হেলাল শেখঃ ঢাকার আশুলিয়ার ছয়তলা এলাকায় অবস্থিত চেতনা মাল্টিপারপাস কো—অপারেটিভ সোসাইটি প্রতারক চক্র কতৃর্ক মানুষের গ্রাহকের শত কোটি টাকা নিয়েছে। চেতনা’র গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় জিডি ও মামলা করে বিপাকে গ্রাহকরা ভুক্তভোগীরা। এ ঘটনায় র্যাব—৪ কতৃর্ক ১০ জন প্রতারককে গ্রেফতার করার পর আদালত থেকে জামিনে এসে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। র্যাব ও পুলিশ কতৃর্ক তদন্তে চেতনা’র প্রতারকদের বিপুল পরিমাণ সম্পদের সন্ধ্যান পাওয়া যায়। পুলিশ ও র্যাব জানায়, এ মামলায় কয়েকজন পলাতক রয়েছে। পূনরায় যাতে কারো সাথে এমন প্রতারণা না করতে পারে সেজন্য নতুন করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন জানিয়েছেন।
শনিবার (৩ মে ২০২৫ইং) জানা গেছে, উক্ত মামলার আসামীদের প্রতারণাকৃত অর্থের নামে বে—নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে বলে অনুসন্ধ্যানে “থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসছে”। প্রতারকদের ব্যাপারে গত ২৩/০৩/২০২২ইং হতে অনুসন্ধ্যান করে এ পর্যন্ত অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। আশুলিয়া থানার মামলা নং ৭৫। তারিখঃ ২৩/০৩/ ২০২২ইং, ধারা—৪২০/৪০৬/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড। ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়া ভুঁইয়া পাড়া হিয়ন গার্মেন্টস সংলগ্ন বর্তমান ঠিকানা মোঃ ইদ্রিস আলী সরকার ও খোরশেদা বেগমের ছেলে মোঃ ইকবাল হোসেন সরকার (৩৫), জামগড়া ছয়তলা রূপায়ন স্বপ্ন নিবাস চেতনা মাল্টিপারপাস অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড শেয়ার হোল্ডার হয়ে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, এ ঘটনায় ইকবাল গ্রেফতার হলেও তার বোনজামাই পলাতক কাজী পলাতক থাকে, পরে আদালত থেকে জামিনে আসে, অথচ সে কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে গ্রাহকের টাকায়। জানা যায়, ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়া (৬তলা) রূপায়ন স্বপ্ন নিবাস প্লট নং—০১, রোড নং—২ এ অবস্থিত চেতনা মাল্টিপারপাস কো—অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর হেড অফিস কতৃর্ক গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিয়ে ১৬ জন মালিক উধাও হওয়ার পর র্যাবের হাতে এই চক্রের ১০জনকে গ্রেফতার হওয়ার পর “বেড়িয়ে আসছে থলের বিড়াল”। এ ঘটনার পর কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারেননি যে, মোট কত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চেতনা’র প্রতাকরা? কেউ বলছে ৭০ কোটি, কেউ বলছেন, শত কোটি, আবার কেউ বলছেন ১০০ কোটির বেশি টাকা নিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। আসলে সঠিক তদন্ত করে মোট কত টাকা নিয়েছে আর কারা প্রকৃত দোষী তা প্রকাশ করা হলে অনেকেই হয়রানির হাত থেকে বাঁচবেন বলে অভিমত প্রকাশ করেন সচেতন মহল। এর আগে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় চেতনার হেড অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসুচী পালনকরাসহ আশুলিয়া থানায় একাধিক অভিযোগ ও জিডি করেন ভুক্তভোগীরা। উক্ত চেতনা প্রতিষ্ঠানটি সমবায় অধিদপ্তর ঢাকার আওতাধীন জেলা সমবায় কতৃর্ক নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং—০০১৯৩। তারিখ: ১৮/০২/২০০৮ইং।