরাপত্তা নেই বললেই চলে।
এর আগে আশুলিয়া থানার পুলিশ ক্যাম্পের অদূরে টঙ্গাবাড়ির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ওবায়দুল তালুকদারের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনার পর আশুলিয়ায় ডাকাতদের গুলিতে একটি কারখানার এক নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন। এসময় ডাকাতদের কাজে বাঁধা দেওয়ায় ডাকাতদের আঘাতে আহত হয়েছেন আরো একজন। এর আগে আশুলিয়ার কাঠগড়া ৪—৫টি বাড়িতে একই সিস্টেমে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, ডিস ব্যবসা দখল করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গুলাগুলিতে ৩ জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গত রবিবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে আশুলিয়ার কুটুরিয়া উত্তরপাড়া এলাকায় মোঃ আমির দেওয়ানের বাড়িতে ডাকাতির এই ঘটনা ঘটে। নিহত নিরাপত্তাকর্মীর নাম মোঃ আব্দুল কাদের (৫৮), তিনি বি—বাড়িয়ার নবীনগর থানার বাসিন্দা। আশুলিয়ার কুটুরিয়া এলাকার “নীট ২০০৭ লিমিটেড” এর কারখানার নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। নিহতের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। এ ব্যাপারে স্থানীয় ফারুক দেওয়ান বলেন, মজিবুর দেওয়ানের ভাই আমির দেওয়ানের বাড়ির পিছনের গ্লীল কেটে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে ডাকাত দল, এরপর ডাকাতদের সাথে আমির দেওয়ানের ধস্তাধস্তি হয়, এসময় আমির দেওয়ানের ভাই মজিবুর দেওয়ান বিষয়টি বুঝতে পেরে চিৎকার করলে তার ছেলে জানালা দিয়ে ডাকাতদের দেখতে পায়। এসময় শর্টগান দিয়ে ফাঁকা গুলি ছোড়ে মজিবুর দেওয়ানের ছেলে, ডাকাতরাও গুলি ছোড়ে। তাদের মধ্যে প্রায় ২০ রাউন্ড গুলি বিনিময় হলে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। এ খবর পেয়ে স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে চিৎকার দিয়ে ওই বাড়ির দিকে গেলে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় মামুন দেওয়ানের বাড়ির সামনে ওই নিরাপত্তাকর্মীকে দেখে ডাকাতরা তাকে গুলি করে মৃত ভেবে পালিয়ে যায়। এসময় নিরাপত্তা কর্মীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে লোকজন তাকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে নিলে তিনি মারা যান। উক্ত ঘটনায় পুরো এলাকার মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এর আগে গত (২৮ অক্টোবর ২০২৩ইং) আশুলিয়ার কাঠগড়া দূর্গাপুর ৭—৮ জনের ডাকাত দল বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে ভিতরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে বাড়ির লোকজনকে জিম্মি করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে। এ সময় কৌশলে বাড়ির মালিক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ওবায়দুল তালুকদারের লাইসেন্সকৃত একটি পিস্তল ও একটি শটগান লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। পৃথক ঘটনা আশুলিয়া ইউনিয়নের কাঠগড়া দুর্গাপুর ডিস ব্যবসা দখল করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গুলাগুলিতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। একই ইউনিয়নে একদিনে পৃথক দুইটি ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশের উধ্বতন কর্মকর্তা ও র্যাব—৪, সিপিসি—২ এর সাভারের নবীনগর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার রাকিবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যগণ। গত (২৫ অক্টোবর ২০২৩ইং) ভোর রাত প্রায় ৩টার দিকে আশুলিয়া থানাধীন আশুলিয়া ইউনিয়নের টঙ্গাবাড়ি এলাকার মোঃ ওবায়দুল তালুকদারের বাড়িতে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ঢাকা—১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ এর চাচাতো ভাই উক্ত বাড়ির মালিক। পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আশুলিয়ায় তিন তলার বাড়ির দেয়ালের সঙ্গে বাঁশ রেখে ২য় তলার বারান্দায় উঠে ডাকাত দল। ওই বারান্দার ৩ ফুট গ্রিল বাকীটা উন্মুক্ত ডিজাইনের। এর ফলে ডাকাত দল বাঁশের সাহায্যে বারান্দায় উঠে জানালার গ্রিল কেটে ভবনের কক্ষের ভিতরে ঢুকে পড়ে, এরপর ডাকাত দল বাড়িটিতে প্রায় দুই ঘন্টার মতো সময় ধরে অবস্থান করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে। এই ডাকাতির ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটারের মতো দুরত্বে আশুলিয়া থানার একটি পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। অনেকেই বলেন, আশুলিয়া ইউনিয়নের এক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি ও টঙ্গাবাড়ি, কাঠগড়া, দুর্গাপুর, নয়াপাড়াসহ ৪—৫টি বাড়িতে একই সিস্টেমে পৃথক দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে কিন্তু পুলিশ কোনো ডাকাতকে গ্রেফতার বা অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি।
