হেলাল শেখঃ ঢাকার আশুলিয়ার নয়ারহাট বাজার এলাকায় ১৯টি স্বর্ণের দোকানে গণডাকাতির ঘটনার পর আশুলিয়া ইউনিয়নের কাঠগড়া এলাকায় একাধিক বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, স্বর্ণ ও নগদ টাকাসহ অস্ত্র লুটের পর ঢাকা জেলা (উত্তর) ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ (বিপ্লব) এর নেতৃত্বে চৌকস গোয়েন্দা টিম অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ ৬ ডাকাতকে গ্রেফতার ও মালামাল উদ্ধার করেন এবং ৫জনকে দুই দিনের রিমান্ডে আনা হয়, রিমান্ডে চা ল্যকর তথ্য দিয়েছে গ্রেফতারকৃত ডাকাত দল।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রæয়ারি ২০২৪ইং) দুপুর ১ টার দিকে ঢাকা জেলা (উত্তর) ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ (বিপ্লব) সংবাদ সারাদেশ’কে বলেন, ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন নয়ারহাট বাজার এলাকায় ১৯টি সোনার দোকানে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও নগদ টাকা লুট, কাঠগড়া এলাকায় আজিজুর রহমানের বাড়িতে অস্ত্রের মুখে বাড়ির লোকজনকে জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা ও স্বর্ণ লুট, ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতদের গুলিতে একজন নিহত, ইয়ারপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর এক বাড়িতে ডাকাতিসহ আশুলিয়ায় ৬-৭টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ডাকাতির ঘটনার পর থেকে ঢাকা জেলা (উত্তর) ডিবি গোয়েন্দা টিম ছায়া তদন্ত করে মোবাইল টেকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬জন ডাকাতকে গ্রেফতার করার পর তাদের মধ্যে ৫জনকে আদালত দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন, দুইদিনের রিমান্ডে ৫জন ডাকাত সদস্য চা ল্যকর তথ্য দিয়েছে বলে তিনি জানান, তবে অন্যান্য ডাকাতদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ঢাকা জেলা (উত্তর) ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ (বিপ্লব) বলেন, গত শনিবার (২৪ ফেব্রæয়ারি ২০২৪ইং) রাজধানী ডিএমপিসহ ঢাকা জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬জন দুর্ধর্ষ ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার সোনাখালী গাজীবাড়ি এলাকার মৃত আনছার আলী গাজীর ছেলে মোঃ সুমন গাজী ওরফে সজল ওরফে পটকা সুমন (৩৬), খুলনা জেলার রূপসা থানার পলাশবাড়ী আলাইপুর এলাকার মৃত আকবর আলী শেখের ছেলে মোঃ আব্দুর রহমান বাপ্পি ওরফে কলম বাপ্পি (৩২), যশোর জেলার মনিরামপুর থানার খানপুর বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে মোঃ রাজু ওরফে মুরাদ (৩৮), খুলনা সদর থানাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড এলাকার মৃত মোশারফ খানের ছেলে মনিরুল ইসলাম খান ওরফে মনির (৩৫), খুলনা জেলার বাটিয়াঘাটা থানার রামভদ্রপুর গ্রামের মৃত আলমগীর শেখের ছেলে মোঃ আইনুল হক (৩২), ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানার উত্তর শ্রীরামপুর এলাকার ইউনুছ আলীর ছেলে ইয়াছিন আলী (২৯)। তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল গুলি ও নগদ টাকা, একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ২৩-৫৮৩৬) ও সুজুকি মোটরসাইকেলসহ গাড়ির ভেতরে থাকা একটি অত্যাধুনিক হাইড্রলিক কাটার এবং বিভিন্ন ধরণের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। উক্ত ৬জন ডাকাত সদস্যের মধ্যে ইয়াছিন ছাড়া বাকী ৫জনকে ঢাকা জেলা (উত্তর) ডিবি কার্যালয়ে ২দিনের ডিমান্ডে আনা হয়। (ডিবি) জানায়, রিমান্ডে তারা চা ল্যকর তথ্য দিয়েছে, এই ডাকাত দলের সাথে আরো যারা জড়িত আছে তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।
