বাংলাদেশের কৃষি খাত—দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে ওঠা এই খাত আজও আমাদের জাতির ভিত্তি। কৃষকরা আমাদের খাবারের উৎস, আমাদের গর্ব, আমাদের জীবনযাত্রার অঙ্গ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কৃষকরা অবহেলিত, অনুন্নত ও আর্থিকভাবে অবহেলিত হয়ে পড়েছেন, ফলে তাদের জীবনযাত্রার মানে ভারী সংকট দেখা দিয়েছে। তারেক রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আজ যে সুদূরপ্রসারী, শক্তিশালী ও উন্নত কৃষি খাতের স্বপ্ন দেখছেন, তা আমাদের একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। তিনি বিশ্বাস করেন, কৃষক কেবল খাদ্য উৎপাদক নন, বরং দেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ। তারেক রহমানের কৃষি ভাবনায় কৃষকদের সম্মান, মর্যাদা এবং আর্থিক নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি সুদূর বিদেশে অবস্থান করেও দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং কর্তব্যবোধে আবদ্ধ, কৃষক দলের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের কৃষিখাত নিয়ে তাঁর গভীর চিন্তা প্রকাশ করেছেন। তিনি যে শুধু রাজনৈতিক নেতা নন, বরং একজন মানবিক নেতা, তা প্রতিটি তার কথা ও কর্মেই স্পষ্ট। তারেক রহমান কৃষক দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে যে নির্দেশনা দিয়েছেন—কৃষকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তাঁদের বিএনপির সদস্য হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা—তা কেবল দলের রাজনীতি নয়, বরং দেশের প্রতি তাঁর এক অমোঘ দায়িত্ববোধের প্রতিফলন। তিনি বুঝে ফেলেছেন, কৃষকরা এ দেশের মূল শক্তি, দেশের শিকড়, আর তাই তাঁদের উন্নতি, সম্মান এবং সুখ-সমৃদ্ধির জন্য কাজ করাটাই তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য।
তারেক রহমানের ৩১ দফা ঘোষণার মধ্যে কৃষি নিয়ে যে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা কৃষকদের জন্য একটি বড় আশার আলো হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে”—এটি কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে কৃষকরা বাজারে তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক দাম পান না, এবং মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে ফসল বিক্রি করতে গিয়ে তাদের আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হয়। তারেক রহমানের এই প্রতিশ্রুতি কৃষকদের আর্থিক সংকট দূর করবে এবং তাদের জীবনযাত্রা সহজ করবে।
তাঁর ঘোষণায় আরো বলা হয়েছে, “পর্যায়ক্রমে সকল ইউনিয়নে কৃষিপণ্যের জন্য সরকারি ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে”, যা কৃষকদের জন্য একটি সুরক্ষিত বিক্রয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। কৃষকরা সরাসরি সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারবেন এবং মধ্যস্বত্বভোগীর প্রভাব কমবে, ফলে কৃষকদের আয় বাড়বে এবং তারা বাজারে সঠিক দাম পাবেন।
এছাড়া “শস্য বীমা, পশু বীমা, মৎস্য বীমা এবং পোল্ট্রি বীমা চালু করা হবে”—এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কৃষকদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। বীমার মাধ্যমে কৃষকরা নিজেদের ফসল বা পশু, পোল্ট্রি বা মৎস্য শিল্পে আঘাত পেলে ক্ষতিপূরণ পাবেন, যা তাদের পরিবারগুলোর জীবনধারণে বড় সহায়তা হবে।
তারেক রহমান সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেছেন, “খাল খনন কর্মসূচি পুনরায় চালু করা হবে।” এটি কৃষকদের সেচের পানির সংকট দূর করার জন্য একটি বাস্তবিক পদক্ষেপ। কৃষিক্ষেত্রে পানির সংকট একটি বড় সমস্যা, যা উৎপাদন কমিয়ে দেয়। শহীদ জিয়াউর রহমানের সময়ে যে খাল খনন কর্মসূচি সফলভাবে চালু হয়েছিল, তারেক রহমান সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশের কৃষকদের জন্য পর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চান। খাল খননের মাধ্যমে কৃষকদের কৃষি জমিতে পানি সরবরাহ করা যাবে, যার ফলে উৎপাদন বাড়বে এবং খরচ কমবে।
