বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঢাকার আশুলিয়ার ইউনিক এলাকায় ৫টি ফার্মেসি’তে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার অপরাধে পৃথক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
জানা গেছে, গত সোমবার (৫ ফেব্রæয়ারি ২০২৪ইং) দুপুর থেকে সন্ধা পর্যন্ত জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার আশুলিয়ার ইউনিক বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন, এ সময় নোভা হসপিটালের ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার অপরাধে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সাহারা মডাণ ফার্মেসিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। শেফা ফার্মেসীকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মোট ৫টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। এ সময় ইউনিক মেডিসিন কর্ণার ও সামিহা ফার্মেসী দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়ার অপরাধে ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল/ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিতকরণের নোটিশ দেয়া হয়। এই নোটিশে উল্লেখ- এমতাবস্থায়, কেন আপনার ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল/ব্যবসায়িক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করিবার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হইবে না তাহা অত্র নোটিশ প্রাত্তির ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে নি¤œস্বাক্ষরকারী কার্যালয়ে উপস্থিত হইয়া কারণ দর্শানোর জন্য আপনাকে নির্দেশ প্রদান করা হইল। এ অভিযান করেন মোঃ আব্দুল জব্বার মন্ডল, সহকারী পরিচালক জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকা জেলা কার্যালয়, ঢাকা।
এর আগে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানের সময় আশুলিয়ার জামগড়া ওষুধের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ধামরাই মেডিসিন কর্ণার বন্ধ করে পায়ের জুতা ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। উক্ত অভিযানের দিনও একই কাজ করেছে তারা, এসময় ধামরাই মেডিসিন কর্ণার ওষুধের দোকান প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ইউনিক মেডিসিন কর্ণার ও সামিহা ফার্মেসীর দোকানদারকে দোকান বন্ধ করতে বললে তারা ওষুধের দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যায়। জানা গেছে, শেফা ফার্মেসীর মালিক তার নামের আগে ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন লিখে ডাক্তার হিসেবে রোগী দেখেন। সূত্র জানায়, সাভার আশুলিয়ায় অবৈধ ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় করে গত ৭-৮ বছরে অনেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে, যেমন ধামরাই মেডিসিন কর্ণার এর মালিক।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ডিম, তেলসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে, বর্তমানে গত ৩-৪দিন ধরে আবার চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে, চিনি প্রতি কেজি ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে কিন্তু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ডিমের দাম বৃদ্ধি করে একটি চক্র। বর্তমানে প্রতিটি ডিমের ক্রয় মূল্য ১০ টাকা ৪০ পয়সা ছিলো-২০ পয়সা লাভে বিক্রি করে তার মূল্য হয় ১০ টাকা ৬০ পয়সা করার কথা। সেখানে আবার প্রতিটি ডিমের মূল্য বৃদ্ধি করে ১২ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি ডিমের লাভ ১ টাকা টাকা ৪০ পয়সা করে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
এর আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার আশুলিয়ায় ডিমের ৩টি আড়তকে মোট ৪ লক্ষ ৫০ হাজার জরিমানাসহ ১টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জনস্বার্থে সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর। ওইদিন শনিবার দুপুর ১২টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল বগাবাড়ি বাজার এলাকায় ডিমের আড়তে প্রথমে অভিযান পরিচালনা শুরু করে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। এসময় কয়েকজন অসাধুডিম ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়, আটককৃতরা হলেন-আসিফ হোসেন এন্টারপ্রাইজ ডিমের আড়তের মালিক শাহ আলম হোসেন ও এসজে এগ্রো এর মালিক স্বপন ইসলাম, পরে তাদেরকে জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ডিমের বাজারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আশুলিয়ায় ডিমের আড়তে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এভাবে কারসাজির মাধ্যমে ডিমের দাম বৃদ্ধি করা ইত্যাদি অপরাধে আসিফের ডিমের আড়তকে ১ লক্ষ টাকা, এস জে এগ্রো ডিমের আড়তকে ১ লক্ষ টাকা এবং আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের নরসিংহপুরের সরকার মার্কেটের ফয়সাল এন্টারপ্রাইজকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করাসহ সর্বমোট ৩টি প্রতিষ্ঠান ডিমের আড়ৎকে মোট ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দুইটি প্রতিষ্ঠানের মালিক জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয় এবং পরে জরিমানা আদায় করে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য কাজী ফার্মে উৎপাদিত সব ডিম প্রস্তাবিত দরের চেয়ে বেশি দর হাঁকিয়ে নিলামের মাধ্যমে সব ডিম ক্রয় করে অতি মুনাফা লাভের আশায় বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে তারা। উক্ত প্রতিষ্ঠানে ডিম ক্রয়-বিক্রর কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি, এমনকি প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স ৩০ জুন ২০২২ইং তারিখে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এ সকল অপরাধে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ফয়সাল এন্টারপ্রাইজের সকল প্রকার কার্যক্রম জনস্বার্থে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়, কিন্তু আইন অমান্য করে তারা পরের দিন থেকেই তাদের প্রতিষ্ঠান খোলা রাখেন। এ রকম অনেক ২নাম্বার প্রতিষ্ঠান রয়েছে আশুলিয়ায়। আশুলিয়ার জামগড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া ডাক্তার, ভুয়া কবিরাজ, ভুয়া উকিল, লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নকল, ভেজাল ওষুধ বিক্রি ও বিভিন্ন নকল পণ্য বাজারে ওপেন বিক্রি করা হচ্ছে।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুর-খান বলেন, জাতীয় ভোক্তা- অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর অভিযানে তাদেরকে সহায়তা করি আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএফএম সায়েদ স্যারের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স। তিনি আরো বলেন, ফার্মেসীতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার অপরাধে ৫টি ফার্মেসীকে জরিমানা করা হয়, এবং এসময় ২টি ফার্মেসী বন্ধ করে পালিয়ে থাকার অপরাধে নোটিশ দিয়ে বন্ধ করা হয়। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।