ঢাকা—১৯ এর সাবেক এমপি তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ এর চাচাতো ভাই ভুক্তভোগী ওবায়দুল তালুকদার গণমাধ্যমকে বলেন, ভোর রাতে তিন তলা বাড়ির ২য় তলার খোলা বারান্দায় উঠে তারপর জানালার গ্রিল কেটে ৭ থেকে ৮ সদস্যের অস্ত্রধারী ডাকাত দল ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। ডাকাতরা এরপর দুই ও তিন তলার বসবাসকারী সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লুটপাট শুরু করে। এ সময় ঘরে থাকা নগদ সাড়ে ৯ লক্ষ টাকা, ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, একটি পিস্তল ও একটি শর্টগানসহ মূল্যবান বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাত দল। সাভার সচেতন নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সালাউদ্দিন খান নঈম বলেন, “পুলিশের তৎপরতা যদি যথাযথ থাকে তাহলে অপরাধীরা এমন বড় ধরণের ঘটনা ঘটাতে সাহস পাওয়ার কথা নয়। যদি ঘটনাটি পুলিশের ক্যাম্পের অদূরে হয়ে থাকে, তাহলে এটা অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক।”
আশুলিয়া থানার আশুলিয়া ইউনিয়নের “আশুলিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (এসআই) আরাফাত উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভোর রাত ৪টা ৩২ মিনিটে খবর পাই। ৪টা ৩৮ মিনিটেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাই। তিনি বলেন, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গ্রিল কেটে ডাকাত দল ঢুকেছে। দুইটি লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গেছে ডাকাতরা। তিনি আরো বলেন, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, আমরা অপরাধীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। পুলিশ ক্যাম্প থেকে এতো কাছে এই বড় ধরণের ডাকাতি? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওইদিন ‘ক্যাম্প থেকে একটি টহল টিম ছিল রস্তমপুরে পূজার ডিউটিতে’। অবশ্য কাছাকাছি থানার আরো একটি টহল টিম ছিল কাঠগড়া এলাকায়, তবে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে দুইটি টিম। এরপর একই দিনগত সন্ধ্যা ৭টার দিকে কাঠগড়া দূর্গাপুর এলাকায় সরকার বাড়ির কাছে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা ডিস ব্যবসা দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গুলাগুলি ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটায়। পৃথক ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একাধিক মামলা দায়ের করা হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো সন্ত্রাসী ডাকাত গ্রেফতার বা অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। অনেকেই বলছেন যে, আশুলিয়ায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় আতঙ্কের মধ্যে জীবনযাপন করছেন।
উক্ত ডাকাতির গুলিতে নিরাপত্তাকর্মী নিহতের ঘটনার বিষয়ে আশুলিয়া থানার নতুন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএফ এম সায়েদ গণমাধ্যমকে বলেন, আশুলিয়া থানাধীন আশুলিয়া ইউনিয়নের কুটুরিয়া এলাকার একটি বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা করেছিলো এক দল ডাকাত। এ সময় ডাকাতদের গুলিতে একজন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল পুরিদর্শন করা হয়েছে, তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশুলিয়ায় উক্ত ডাকাতির পর পুলিশ ও র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থাল পরিদর্শন করেছেন। আশুলিয়ায় ডাকাতির ঘটনায় এ পর্যন্ত কোনো ডাকাত গ্রেফতার বা অস্ত্র উদ্ধার হয়নি বলে ভুক্তভোগীরা জানান, সেই সাথে মাদক সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ধারাবাহিক ভাবে ঘটছে বলে এলাকাবাসী জানায়। জানা গেছে, দেশি অস্ত্র তৈরি করছে কিছু কামার কিন্তু পিস্তল কে বা কারা ক্রয়—বিক্রয় করছে এবং কারা ব্যবহার করছে তাদের নাম জানা গেলেও বিষয়টি রহস্যজনক বলে জানান অনেকেই। গত এক বছরে অনেক বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। মামলা হয়েছে ১—২টি। পর্ব—১।