হেলাল শেখঃ ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়ার উত্তর বেরণ এইচ পি টাওয়ার ইয়াগী বাংলাদেশ গার্মেন্টস লিমিটেড শ্রমিক সুন্দরী নাজমা গণধর্ষণ—হত্যা মামলার আসামী সবাই আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে। গত ৫ বছরেও এই মামলার আসামীদের বিচার হয়নি বলে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি ২০২৪ইং) উক্ত মামলার বাদী মোঃ হানিফ ওরফে নাজমুল জানান, নাজমা গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার সাথে জড়িতরা বিভিন্ন ভাবে হুমকি প্রদান করায় নিরাপত্তাহীনতায় পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে আমাকে। এদিকে আশুলিয়ায় কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসী কতৃর্ক ধর্ষণ, গণধর্ষণ, খুন ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেড়েই চলেছে বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেন। ্উক্ত মামলার একজন আসামীর রহস্যজনক মূত্যু ও অন্য আসামীদের গ্রেফতার না করা এবং মামলার সকল আসামী আদালত থেকে জামিনে আছে, পুরো বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করছেন অনেকেই। নিহত নাজমার বাবা হানিফ ওরফে নাজমুল আরো বলেন, আমার মেয়ে নাজমা’কে গণধর্ষণ ও হত্যাকারীদের মধ্যে রিপন নামের একজনের মৃত্যু হলেও অন্য আসামীরা আদালত থেকে জামিনে আসছে। নাজমাকে ৩—৪ জন বখাটে যুবক গণধর্ষণ করে।
আশুলিয়ার জামগড়ার রূপায়ন আবাসন—১ এর ১নং গেইট, রবিউল সরদারের বাড়ির ভাড়াটিয়া, পাবনার সাঁথিয়ার আবু হানিফ ওরফে নাজমুল এর মেয়ে মাহফুজা আক্তার নাজমা (১৬) কে গণধর্ষণের ঘটনায় আশুলিয়া থানা মামলা না নেওয়ায় সে ফাঁসি নিয়ে আত্মহত্যা করে বলে বাদী জানায়। ভিকটিম নিহত হওয়ার পর পুলিশ মামলা রুজু করে। নাজমাকে গণধর্ষণ করিয়া হত্যা ও সহায়তা করার অপরাধে আশুলিয়া থানায় মামলা করার পর মোঃ আব্দুর রহিম (২৬), ১নং আসামীকে জনতা কতৃর্ক আটক করে থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এরপর এ মামলার ২নং আসামী ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ থানার বিপিনগর গ্রামের আব্দুল লতিফ এর ছেলে মোঃ রিপন (৩৫) এর লাশ সাভারের বিরুলিয়া এলাকার একটি বাগান থেকে উদ্ধার করে সাভার মডেল থানা পুলিশ। এ মামলার ৩নং আসামী ইব্রাহিম খলিল শিপনকে র্যাব—১ এর বিশেষ একটি দল ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল টেকিংয়ের মাধ্যমে ছায়া তদন্ত করে আটক করেন। গ্রেফতারকৃত আসামী ফেনী জেলার সোনাগাজী আকিলপুরের মোঃ ইব্রাহিম খলিল শিপন (৩০) কে গ্রেফতারের পর র্যাব তাকে আশুলিয়া থানায় সোপর্দ করেন।
তথ্যমতে, গত ৫ জানুয়ারি ২০১৯ইং ভিকটিম মাহফুজা আক্তার নাজমা (১৬), গণধর্ষণের শিকার হওয়ার পর (৬ জানুয়ারি ২০১৯ইং) নাজমা নিজে বাদী হয়ে প্রথমে আশুলিয়া থানায় মামলা করার জন্য একটি অভিযোগ দায়ের করেন। বিবরণঃ জীবিত নাজমা জানায়, জামগড়া রূপায়ন আবাসন—১ এর ১নং গেইট, রবিউল সরদারের বাড়ীতে মা বাবাসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভাড়া থেকে জামগড়া ইয়ার্গী বাংলাদেশ লিঃ পোশাক কারখানায় সুইং অপরেটার হিসাবে চাকুরি করতেন। নাজমার সম্পর্কে চাচা আব্দুর রহিম, রিপন, শিপনসহ তারা বিভিন্ন পদে এক সাথে কাজ করতেন একই পোশাক কারখানায়। প্রতিদিনের ন্যায় গত ০৫/০১/২০১৯ইং তারিখ সন্ধ্যা ৭টায় অফিস ছুটির পর চাচা আব্দুর রহিম (২৬) সহ আমি পায়ে হাটিয়া বাসায় যাওয়ার পথে আমাদের ফ্যাক্টরীর প্রায় ২০০গজ দুরে গলির রাস্তায় পৌছার পর অপরিচিত আরও ২জন বিবাদী তাদের নাম রানা ও শাকিলসহ ওদের সহায়তায় ১নং বিবাদী রিপন ও শিপন আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার পরিহিত কাপড় খুলিয়া আমাকে সবাই মিলে গণধর্ষণ করে। এ ঘটনার সাথে ৫ জন জড়িত বলে সে বেঁচে থাকা অবস্থায় জানায়। বাকি দুইজন আসামীকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয় কেন জাতি জানতে চায়।
ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, ঘটনার দিনগত রাত ১২টার দিকে উক্ত বিবাদী রিপন, শিপনসহ ৫ জন নাজমাকে বলে এ ঘটনা যেন কাউকে না বলিস, এই বলে হুমকি দিয়ে তারা ভিকটিমকে বাসায় পৌছাইয়া দিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর নাজমা সকালে আশুলিয়া থানায় গিয়ে মামলা করার জন্য অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ মামলা না নেওয়ায় আর বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় লোকলজ্জায় ভিকটিম নাজমা ফাঁসি নিয়ে আত্মহত্যা করেন। এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারের দাবী—নাজমাকে নির্যাতন ও গণধর্ষণ করার পর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে স্থানীয় আশুলিয়ার জামগড়া সরকার মার্কেট নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে ভিকটিমকে চিকিৎসার জন্য নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় মামলা নং ১০/ তারিখঃ ০৭/০১/২০১৯ইং। ধারা: ৯(৩)/৩০, ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩: ধর্ষণ করিয়া হত্যা ও সহায়তা করার অপরাধ।
উক্ত মামলার আসামী রিপন এর রহস্যজনক মৃত্যু হলেও শিপন ও রহিম আদালত থেকে জামিনে আসছে। এ মামলার ৩নং আসামী ইব্রাহিম খলিল শিপন (৩০) যিনি ইয়াগী বাংলাদেশ গার্মেন্টস লিমিটেড এর একজন কর্মকর্তা ছিলেন। মামলার ৩ জন আসামীর তথ্য পাওয়া গেলেও অন্য আরও দুইজন ব্যক্তি জড়িত ছিলো তারা আজও ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছে, এদিকে থানায় ও আদালতে অন্য সেই দুই আসামীর নাম প্রকাশ করেছেন রহিম ও শিপন। প্রায় ৫ বছর ধরে এখন পর্যন্ত তাদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি এবং এ মামলায় তাদের নামও নেই। নাজমা’র বয়স (১৬)। ২ বছর সুইং অপরেটার হিসেবে চাকুরি করেন। কাজ শিখে সুইং অপারেটার হতে আরও এক বছর সময় লাগছে, তাহলে কাজে যাওয়ার সময় তার বয়স ছিলো ১৪ বছর। শিশু শ্রম আইনে পোশাক কারখানায় ১৮ বছরের কম কোনো শ্রমিক চাকরি করতে পারবেন না এমন নিয়ম রয়েছে। উক্ত ঘটনার বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা আবার তদন্ত করলে হয়ত কেচু খুঁজতে গিয়ে সাপের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে বলে শ্রমিকসহ সচেতন মহলের দাবী।