প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ৮, ২০২৫, ৮:২৭ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ২৪, ২০২৫, ২:০৮ পি.এম
ছাতকে এসপিপিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণে দীর্ঘদিনের জট খুলছে

মীর আমান মিয়া লুমান, ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সিলেট পাল্প এন্ড পেপার মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ নিয়ে প্রায় সাত মাস ধরে চলা জটিলতা অবশেষে সমাধানের পথে। বিভিন্ন প্রশাসনিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে এর নিরসন হওয়ায় বিদ্যালয়ের প্রায় ৭৫০ জন শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টি দীর্ঘকাল ধরে নতুন সরকারি ভবন পায়নি। বর্তমানে একমাত্র দোতলা ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ায় শ্রেণীকক্ষের পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে এবং পর্যাপ্ত কক্ষ না থাকায় নবম ও দশম শ্রেণীর গ্রুপ ক্লাস পরিচালনাও কঠিন হয়ে পড়েছে। একটি নতুন ভবন বরাদ্দ হলেও দীর্ঘসূত্রতা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছিল। এলাকাবাসী এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, সকল তথ্য ও অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখে একটি দ্রুত ও কার্যকর সমাধান বের করা হবে, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করবে এবং তাদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান ঘটাবে। স্থানীয়দের মধ্যে আশা দেখা দিয়েছে যে দ্রুতই এই জটিলতার সমাধান হবে এবং শিক্ষার্থীরা একটি আধুনিক ও নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে।
জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরীফ উদ্দিন নতুন ভবনের স্থানে ২০টি ছোট-বড় গাছ রয়েছে উল্লেখ করে ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। পরবর্তীতে এই তথ্যকে "সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত" বলে অভিহিত করা হয়। স্থানীয়দের দাবি, যে জায়গায় নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে সেখানে একটি পরিত্যক্ত ভবন রয়েছে যেখানে তিনি পরিবার সহ ভাড়া ছাড়া থাকেন। নতুন ভবন নির্মাণ করতে হলে তাকে এই ভবনটি ছাড়তে হবে এবং বাইরে উচ্চমূল্যে বাসা ভাড়া নিতে হবে, এজন্যই তিনি কৌশলে ২০টি গাছের কথা উল্লেখ করে জটিলতা সৃষ্টি করেছেন শিক্ষক শরিফ।
আরও জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরীফ উদ্দিন নতুন ভবনের জায়গায় ২০টি ছোট-বড় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ছাতক বিট-ফরেস্ট কর্মকর্তা (ফরেস্টার) মো. আইয়ুব খান সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানান, সেখানে প্রকৃতপক্ষে মাত্র ১০টি ছোট-বড় গাছ রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ৮ হাজার ৯৬২ টাকা। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গাছগুলো জ্বালানি ছাড়া তেমন মূল্যবান নয়।
গত ১৯ জুন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) গাছ কাটার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে নতুন করে আবেদন করেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির কাজ হলো, গাছ কর্তনের যৌক্তিকতা যাচাই করে সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক সচিত্র প্রতিবেদন দাখিল করা এবং ছাতক বিট অফিসারকে আবার গাছের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ পূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২২ জুন বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। এই চিঠিতে পূর্ববর্তী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের তথ্যের অসঙ্গতি তুলে ধরে বলা হয় যে, নতুন ভবনের জায়গায় মূলত ছোট ছোট ১০টি গাছই রয়েছে এবং দ্রুত কাজ শুরুর জন্য গাছ কর্তনের অনুমতি প্রয়োজন। একই দিনে, সিলেট পাল্প এন্ড পেপার মিলস উচ্চ বিদ্যালয়-এর প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরুর দাবি জানান। তারা তাদের চিঠিতে উল্লেখ করেন যে, "মাত্র গুটি কয়েক ছোট গাছের জন্য" নতুন ভবন নির্মাণে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
এব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছালেক মিয়া (ভারপ্রাপ্ত) জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো নতুন একাডেমিক ভবন পায়নি। বৃষ্টির সময় ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে এবং শ্রেণীকক্ষ সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘদিন পর একটি নতুন ভবনের বরাদ্দ মেলায় তিনি সকল জটিলতা নিরসন করে দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
এব্যাপারে ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম নতুন ভবন নির্মাণে সৃষ্ট একটি জটিলতা নিরসনের আশ্বাস দিয়ে বলেন, সিলেট পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন একটি ভবন নির্মাণের নির্ধারিত স্থানে গাছ কাটার বিষয়টি নিয়ে পুনরায় যাচাই-বাছাই করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Copyright © 2025 সকালের বাংলা. All rights reserved.