মোঃ আলমগীর মোল্লা স্টাফ রিপোর্টার ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে মোক্তার পুর ইউনিয়নে
গরু বিক্রির টাকা থেকে স্বামীকে নেশার টাকা দিতে অস্বীকার করায় নির্মম ভাবে খুন হয় গৃহবধু মিতু রানী দেবনাথ। খুনী স্বামী রাজিব চন্দ্র দেবনাথ এখন প্রকাশ্যে ঘুরে পরিকল্পিত হত্যাকে আত্মহত্যা বলে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মিতু নিহতের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে পুলিশ রাজিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে না। সে যেকোন সময় পালিয়ে যেতে পারে। এমনটাই দাবি করছেন নিহত মিতুর পরিবার। তারা পুলিশের এমন ভূমিকায় ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মোক্তারপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের সুনীল চন্দ্রের কন্যা মিতু রানীর সাথে প্রায় নয় বছর পূর্বে পাশের মৈশাইর গ্রামের অজিত চন্দ্র দেবনাথের পুত্র রাজিব চন্দ্র দেবনাথের বিয়ে হয়। বিয়ের আগেই থেকে সে নেশা করতো কিন্তু পরিবারের কেউ জানতো না, বিয়ের কিছুদিন পর যেতেই না যেতে আরও বেশি নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে, রাজিব নেশা করে যৌতুকের জন্য মিতুর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এরই মধ্যে তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে মিতুর মা মমতা রানী দফায় দফায় রাজিবকে নগদ প্রায় ৭ লাখ, দুইটি গাই গরু ক্রয় ও গোয়াল ঘর নির্মাণ করে দেয়। এছাড়াও চার ভরি স্বর্ণালংকার, খাট, শোকেস, আলমারি, ওয়্যারড্রপ, টিভি, ফ্রিজ, সেলাই মেশিন, সাবমারসিবল টিউবওয়েল ও হাড়ি পাতিলসহ আরো প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকার মালামাল দেয়। এত কিছু দিয়েও নেশাগ্রস্থ স্বামীর হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে পারেনি মিতু।
মিতুর মা মমতা রানী দৈনিক চৌকস কে বলেন, ঘটনার তিনদিন আগে মিতু আমায় ফোনে জানায় আমাদের দেওয়া গরুগুলোর একটির বাছুর সে ৭৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। পাসপোর্ট ও হাত খরচের কথা বলে রাজিব ২৬ হাজার টাকা নিয়েছে। ঘটনার দিন চারটার দিকে রাজিব বাকি টাকা দিতে বললে মিতু দেয়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাজিব তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ খাটের উপর ফেলে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে মিতু আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার চালাতে থাকে। মিতুর বাবা খবর পেয়ে মেয়ের শ্বশুড় বাড়ি গিয়ে লাশ খাটের উপর পড়ে থাকতে দেখে। কালিগঞ্জ পুলিশ কে ফোন দেয়,
পুলিশ লাশ থানায় নিয়ে গেলে আমি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করি কিন্তু পুলিশ সেটি অপমৃত্যু মামলা হিসেবে রেকর্ড করে। এ ঘটনার দুইদিন পরে রাজিব আমাদের বাড়ি এসে আমার পা ধরে প্রাণ ভিক্ষা চায়। মিতু আত্মহত্যা করেছে বলে রাজিব এখন প্রকাশ্যে প্রচার করে বেড়াচ্ছে। রাজিবের বিরুদ্ধে পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি, বর্তমানে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। এ ব্যাপারে মিতুর বাবা সুনীল চন্দ্র বলেন, আমার মেয়ের শ্বশুড় বাড়ির লোকজন আমাকে জানায় মিতু বসত ঘরের ফ্যানের সাথে ওড়না প্যাঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তার স্বামী রাজিব বাড়িতে এসে ঘরের দরজা বন্ধ থাকায় ডাকাডাকি করেও শব্দ না পেয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে দেখে মিতু ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে ঝুলে আছে। কিন্তু আমি দরজার কোন অংশ বা ছিটকানি ভাঙ্গার আলামত পাইনি এবং লাশের ডান গালে, গলায় ও থুতনিতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এতে আমার সন্দেহ হলে রাজিবকে প্রশ্ন করি কিন্তু সে কোন কথা না বলে ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে যায়। আমার মেয়েকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মিতুর স্বামী রাজীব চন্দ্র দেবনাথ বলেন, টাকা চাওয়ার এক পর্যায়ে মিতুর সাথে আমার ঝগড়া হয়। পরে আমি ছেলেকে আনতে স্কুলে চলে যাই। স্কুল থেকে ফিরে ঘরের দরজা বন্ধ দেখে মিতুকে ডাকাডাকি করি। কিন্তু মিতু দরজা না খোলায় আমি দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ডুকে দেখি মিতু সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে। আমি দা দিয়ে তার গলার ওড়না কেটে খাটে নামাই। দরজা ভাঙ্গার আলামত নেই ও নিহত মিতুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন কিসের, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের কোন উত্তর রাজিব দেয়নি। স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ারুল হক নাদের বলেন, মিতু রানী একজন শিক্ষিত ভালো মানুষ ছিলেন। সে আত্মহত্যা করার মত মেয়ে নয়। রাজিব এলাকার নেশাগ্রস্থ বখাটে ছেলে। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে তার মা চাকুরীর টাকা রাজিবের হাতে তুলে দিয়েছিল। মিতু নিহতের পিছনে রহস্য উদঘাটন করে অপরাধীকে আইনের আওতায় নেওয়া হোক।কালীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান পিপিএম জানান, বৃহস্পতিবার রাতে সংবাদ পেয়ে ওসি (তদন্ত) রাজিব চক্রবর্তী ও এস আই শামিম আল মামুন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায়।সেখানে গিয়ে লাশের সুরতহাল সাপেক্ষে মরদেহটি ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর মর্গে প্রেরন করে। রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। তাছাড়াও তদন্ত অব্যাহত আছে, তদন্তে যদি ভিন্ন কোন সাক্ষ্য প্রমান পাওয়া যায় তবে আইন অনুসারে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।