নাজমুল হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক :
লক্ষ্মীপুর জেলায় পারিবারিক বিরোধে ফাতেমা বেগম নামে এক গৃহবধূকে হত্যার ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা যাদৈয়া মাদরাসার সামনে এ মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধন থেকে ফাতেমা বেগমের হত্যাকারী তাঁর স্বামী রাজু হোসেন ও ভাসুর মোহাম্মদ বাবলু সহ অন্য সহযোগিদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করা হয়।
এর পূর্বে, গত সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদনগর এলাকায় ফাতেমা বেগমের বাবার বাড়ির পুকুর থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তাঁর স্বামী ও ভাসুরকে গাছের সাথে বেধেঁ রেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা।
পরবর্তীতে পুলিশ এসে তাদের দুইজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
জানা যায়, গৃহবধূ ফাতেমা বেগম মোহাম্মদ নগর এলাকার মৃত সাইফুল্লাহর কন্যা এবং একই এলাকার রাজু হোসেনে স্ত্রী ছিলেন। তাদের ৪ বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। অভিযুক্ত রাজু একই ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মাইজের বাড়ির মোসলেহ উদ্দিনের পুত্র। তিনি পেশায় একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক। তাঁর আরও এক স্ত্রী রয়েছে।
৫ বছর আগে ফাতেমা বেগমের সাথে একই এলাকার রাজু হোসেনের সাথে বিবাহ হয়। বিবাহের পর থেকে স্বামীর বাড়ির লোকজন ফাতেমাকে যৌতুকের জন্য চাপ দিয়ে আসছিলো। এক পর্যায়ে ফাতেমা বেগমের বাবা জমি বিক্রি করে রাজু হোসেনকে বিদেশে পাঠায়। কিন্তু বিদেশে মাসখানেক থেকে বাড়িতে চলে আসে রাজু। এরপর থেকে পারিবারিক বিরোধ লেগেই আছে।
গত ১৫দিন আগে যৌতুকের জন্য চাপ দিলে ফাতেমা বেগম অপরাগতা প্রকাশ করে বাবার বাড়িতে চলে আসে। এক পর্যায়ে রাজুও শ্বশুর বাড়িতে চলে আসে।
রবিবার রাতে এসব বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর রাতের কোন এক সময়ে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে শ্বাসসরোধে হত্যা করে লাশ পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় স্বামী রাজু হোসেন। সোমবার সকালে ফাতেমা বেগমের লাশ বাড়ির পুকুরে ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। এসময় রাজু হোসেন ও ভাসুর বাবুলকে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তাদের দুইজনকে আটক করে গাছের সাথে বেধেঁ রেখে পুলিশকে তুলে দেয় এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নিহত ফাতেমা বেগমের মা রোকেয়া আক্তার, বোন রাবেয়া আক্তার, ভাই আবদুল্লাহ, রসূল আমিন।
এলাকাবাসীর পক্ষে বক্তব্য রাখেন- আবুল হাসান সোহেল, আবদুর নুর, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুজাহিদুল ইসলাম, রতনপুর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল বাতেন, আল আমিন, ইউশা, নাসিফ, ওহিদুল ইসলাম, মোহন প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘যৌতুকে জন্য নির্যাতন করেই ফাতেমাকে হত্যা করা হয়েছে। পূর্বেও তাকে ব্যাপক নির্যাতন করা হতো। দ্রুত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই আমরা।’
লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত মো. হাসান মোস্তফা স্বপন, আজকের মানববন্ধনের ঘটনায় আমরা জেনেছি। হত্যার ঘটনায় লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানার মামলা হয়েছে। যার নং-০৯, তারিখ-১৪-১০-২০২৪, ধারা-৩০২/৩৪। মামলার তদন্ত চলছে। উল্লিখিত মামলায় তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরনে করা হয়েছে।