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চেতনা মাল্টিপারপাস কো—অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডসহ নামে বে—নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রজেক্ট, গাছের বাগান, ডেইরি ফার্ম চাউলের ব্যবসা ও জমি দেখিয়ে কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। অনেকেরই চলমান কোটি কোটি টাকা জালজালিয়াতি করে হাতিয়ে নিচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানায়। প্রতি ১ লাখে প্রতি এক মাসে ১৮শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা লাভ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রতারকদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা জানায়, তারা লাভের আশায় প্রতিষ্ঠানের কতৃর্পক্ষের কাছে টাকা জমা করলে প্রথমে তারা ঠিকঠাক মতো লাভ দিলেও তার কিছুদিন পর থেকে লাভাংশ দিচ্ছেই না এবং আসল টাকা দিতে নানারকম টালবাহানা শুরু করে ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্টরা। এমনকি ভুক্তভোগীদের জানানো হয় বেশি কথা বললে টাকা ফেরত দিবে না। এরপর বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে প্রভাবশালী ভয়ংকর প্রতারক চক্রের সাথে জড়িতরা, তারা আশুলিয়ার বাইপাইল ও জামগড়া এলাকায় বিভিন্ন স্থানে গোপন আস্তানা করে কিছু রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও সন্ত্রাস বাহিনীদের নিয়ে মিটিং করে। তাদের রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
এ বিষয়ে নাজমুল হক ইমু গণমাধ্যমকে বলেন, চেতনা মাল্টিপারপাস কো—অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটির ১৬ জন মালিক, তাদের মধ্যে ম্যানিজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ উল্লাহ ইকবাল লোভ দেখিয়ে তার মায়ের কাছ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা জমা নিয়েছে। চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম, মোহাম্মদ উল্লাহ, ইব্রাহীম খলিল, এস, এম মকবুল হোসেন, ইকবাল হোসেন সরকার, মাজাহারুল ইসলাম, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, কাজী আব্দুল আউয়াল, মোঃ ফজলুল হক, মোঃ মাহমুদুল হাসান, মোঃ মোমিন হোসেন, আব্দুল্লাহ আল ফারুক, মোঃ তৈমুর রহমান, সৈয়দ পারভেজ, মোঃ মারুফ আহমেদসহ মোট ১৬ জন মালিক। এছাড়াও এই চক্রের সাথে আরও অনেকেই জড়িত আছে। ইমু আরও বলেন, আমার আম্মুকে ভুলভাল বুঝিয়ে লাখে প্রতিমাসে ১৮০০/টাকা করে লাভ দেওয়ার কথা বলে তারা ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, টাকা ফেরত চাইলে তারা বিভিন্নভাবে টালবাহানা শুরু করে। গত ৫—৬ মাস ধরে আজ না কাল এইভাবে দিমু দিচ্ছি বলে সময় পার করছিলো। হঠাৎ করে উক্ত প্রতিষ্ঠানের কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না নিশিচত হয়ে অন্যসকল গ্রাহকরা চেতনার অফিসের সামনে আসেন এবং মানববন্ধন করেন। এরপর ৬জন মালিকসহ ১০ জনকে র্যাব গ্রেফতার করে এবং আদালতের মাধ্যমে ৬জনকে ৩দিনের রিমান্ডে আনা হয়। বর্তমানে ১০জন গ্রেফতারকৃত আসামী জামিনে আছেন। পল্লী চিকিৎসক মোশারফ হোসেন বলেন, আমার বোনের টাকাসহ আমার পরিবারের ১৩ লাখ টাকা মোঃ ইদ্রিস আলী সরকার হুজুরের মাধ্যমে তার ছেলে মোঃ ইকবাল হোসেন সরকারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান চেতনা মাল্টিপারপাস কো—অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে জমা রেখেছি, আমাদের পরিবারের সারাজীবনের সঞ্চয় এই টাকাগুলো কিন্তু পাওনা টাকা ফেরত চাইলে ইদ্রিস আলী হুজুর কাউকে না বলতে বলেন, বিভিন্নভাবে টালবাহানা শুরু করেন। আমি ওই প্রতিষ্ঠানের কাউকে আগে চিনি নাই, এখনও চিনতে চাইনা। আমার দাবী— হুজুরের মাধ্যমে বিশ্বাস করে টাকাগুলো দিয়েছি,তাই আমার টাকা হুজুর ও তার ছেলে ইকবাল হোসেন সরকার দিতে হবে। এরকম হাফিজ নামের একজন ৯ লাখ টাকা চেতনায় রেখে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অনেকেই মামলা করে মালিক পক্ষের হুমকিতে দিশেহারা এবং অনেক সদস্য মামলা না করেও বিপদে আছেন বলে জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে, ইদ্রিস আলী সরকার হুজুর বলেন, আমি এই টাকা লেনদেনের সময় উপস্থিত ছিলাম, সাক্ষীও আছি। আমার ছেলে ইকবাল হোসেন সরকার চেতনা প্রতিষ্ঠানের ১৬জন মালিকের একজন, আমার মেয়ের জামাই আউয়াল কাজী এই প্রতিষ্ঠানের মালিকদের একজন। সুদের টাকা লেনদেন ও সেই টাকার চুক্তিনামায় সাক্ষী হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার ভুল হয়েছে, তিনি অনেক বিষয়ে কথা কাটিয়ে এড়িয়ে গেছেন। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, এই চক্রের সাথে আরও ৪—৫টি প্রভাবশালী প্রতারক চক্র রয়েছে। তাদের বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদে এখনো লোকজন জিম্মি হয়ে আছেন, টাকা দিয়েও মুখ খুলতে পারছেন না তারা।
র্যাব—৪ এর অধিনায়ক গণমাধ্যমকে জানান, উক্ত প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম প্রতারণা মূলক। এই প্রতিষ্ঠানটি সমবায় অধিদপ্তর কতৃর্ক রেজিষ্ট্রিকৃত রয়েছে এবং শুধুমাত্র সমিতির সদস্যদের কাজ থেকে সমিতি’র পরিচালনার জন্য অনুমোদন রয়েছে। তাদের প্রতারণার কৌশল হিসেবে সৃষ্ট নাম্বারস্থ চেতনা কল্যাণ পরিবার ট্রাস্ট, চেতনা গার্ডেনিয়া এই ধরণের প্রকল্পের কোন অনুমোদন নাই, কিন্তু উক্ত চেতনা মাল্টিপারপাস কো—অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর আর্থিক লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদিত নয় এবং সঞ্চয় গ্রহন বা মাক্রোক্রেডিট রেগুলেটরীর অথোরিটি কতৃর্ক অনুমোদিত নয়। তিনি আরও বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব—৪ উক্ত অভিযানটি পরিচালনা করে এবং গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অদূর ভবিষ্যতে এইরুপ অসাধু সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে র্যাব—৪ এর জোড়ালো সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান, র্যাব—৪ এর আগের অধিনায়ক মোজাম্মেল হকের চাকরি নেই, উক্ত ব্যাপারে মামলা করেও কোনো প্রকার পাওনা টাকা পাননি গ্রাহকরা।
আশুলিয়া থানার পুলিশ গণমাধ্যমকে বলেন, চেতনা’র প্রতাক চক্রের অভিযুক্ত গ্রেফতারকৃতরা বেশিরভাগই বন্ধু, তারা মাদ্রাসা’র ছাত্র ছিলেন। এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় জিডি ও মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামী মোঃ ইকবাল হোসেন সরকারসহ ১০জনকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ইকবাল হোসেন এর বোন জামাই কাজী মোঃ আব্দুল আউয়াল এবং ইকবাল হোসেনের বাবা মোঃ ইদ্রিস আলী উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত আছে বলে সত্যতা পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানায়। বর্তমানে আশুলিয়ায় এই প্রতারকদের শত কোটি টাকার সম্পদ থাকলেও চেতনা এখন মানুষকে অচেন করে অফিসের জায়গাসহ সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছে প্রতারকরা, ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পরের পর্বে ছবিসহ প্রকাশ করা হবে। অনুসন্ধানী—পর্ব—১।#