প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২২, ২০২৪, ১০:৫৬ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জানুয়ারী ১৭, ২০২৪, ১১:৪৪ এ.এম
উলিপুরে তিস্তার চরাঞ্চলে স্কোয়াশ চাষ, দ্বিগুন লাভের আশা
জাহিদ আল হাসান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তার চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকায় বিদেশি জাতীয় সবজি স্কোয়াশ এর বাম্পার ফলনে খুশি চাষিরা। নিজেদের ফলানো সবজি বিক্রি করে তারা আজ অনেকটাই স্বাবলম্বী। খেতে সুস্বাদু বলে এ সবজি বাজারে বিক্রিও ভালো হচ্ছে। ফসলের চেয়ে স্কোয়াশ আবাদে লাভ বেশি। তাই দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন স্কোয়াশ চাষিরা। বিদেশি জাতীয় সবজি চাষের সফলতা দেখে তিস্তার চরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের অনেকেই এখন আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। স্কোয়াশ এটি বিদেশি সবজি হলেও বিগত কয়েক বছর থেকে বাংলাদেশে এ সবজির চাষ হচ্ছে। এটি দেখতে অনেকটা শসার মতো। স্কোয়াশে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে। এর পাতা ও কাণ্ড সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এবারে উপজেলায় সবজি চাষের লক্ষ্য মাত্রা ১ হাজার ৫০ হেক্টর। তার মধ্যে স্কোয়াশ চাষও রয়েছে। এছাড়াও স্কোয়াশ চাষিদের উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে সার দেয়া হয়েছে। তাছাড়া উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে।
সরেজমিন উপজেলার তিস্তায় ভেসে উঠা চরে গিয়ে দেখা যায়, স্কোয়াশ চাষিরা স্কোয়াশ ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন। গাছে গাছে ঝুলে আছে স্কোয়াশ আর স্কোয়াশ। স্কোয়াশের লতা কুমড়ার লতার মতো। লতার নিচে থাকে স্কোয়াশ। একেকটি স্কোয়াশের ওজন দুই থেকে দেড় কেজির মতো। একটি স্কোয়াশ গাছে গড়ে ১২-১৬ কেজি ফল হয়। খেতে সুস্বাদু এবং বাজারে চাহিদা থাকায় স্কোয়াশ চাষে ঝুকছেন চরাঞ্চলের চাষিরা। অল্প খরচে অল্প সময়ে স্কোয়াশের বাম্পার ফলন হওয়ায় দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন কৃষকেরা।
তিস্তার চরাঞ্চলের স্কোয়াশ চাষি আব্দুল হামিদ জানান, তিনি এবারে ২০ শতক জমিতে স্কোয়াশ চাষ করেছেন। স্কোয়াশ বাজারজাত করা পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। আরও খরচ হবে ৫ হাজার টাকা। মোট খরচ হবে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত স্কোয়াশ বাজারে বিক্রি হয়েছে ১০ মণ। কেজি প্রতি ২০ টাকা দরে পাইকেরিতে বিক্রি করেছেন। মণ প্রতি বিক্রি হয়েছে ৮'শ টাকা। এ পর্যন্ত ৮ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। তিনি মোট স্কোয়াশের আশা করছেন ৮০ থেকে ৯০ মণের। মোট আয়ের আশা করছেন ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার। স্কোয়াশের বাম্পার ফলন ও বাজার দর ভালো থাকায় দ্বিগুণ লাভ হবে বলে জানান তিনি।
তিস্তার চরাঞ্চলের স্কোয়াশ চাষিদের মধ্যে আব্দুল কাদের, ফজলার রহমান, আলম মিয়া ও লাল মিয়া সহ আরও অনেকে বলেন, তিস্তায় ভেসে উঠা চরে এখন সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে থাকি। তার মধ্যে স্কোয়াশ চাষ অন্যতম। কারণ অল্প সময়ে অল্প খরচে বাম্পার ফলনে দ্বিগুণ লাভ করা যায়। স্কোয়াশ বিদেশি জাতীয় সবজি হলেও এখন আমাদের চরাঞ্চলে ব্যাপক ফলন হচ্ছে। দিনে দিনে স্কোয়াশ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন চরাঞ্চলের চাষিরা।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, তিস্তার চরাঞ্চলের চাষিদের স্কোয়াশ চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। পরে তারা স্কোয়াশ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠে। স্কোয়াশের বাম্পার ফলন হওয়ায় তারা অনেক খুশি। স্কোয়াশ চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষবিদ মোঃ মোশারফ হোসেন জানান, স্কোয়াশ বিদেশি সবজি হলেও আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় এর চাষাবাদ হচ্ছে। সাধারণত দোআঁশ মাটিতে এর ফলন ভালো হয়। স্কোয়াশ ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ এবং আয়রনসহ বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরা একটি সবজি। বিষেশ করে উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চল ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় এর চাষ হচ্ছে। তাছাড়া এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করে খরছ বাদে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হয়। অপরদিকে এক বিঘা জমিতে স্কোয়াশ চাষ করে সব খরচ বাদে লাখ টাকা আয় করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
Copyright © 2024 সকালের বাংলা. All rights reserved.