জানা গেছে, এর আগে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন নয়ারহাট বাজার এলাকায় ডাকাতদল বাজারের নাইটগার্ড ও দোকানের কারিগর কর্মচারীদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১৯টি দোকানের প্রায় ২শ’ ভরি স্বর্ণ এবং নগদ টাকাসহ বিপুল পরিমাণ মালামাল লুট করে নিয়ে পালিয়ে যায় ৪০-৫০ জনের ডাকাত দল। গত ২৪/০৬/২০২৩ইং তারিখ রাত অনুমান ০২, ৩০ ঘটিকার সময় ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার কাঠগড়া নয়াপাড়ার হাজী মোঃ আব্দুল আজিজ এর বাড়ির দোতালার পশ্চিম পাশের জানালার গ্রীল কাটিয়া ৮-১০ জনের ডাকাত দল রুমে প্রবেশ করে বাড়ির লোকজনের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা ও স্বর্ণ লুট করে নিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। এর আগে একইভাবে কাঠগড়া এলাকায় আরো ৩-৪টি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
উক্ত আশুলিয়া থানায় ডাকাতি মামলা নং ৭৩। তারিখ: ২৪/০৬/২০২৩ইং এ মামলার বাদী মোঃ আব্দুল আজিজ বলেন, ডাকাতির ঘটনার দিনগত রাত ৩টার দিকে আমার বাড়ির ২য় তালার একটি খালি রুমের ভিতরে প্রবেশ করে ৮-১০ জন ডাকাত দল এসময় আমার এবং আমার স্ত্রীসহ বাড়ির লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রায় ২৫ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ২৫ লক্ষ টাকা ও ২টি মোবাইলসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে পালিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, উক্ত মামলায় পুলিশ আসামীর সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে ৩-৪জনকে আসামী করেছে। নগদ ১৯,৫০,০০০/ টাকাসহ মোট অনুমান ২০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট হয়েছে এমনটি উল্লেখ করেছে। তিনি উল্লেখ করেন ডাকাতদের ২জন লোহার পাইপ দ্বারা আমার স্ত্রীর হাতে, পায়ে আঘাত করিয়া নীলাফুলা জখম করেছে, তিনি আরো বলেন, দুইজন ডাকাতের কাছে পিস্তল ছিলো, আরও দুইজনের কাছে লোহার পাইপ ছিলো এবং ৩-৪ জন লুটপাট করেছে। মামলার বাদী আজিজ হাজীর স্ত্রী মোছাঃ সুমি আক্তার বলেন, ডাকাতরা আমাকে এবং আমার বাড়ির লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অনেক মারধর করে প্রায় ২৫ ভরি স্বর্ণ ও প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা লুট করে নিয়ে পারিয়েছে।
এর আগে গত ০৫/০৯/২০২১ইং দিবাগত রাতে আশুলিয়ার বংশী নদী তীরবর্তী আশুলিয়া থানাধীন নয়ারহাট বাজার এলাকায় স্বর্ণের ১৯টি দোকানে গণডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতি হওয়া এক দোকানের মালিক রিদয় রায় ও আব্দুল্লাহ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শ্রী বিপ্লবসহ দোকান কর্মচারীরা গণমাধ্যমকে জানান, রাত দেড়টার দিকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে ৪০-৫০ জনের দুর্ধর্ষ ডাকাত দল নয়ারহাট বাজারে প্রবেশ করে। এসময় তাদের হাতে বন্দুক, পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্র ছিলো। ডাকাতরা বাজারের নিরাপত্তারক্ষী ও বিভিন্ন দোকানের কর্মচারীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ব্যাপক মারধর করে এবং একে একে ১৯টি দোকানে ড্কাতি করে প্রায় ২শ’ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ বিপুল পরিমাণ মালামাল লুট করে ইঞ্জিনের নৌকাযোগে নদীপথে পালিয়ে যায়।
উক্ত স্বর্ণের দোকানে ড্কাতির ঘটনার পর ঢাকা জেলার সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শাহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর এসব ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত কোনো ডাকাতকে আশুলিয়া থানা পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেননি। এরপর ধারাবাহিকভাবে একাধিক দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। অনেকদিন পর হলেও ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৬জন ডাকাতকে গ্রেফতার করেছেন। এই ৬জন ডাকাতকে গ্রেফতার করায় ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ও ভুক্তভোগীরা ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঢাকা জেলা (উত্তর) ডিবি পুলিশকে।