1. admin@sokalerbangla.com : সকালের বাংলা :
  2. naiknajmul@gmail.com : Najmul Hossain : Najmul Hossain
মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন
শিরবাম:
বাগেরহাটে শিক্ষকদের সম্মানে বিএনপি নেতার ইফতার মাহফিল ইসলাম ধর্মের আত্মত্যাগের মাস রমজান দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, দখল , চাঁদাবজি ও থানা বিএনপি’র আহ্বায়ক সহ অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত  শার্শায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত  সিরাজগঞ্জে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুুতি দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও মহড়া অনুষ্ঠিত  উলিপুরে মৌমাছির কামড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে ছাত্রদলের মানববন্ধন নওগাঁয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের লাল কার্ড রাণীশংকৈলে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালন উপলক্ষে আলোচনা সভা  লক্ষ্মীপুরে ছাত্র-ছাত্রী কল্যাণ সমিতির নতুন কমিটি ঘোষণা

ইসলাম ধর্মের আত্মত্যাগের মাস রমজান

সিরাজুল ইসলাম
  • Update Time : সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫
  • ১৪ Time View

বর্তমান বিশ্বের দ্রুত গতির জীবনধারা, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের সৌন্দর্যের যে ব্যাপ্তি তৈরি হয়েছে, মানবসভ্যতার বিকাশে এর গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলাম এক শান্তিপূর্ণ ধর্ম। এ ধর্মের প্রতিটি নির্দেশ ও আমলের পেছনে যেমন রয়েছে আধ্যাত্মিকতা, ঠিক এর বিপরীতে রয়েছে বিজ্ঞানময় ব্যাখ্যা। ইসলামে যেসব বিধিবিধান সরাসরি মানুষকে সংযত, আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক চেতনা ও প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে, মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা তথা রোজা তার মধ্যে অন্যতম।   রমজান পালন আধ্যাত্মিকতা, ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের আত্ম-উন্মেষের আলোকবর্তিকা হিসাবে কাজ করে। রমজান ইসলামিক চন্দ্র ক্যালেন্ডারের নবম মাস। এই মাসটি বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের জন্য গভীর তাত্পর্য বহন করে, তবে এর প্রাসঙ্গিকতা ধর্মীয় সীমানা ছাড়িয়ে সমসাময়িক বিশ্বের জন্য অমূল্য আধ্যাত্মিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।

রমজান শব্দটি এসেছে আরবি শব্দের ‘রমজ’ মূল ধাতু থেকে। এর অর্থ জ্বালিয়ে দেওয়া, পোড়ানো ও ভস্ম করে দেওয়া। বান্দা যেহেতু এই মাসে তার কুপ্রবৃত্তিসমূহ জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয়, তাই একে রমজান বলে। গুনাহের বোঝা মাফের জন্য নিজেকে আল্লাহর অনুগত হিসেবে পেশ করার মধ্যে নিহিত রমজানের মাহাত্ম্য। রমজান হল উপবাস, প্রার্থনা ও ব্যক্তিগত প্রবৃত্তি থেকে শুদ্ধাচারের নাম। ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মুসলমানরা আত্মাকে শুদ্ধ করার, স্বশৃঙ্খলা অনুশীলন করার এবং কম ভাগ্যবানদের প্রতি সহানুভূতির জন্য হিসাবে খাদ্য ও পানীয় প্রদান এবং অন্যান্য শারীরিক চাহিদা থেকে বিরত থাকার সুযোগ লাভ করে এই মাসে। আত্মত্যাগের এই কাজটি অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া দরিদ্রদের সঙ্গে একাত্মতার বোধ জাগিয়ে তোলে এবং সমবেদনা গড়ে তোলে, যা আজকের সমাজে সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং দাতব্যতার জন্য জরুরি।

