নাজমুল হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক :
নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে লক্ষ্মীপুরের উপজেলা। এতে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বহু গ্রাম। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বন্যার পানি। এতে পানিবন্দি রয়েছেন লাখো মানুষ। এদের মধ্যে ডাকাত আতঙ্কে অনেকেই ঘর ছাড়তে নারাজ। সম্পদ বুকে নিয়ে শত ঝুঁকির মধ্যেও রয়েছেন নিজ ঘরে। উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে করছেন বাগবিতণ্ডা।
গতকাল মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার, দিঘলী, চরশাহী, বাঙ্গাখাঁ ও মান্দারী ইউনিয়নের দুর্গম এলাকায় পানিবন্দি হয়ে যাতায়াত করা যাচ্ছে না।
অন্য দিকে অতিরিক্ত পানির কারণে গ্রামীণ অভ্যন্তরীণ পাকা রাস্তা সড়কগুলোতেও চলাচল করা যাচ্ছে না। প্রধান সড়কসহ উপ-সড়কগুলোও খানাখন্দভরা। কিছু কিছু সড়ক রয়েছে পানিবন্দি তাই সেখানকার পানিবন্দি মানুষগুলোর মাঝে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। এসব এলাকায় ত্রাণ বিতরণে নৌকার কোনো বিকল্প নেই।
পানিতে ঘর ডুবে গেলে তখন কী করবেন—জানতে চাইলে ফয়সাল বলেন, ‘তখনতো জান বাঁচানোর জন্য বের হতেই হবে। আরও একটু দেখি না, কী হয়।’
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, লক্ষ্মীপুর জেলায় ৭ লাখ ২০ হাজার মানুষ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে আছে। ২৭ হাজার ৭’শ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। কিছু মানুষ উজানে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছে। তবে বন্যায় পানিবন্দি মানুষ চুরি হওয়ার ভয়ে বাড়িঘর ছাড়ছে না।
এদিকে সরকারিভাবে যে পরিমাণ চাল ও অর্থ বরাদ্দ রয়েছে তাও অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান।
মঙ্গলবার সকালে নিজ কার্যালয়ে এক বিশেষ সভায় তিনি বলেন, জেলায় ৭ লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। বন্যাদুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ৭’শ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য ৫ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫’শ ৯ মেট্রিকটন চাল ও ১৬ লাখ টাকা ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় এই বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আরও ৩০ লাখ টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুরে অনবরত ঢুকছে। তবে পানি কমতে শুরু করেছে। দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মেঘনা নদীতে ভাটা ছিল। দীর্ঘ এ সময় প্রচুর পানি নেমেছে রহমতখালী ও ওয়াপদা খাল হয়ে। এছাড়া রায়পুর ও রামগঞ্জেও পানি কমছে। রামগতি ও কমলনগরে বেড়িবাঁধের বাইরে ভুলুয়া নদী এলাকায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে।