দৈনিক সকালের বাংলা ডেস্কঃ নাসিমা আক্তার (ছদ্মনাম), একজন ২৮ বছর বয়সী নারী যিনি সম্প্রতি তার পরিবারের সাথে একটি রেস্তোরাঁয় খাবারের সময় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।
নাসিমা বলেন, ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা আমাদের টেবিলের কাছাকাছি ছিল এবং আমরা যখন খাবার খাচ্ছিলাম তখন ঐ কক্ষের দরজা বার বার খোলার ফলে সিগারেটের ধোঁয়া বাইরে চলে আসছিল। সিগারেটের বাজে গন্ধে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল বিশেষ করে আমাদের দুই শিশু সন্তান খুবই বিরক্তি প্রকাশ করছিল।
তিনি বলেন, মোট কথা খাবারের পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আমরা রেস্তোরাঁসহ সকল পাবলিক প্লেসে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ চাই। তবে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা’র (ডিএসএ) বিধান রেখে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব নয়। ডিএসএ একটি মৃত্যুফাঁদ। তামাকমুক্ত দেশ গঠনে প্রধান অন্তরায় ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা। এটি বাতিল কারার দাবি জানান নাসিমা।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এবং কফি হাউজে আকর্ষনীয় সাজে ‘স্মোকিং জোন’ তৈরি করা হয়েছে। বিশেষকরে অভিজাত এলাকার অধিকাংশ রেস্টুরেন্টেই বিভিন্ন আকারের দৃষ্টিনন্দন ‘স্মোকিং জোন’ বা ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা (ডিএসএ) চোখে পড়ে। শুধু তাই নয়, খাবারের মেন্যুতেও নির্দিষ্ট কিছু সিগারেটের মূল্য তালিকা দেখা গেছে।
গ্লোব্যাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্ক জনগণের প্রায় ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ রেস্তোরাঁয় এবং ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ চা-কফির স্টলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। প্রায় ২৪ শতাংশ (২ কোটি ৫০ লাখ) প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। এছাড়াও প্রায় ৩৯ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ (৪ কোটি ৮ লাখ) বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। এর ফলে প্রতিবছর প্রায় ৬১ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানজনিত বিভিন্ন রোগে ভোগে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় সকল পাবলিক প্লেস শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার সুযোগ না থাকায় পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা করা সম্ভব হচ্ছেনা। ডিএসএ বিলুপ্ত করার মাধ্যমেই কেবল শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, তামাক বছরে ১ লক্ষ ৬১ হাজার প্রাণ কেড়ে নেয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ‘ধূমপানের জন নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বাতিলসহ পূর্ণাঙ্গ ধূমপানমুক্ত আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে দেশকে তামাকমুক্ত করার কোন বিকল্প নেই।
তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খন্দকার বলেন, যারা অধূমপায়ী তারা পরোক্ষ ধূমপানের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ডিএসএ বাতিলসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের আরো কিছু বিষয় সংশোধনী আইনে যুক্ত করা হয়েছে। আশাকরি দ্রুতই এটি কেবিনেটে অনুমোদনের জন্য উঠবে।
জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) যৌথভাবে ঢাকার ১১৮টি আবাসিক হোটেল ও ৩৫৫টি রেস্টুরেন্ট, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ৫৩টি ট্রেনের ওপর একটি গবেষণা চালায়। এ থেকে দেখাগেছে, মোট ৫২৬টি নমুনার মধ্যে মাত্র ৪১টিতে (৮ শতাংশ) ডিএসএ পাওয়া গেছে, যার একটিও পরিপূর্ণভাবে আইন মেনে করা হয়নি। গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে, ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা (ডিএসএ) অধূমপায়ীদের পরোক্ষ ধূমপানের ছোবল থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে না এবং এই বিধান চালু রেখে ধূমপানমুক্ত আইন বা নীতির সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে ডিএসএ বাতিল করা প্রয়োজন।