হেলাল শেখঃ তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ ও অতিরিক্ত হাজার হাজার চুলা ব্যবহারে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা কথিত আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গিয়ে মোটা অংকের টাকার মালিক হয়েছে।
জানা গেছে, আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ভাদাইল এলাকায় ডাঃ কাজল এর ৬ তলা নতুন ভবনে ১টি চুলা বৈধ আর ৬৪টি চুলা অতিরিক্ত অবৈধ চুলায় সরকারি তিতাস গ্যাস চুরি করে ব্যবহার করছে, আশুলিয়ার কাঠগড়া সরকার বাড়ির ডিস ব্যবসায়ী হত্যা মামলার আসামী কেমিলি এর বাড়িতে ১২টি চুলা অবৈধভাবে ব্যবহার করছে, এরকম প্রায় প্রতিটি এলাকায় বৈধ চুলার চেয়ে অবৈধ চুলার সংখ্যা অনেক বেশি ব্যবহার করছে গ্যাস চোরেরা। এসব চোরদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা বিভিন্ন উপর মহলের পরিচয় দিয়ে থাকে, এক কথায় চোরে চোরে করছে চোরাকারবারী।
গত এক মাস ধরে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঢাকার আশুলিয়ায় বিভিন্ন বাসা বাড়ি ও হোটেলে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নিয়ে ব্যবহার করছে অনেকেই। এর কারণে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। তিতাস গ্যাসের কতৃর্পক্ষ অভিযান চালালে কোনো ভাবেই বন্ধ করতে পারছেন না অবৈধ সংযোগ। অবৈধ সংযোগ বাণিজ্য জমজমাট ভাবে চলছে। বৈধ গ্যাহকদের চুলায় গ্যাস না থাকলেও অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীদের চুলায় গ্যাস থাকে সবসময় এর রহস্য কি জাতি জানতে চায়। যেমনঃ কিছু হোটেলে রান্না চলে প্রায় ২০ ঘন্টা, এই ২০ ঘন্টা গ্যাসের চাপ অনেক বেশি কিন্তু বৈধ গ্রাহকের চুলায় গ্যাস থাকে না বলে অনেকেই অভিযোগ করেন এবং সরেজমিনে গিয়ে তার সত্যতা পাওয়া যায়।
জানা গেছে, ঢাকার আশুলিয়ার গৌরিপুর সুমন হাসানের ইস্টিকুটুম হোটেলে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে নেয়া তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ অবাধে চালাচ্ছে। তিনি আশুলিয়া ইউনিয়নের গৌরিপুরের স্থানীয় মৃত রাজ্জাক মুন্সির ঘর ভাড়া নিয়ে ৩ বছরের বেশি অবৈধ ভাবে গ্যাস ব্যবহার করছে। সেই সাথে আশুলিয়ার ভাদাইল, জামগড়া, মীরবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছে দালাল চক্র। প্রতি মাসে ৪—৫টি অভিযানে তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন কতৃর্পক্ষ কিন্তু দিনব্যাপী অভিযান শেষে রাতে আবারও অবৈধ সংযোগ দেওয়ার অনেক নজির ও সত্যতা রয়েছে, এ যেন চোর পুলিশের খেলা।
বিশেষ করে সরকারের তহবিল থেকে প্রতিটি অভিযানে খরচ হয় প্রায় লক্ষাধিক টাকা, একই স্থানে ৭—৮ বার অভিযান চালানোর নজির রয়েছে কিন্তু অভিযান করা হলেও গ্যাস চোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি প্রায় দুই বছর। তাহলে সরকারের কত টাকা খরচ ও কত টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে তার কোনো হিসাব নাই। তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে প্রতিটি বাসা বাড়ি থেকে ৩০—৫০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে দালাল চক্র, হোটেল বা শিল্প—কারখানার সংযোগ হলে লক্ষাধিক টাকা নেয়া হয়, এইভাবেই একের পর এক সরকারি সম্পদ নষ্ট করে তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তার গ্যাসবাজিতে চোরেরা আর আগের মতো ভয় পায় না, তাদের খুঁটির জোড় কোথায় তা জাতি জানতে চায়।
সূত্র জানায়, এর আগে ঢাকার আশুলিয়ার কাঠগড়া মোল্লা পাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছেন সাভার তিতাস কতৃর্পক্ষ। তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তাদের দাবি পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার পরিস্থিতি বা সক্ষমতা আপাতত নেই, তাই গ্রাহকদের আশায় ঝুলিয়ে না রেখে গ্যাস সংযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধ রাখার জন্য সরকারি সিদ্ধান্তটি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—কথাগুলো বলেছেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ঢাকার আশুলিয়ার কাঠগড়া, ইউসুফ মার্কেট, তাজপুর, এদিকে ইয়ারপুর ইউনিয়নের জামগড়া এলাকা, মীর বাড়ি, চিত্রশাইল এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগের ছড়াছড়ি, হাজার হাজার অতিরিক্ত চুলা ব্যবহার করছে বেশিরভাগ বাসা বাড়ির মালিকরা। তথ্যমতে, এসব অবৈধ সংযোগ দাতারা হচ্ছে জামগড়া এরাকার নাজিম উদ্দিন, সোহেল মীর, সাঈদ মীরসহ ১৫—২০ জনের দালাল চক্র।
অন্যদিকে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের তৈয়বপুর এলাকার সিরাজ, হানিফ, আব্দুল জলিল, ফারুক, ইউসুফ মার্কেটের কথিত মেম্বার মকবুল ও জামগড়া মীর বাড়ির জামাই হাবিবসহ অনেকেই তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। গ্যাসের অবৈধ সংযোগ থেকে অগ্নিকান্ডে নারী ও শিশুসহ গত দুই বছরে সাভার ও আশুলিয়ায় অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় শতাধিক মানুষ দগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন, আহতদের মধ্যে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে সিলিন্ডার গ্যাসের বোতলের দামও অতিরিক্ত বেড়েছে, ওষুধের দোকান, মুদি দোকানসহ বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল। অভিযোগ রয়েছে, বৈধ গ্রাহকদের চুলার গ্যাস টিপটিপ করে জ্বলে কিন্তু অবৈধ সংযোগের চুলায় সবসময় গ্যাস থাকে এর রহস্য কি জাতি জানতে চায়।বৈধ গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল ঠিকই নেয়া হয় কিন্তু গ্যাস না থাকার কারণ কি?। বিশেষ করে সরকারের উক্ত সিদ্ধান্তে দুই শ্রেণীর গ্রাহক সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন, এদের মধ্যে এক শ্রেণি হলো রাজধানী ঢাকাসহ সাভার আশুলিয়ায় ও বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন পর্যায়ে ও শহরের বাসা বাড়ি ফ্ল্যাটের মালিকেরা। আরেকটি হলো বিভিন্ন আবাসন কোম্পানিগুলো। তাদের মধ্যে অনেকেই গ্রাহকদের গ্যাসের পাইপলাইনের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। আবাসন কোম্পানির অনেকেই বলেন, এখন গ্যাসের সংযোগ না পেলে তাদের প্লট, জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে না। তারা অনেকেই দাবি করেন যে, গ্যাস সংযোগ নতুন করে আর কেউ পাচ্ছেন না, এতে গ্রাহকরা বেশি বিপাকে পড়েছেন।
জানা গেছে, ২০১৮ইং সালে এলএনজি আমদানি শুরুর পর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা গ্যাসের সংযোগ নতুন করে শুরু হওয়ার কথা নীতিনির্ধারণী মহলেও শুনা যাচ্ছিল। তখন ঢাকা ও সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলায় অবৈধ সংযোগের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দেয় দালাল চক্র সিন্ডিকেটগুলো। তারা গ্রাহকদের আশ্বাস দেয়, কিছুদিন পরে গ্যাসের নতুন বৈধ সংযোগ দেওয়া শুরু করলে এগুলোকে বৈধ করে দেবেন কিন্তু এখন এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পালায় এই গ্রাহকদের সংযোগও কাটা পড়েছে। গ্যাসের দালাল ও কন্ট্রাক্টাররা গ্রাহকদের টাকা আর ফেরত দিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। জানা গেছে, সরকারি ভাবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বেশ জোরেসোরেই মাঠে নামে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ।
বিশেষ করে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে কিছুদিন আগে জ্বালানি বিভাগ উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়ে তা বাস্তবায়নের আদেশ দিয়েছিলো। সূত্র জানায়, ডিমান্ড নোট ইস্যু হওয়া এবং টাকা জমা দেওয়া গ্রাহকদের আবেদনও বাতিল করা হবে। তাদের অর্থ ফেরত দেবে সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিগুলো। বিতরণ সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, নতুন সংযোগের জন্য ডিমান্ড নোট ইস্যু হওয়া এবং প্রয়োজনীয় ফি জমা দেওয়া গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখের মতো। গ্যাস ও খনিজ সম্পদ খাতের নেতৃত্ব প্রদানকারী সংস্থা পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, বৈধ অবৈধ নানা উপায়ে এই শ্রেণির গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৮লাখ হবে। দেশে সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের আলোচনা করেছেন বলে জানান, গৃহস্থালিতে আর গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না। যেসব গ্রাহক সংযোগের জন্য আবেদন করেছেন এবং টাকা জমা দিয়েছেন, তাদের নাম তথ্যভান্ডারে রয়েছে। আগামীতে এ বিষয়ে একটি সভা করে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের রোডম্যাপ তৈরি করা হতে পারে।সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে এমনটি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশে গ্যাস বিতরণে নিয়োজিত অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, পশ্চিমা ল গ্যাস কোম্পানি ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি। এই সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, আগামীতে সভা করে তারা সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের রূপরেখা ঠিক করবেন। উক্ত ব্যাপারে জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিঃ এর আশুলিয়া জোনাল বিপণন অফিসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু সাদাৎ মো. সায়েম বলেন, সাভার ও আশুলিয়ায় তিতাস গ্যাসের বৈধ গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫২ হাজারের বেশি হবে। শিল্প গ্রাহক সংখ্যা ১ হাজার ৫০০। গ্যাসের অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারী দালালদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মাত্র ৬টি মামলা হয়েছে, দুই বছর আগে আশুলিয়া থানায় ৪৮টি মামলা করা হয়, বর্তমানে অভিযান অব্যাহত আছে। জাতি জানতে চায় যে, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারী দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সমস্যা কোথায়? আর কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয় না তাদের খুঁটির জোড় কোথায় জাতি জানতে চায়।