তারেক রহমানের কৃষি ভাবনায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কৃষি বিমা। তিনি বিশ্বাস করেন, কৃষকরা তাদের ফসল হারালে যেন তাদের ক্ষতি পোষাতে সাহায্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষকরা তাদের ফসল হারান, যা তাদের জীবনযাত্রার জন্য বিপর্যয়কর। কৃষি বিমা চালু হলে কৃষকরা এই ধরনের দুর্যোগে সহায়তা পাবেন, এবং তাদের আর্থিক অবস্থাও স্থিতিশীল থাকবে।
তারেক রহমান সমবায় ভিত্তিক চাষাবাদ ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে চান। এর মাধ্যমে দেশের ছোট ও মাঝারি কৃষকরা একত্রিত হয়ে সমবায় ভিত্তিক চাষাবাদ করতে পারবেন, যা তাদের উৎপাদন বাড়াবে এবং তাদের আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করবে। এই ব্যবস্থা কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের সাশ্রয়ী মূল্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, সার ও বীজ পাওয়ার সুযোগ করে দেবে।
তারেক রহমান রপ্তানিমুখী কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প খাতকে প্রণোদনা দেওয়ার কার্যক্রম চালু করতে চান, যা বাংলাদেশের কৃষির ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ একটি কৃষি নির্ভর দেশ, কিন্তু কৃষিপণ্যের রপ্তানি এখনো সীমিত। যদি কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকে প্রণোদনা দেওয়া হয়, তাহলে কৃষি পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা যাবে এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে। একইসাথে কৃষকদের উৎপাদন থেকে আরো বেশি মুনাফা অর্জন হবে।
তারেক রহমান বাংলাদেশের কৃষি খাতে যথাযথ বিনিয়োগ এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছেন। বাংলাদেশের কৃষি খাতের অনেক সমস্যা আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করলে কৃষি উৎপাদন বাড়বে এবং কৃষকদের খরচ কমবে। তারেক রহমান কৃষি খাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করতে চান।
তারেক রহমান কৃষকদের জন্য সারের ভর্তুকি এবং উন্নত বীজ সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সারের দাম বাড়ানোর কারণে কৃষকদের পক্ষে উৎপাদন খরচ মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তারেক রহমান সারের দাম কমানোর এবং কৃষকদের উন্নত মানের বীজ সরবরাহের মাধ্যমে তাদের উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করবেন।
তারেক রহমান একদিকে কৃষকদের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, অন্যদিকে তিনি কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা নিশ্চিত করতে চান। তিনি জানেন, কৃষকদের কাছে জমি থাকলেও তারা কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করেন। তারেক রহমান কৃষকদের জন্য সাশ্রয়ী ঋণ ব্যবস্থা, কৃষি বিমা, সমবায় ভিত্তিক চাষাবাদ এবং পর্যাপ্ত সেচ সুবিধার মাধ্যমে তাদের আর্থিক পরিস্থিতি উন্নত করতে চান।
বাংলাদেশের কৃষি খাত নিয়ে তারেক রহমানের ভাবনা এক যুগান্তকারী পরিকল্পনা। তিনি বিশ্বাস করেন যে, যদি কৃষকদের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তাহলে দেশের কৃষি খাত শক্তিশালী হবে এবং কৃষকরা তাদের শ্রমের ন্যায্যমূল্য পাবেন। তারেক রহমানের এই ভাবনায় কৃষি খাতের উন্নয়ন শুধু কৃষকদের জন্য নয়, বরং পুরো দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই চিন্তা-ভাবনা আমাদের দেশে একটি উন্নত কৃষি খাতের পথ উন্মুক্ত করতে পারে, যেখানে কৃষকরা শুধু খাদ্য উৎপাদনকারী নন, বরং তাদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্যায়ন পেয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন। তারেক রহমানের কৃষির জন্য এই পরিকল্পনাগুলি দেশের অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করতে সহায়ক হবে। যখন বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসবে, তারেক রহমানের কৃষি খাতের উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের কৃষকরা তাদের সঠিক মূল্য পাবে, এবং কৃষি খাত বিশ্ব দরবারে একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।