সমাজ জীবনে রোজাদার ধনী-গরিব ব্যক্তি মিলেমিশে ইবাদত করে একত্রে সমাজবদ্ধ হয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করেন। প্রকৃত রোজাদার সমাজের কাউকে ঠকাতে বা কারো সঙ্গে প্রতারণা করতে পারেন না। রোজাদার কারো অনিষ্ট, অকল্যাণ ও ক্ষতিসাধন করবেন না; বরং মাহে রমজানে সমাজের অসহায়, হতদরিদ্র, দুর্বল, পীড়িত, অসুস্থ, অনাথ, ছিন্নমূল ও প্রাকৃতিক দুরারোগকবলিত নিরন্ন মানুষের খোঁজখবর রাখবেন, তাদের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করবেন, সেহ?রি-ইফতারের আয়োজন করবেন, যথাসম্ভব সাধ্য অনুযায়ী পরোপকারে ব্যস্ত থাকবেন। এটাই জরুরি। ধনী-গরিব আপামর রোজাদার এভাবে রোজার মাসে অসাধারণ ত্যাগ-তিতিক্ষা অনুশীলনের মাধ্যমে ইসলামের সাম্য, মৈত্রী, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হন। একজন রোজাদার ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি সব সময়ই অসত্ কাজকর্ম থেকে দূরে থেকে বিপদগ্রস্ত অসহায় মানুষের প্রতি পারস্পরিক সহানুভূতি প্রকাশ করেন।

মাহে রমজান সামাজিক ঐক্য ও নিরাপত্তা বিধানে এবং একটি সংঘাতমুক্ত গঠনমূলক আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বিশেষ করে, সমাজে রোজাদারদের পারস্পরিক সমবেদনা, সহমর্মিতা ও সহানুভূতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে রমজান মাসের রোজার ভূমিকা অপরিসীম। সমাজে ধনী-গরিব, দুঃখী-বুভুক্ষু, অনাথ-এতিম বিভিন্ন ধরনের মানুষ বসবাস করেন। রমজান মাসে রোজাদার ব্যক্তি সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার পরিহার করার ফলে গরিব-দুঃখীদের অপরিমেয় দুঃখ-কষ্ট উপলব্ধি করতে শেখেন। এভাবে ধনী লোকেরা অতি সহজেই সমাজের অসহায় গরিব-দুঃখী, এতিম-মিসকিন ও নিরন্ন মানুষের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল হয়ে তাদের জন্য সেহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করেন এবং তাদের দান-খয়রাত, জাকাত-সাদকা প্রদানসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। নবি করিম (সা.) যথার্থই বলেছেন, ‘এ মাস (রমজান) সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস।’ (মিশকাত)

মাহে রমজান আধ্যাত্মিক শক্তির বিকাশ এবং আত্মদর্শনের একটি অপূর্ব সুযোগ। অধিক ইবাদত, কুরআন তেলাওয়াত এবং তারাবিহ সালাতের মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ জোরদার করার এবং অতীতের সীমা লঙ্ঘনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার একটি বিশাল সুযোগ পান। এ সুযোগের মাসে আরেকটি মাইক্রো সুযোগ হিসেবে আসে লাইলাতুল কদর। যা আত্মা ও আধ্যাতিকতার উত্কর্ষের চমত্কার সমন্বয় সাধন করে থাকে। লাইলাতুল কদর এমন এক রাত, যা কেবল রমজান মাসেই পাওয়া যায়। কদর রজনির রয়েছে অতুলনীয় ও অনন্য শ্রেষ্ঠত্ব। এই রাতকে দেওয়া হয়েছে সহস্র মাসের চেয়েও অধিক মর্যাদা। পবিত্র কুরআনেও নাজিল করা হয়েছে ‘সুরা কদর’ নামের একটি সুরা। ঐ সুরার ২য় আয়াতে বলা হয়েছে, কদর রজনি সহস্র মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ’। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে : ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশায় কদরের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)। নিঃসন্দেহে এই রজনি আমাদের জন্য রহমত ও বরকতের। একই রজনিতে এমন এক কুরআন উম্মতে মুহাম্মদির ওপর নাজিল করা হয়েছে, যা স্বয়ং রহমতের অনুপম দৃষ্টান্ত। সুরা ইসরার ৮২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমি কুরআন নাজিল করেছি, যাতে রয়েছে মুমিনদের জন্য রোগের আরোগ্যতা এবং রহমত।’ এজন্য কুরআন পাঠের চর্চা অন্যান্য মাসের তুলনায় এই মাসেই বেশি করতে হয়।

রমজান ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের অনুপম শিক্ষায় মুসলিম সমাজকে উদ্ধুদ্ধ করে। মাহে রমজান ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহানুভূতির শিক্ষা শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সহায়ক। এ মাসের কারণে মানুষ ক্ষুধা ও তৃষ্ণার জ্বালা বুঝতে পারে। এজন্য এক মুমিনের হূদয় ধাবিত হয় অন্য মুমিনের সুখ-দুঃখের খবর সন্ধানে। যার বাস্তব রূপ প্রকাশ পায় ইফতারের মাধ্যমে। রসুলে পাক সা. এরশাদ করেন, ‘রমজান মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে। সে দোজখ থেকে মুক্তি পাবে আর সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে, কিন্তু এতে রোজাদারের সওয়াব থেকে কিছুই ঘাটতি হবে না অর্থাত্ রোজাদারের সওয়াব কমবে না।’ আল্লাহর রসুল বলেন, ‘লোকেরা ততক্ষণ কল্যাণে থাকবে যতক্ষণ তারা ইফতার জলদি করবে।’ (মুসলিম ১ খণ্ড :৩২১)
হাদিসে আছে, হজরত সালমান ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, ‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ রোজায় ইফতার করে, সে যেন খেজুর কিংবা খোরমা দিয়ে ইফতার করে। কারণ, তা হচ্ছে বরকত। আর তা না হলে পানি দিয়ে করবে, তা পবিত্রকারী। ’ (জামে তিরমিজি, ২য় খণ্ড :৬৯৫)। ইফতারির এ আনন্দঘন মুহূর্তের ঐতিহ্য বাঙালি মুসলমানের শত শত বছরের ঐতিহ্য। লালবাগের ইফতারির বাহারি বৈচিত্রের কথা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান। কিন্তু আজকের দিনে অতিরিক্ত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষ মান-মানসিকতার সমন্বয় করে রোজার অন্যতম উপাদান সেহরি ও ইফতার করতে পারবে কি না তা অনেকটাই প্রশ্নসাপেক্ষ। তার পরেও বাঙালি সমাজে রোজা পালনের চেষ্টার কমতি নেই। এটাই আমাদের সংস্কৃতির সৌন্দর্য আর মহান ধর্ম ইসলামের অবদান।

রমজান আমাদের মুসলিম সমাজের ধর্মীয় ও আধ্যাতিক সংস্কৃতির উপাদান হলেও তা আমাদের প্রতিবেশী অনান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রভাবিত করে সন্দেহ নেই। তারাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে রমজানের সেহরি ও ইফতারে অংশ নিয়ে থাকেন। উল্লেখ্য যে, আব্রামিহ ধর্মসহ বিশ্বের প্রায় সব ধর্মে উপবাসের প্রচলন রয়েছে। ধর্মের প্রথম থেকেই আত্মসংযমের এ ধারাবাহিকতা আমাদের মধ্যে লুকিয়া থাকা সকল পংকিলতাকে দূর করে দিক, আজকের দিনে এটাই কামনা।
মাহে রমজানে সমাজের স্থিতিশীলতা, শান্তি, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিদ্যমান। সমাজের প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মানুষ যদি মাহে রমজানের মতো অন্যান্য মাসেও আত্মসংযমের সঙ্গে জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও দলমতনির্বিশেষে সব ধরনের বিরোধ এড়িয়ে যান, তাহলে কোনো রকম সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় না। সমাজ-জীবনে পরস্পরের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে এবং সাম্য, মৈত্রী, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের ক্ষেত্রে রোজার ভূমিকা অনস্বীকার্য। আজকের রমজানের এ সংযমের শিক্ষায় পৃথিবীতে চলমান সকল যুদ্ধ ও হানাহানি বন্ধ হোক, আমাদের সকলের মধ্যে মানবতাবোধ জন্ম হোক, আবারও পৃথিবীতে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরে আসুক, মহান রাব্বুল ইজ্জতের কাছে এই মোনাজাত করি। সকলকে জানাই রমজানুল মোবারক।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved , sokalerbangla.com
Theme Customized BY LatestNews