হেলাল শেখঃ চলতি বছরে তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে, আয় থেকে খরচ বাড়ছে আর বিভিন্ন কারণে বাড়ছে দরিদ্রতার সংখ্যা। গত এপ্রিল মাস থেকে প্রায় ৭৯ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছেন। তেলসহ প্রায় প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, আয় থেকে সকল খরচ বাড়ছে আর নানারকম সমস্যায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বলে অনেকেই জানান।
বুুধবার সূত্র জানায়, চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে, এ মাসে মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বাড়ছে, কারণ হলো ৪০০টাকা কেজি জিরা এখন ১২০০টাকা কেজি। করোনার কারণে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ ছিলো, এর কারণে ৭ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী কিশোরী তরুণীদের বিয়ে দেওয়ায় বাল্যবিবাহ বেড়েছে। তেলসহ প্রায় প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে, ভাড়া বৃদ্ধির কারণে সকল পণ্য পরিবহণ খরচ বাড়ছে বলে সংশ্লিরা জানান।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা ছিলো ২কোটি ৪৫ লাখ। অর্থাৎ গত ৮ মাসে প্রায় ৭৯ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে। দেশে করোনাকালের সময় ৩কোটি ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) যৌথ জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্রমতে ‘জীবিকা, খাপ খাইয়ে নেওয়া ও উত্তরণে কোভিড—১৯ এর প্রভাব’ শীর্ষক জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
বিশেষ করে বিআইজিডি ও পিপিআরসি করোনাকালে মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর প্রভাব নিয়ে চার দফায় জরিপ করে। প্রথম দফায় জরিপ হয় গত বছরের এপ্রিল মাসে, এরপর সে বছরের জুন মাসে দ্বিতীয় দফায় ও তৃতীয় দফায় চলতি বছরের জুন মাসে এবং গত বছরের সর্বশেষ জরিপ হয় ২১আগষ্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই জরিপে অংশ নেয় ৪৮৭২টি পরিবার। এর মধ্যে শহরের ৫৪ শতাংশ এবং পার্বত্য চট্রগ্রাম এলাকায় এক শতাংশ পরিবার ছিলেন। গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্রমতে, জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাকালে দারিদ্রের কারণে দেশের ২৮শতাংশ মানুষ শহর থেকে গ্রামে চলে যায়। বিশেষ করে শিল্পা লের পোশাক শ্রমিকসহ সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, এদের মধ্যে ১৮ শতাংশ মানুষ শহরে আবার ফিরে এসেছে। অর্থাৎ ১০ শতাংশ মানুষ এখনো শহরে ফিরতে পারেনি।
দেশে ২০২০ইং সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের খবর জানায় রোতত্ত: রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। প্রথম মৃত্যুর খবর জানানো হয় ১৮ মার্চ। এর আগের দিন ১৭ মার্চ থেকে দেশের স্কুল—কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়, এরপর থেকে বাল্যবিবাহ বেড়েছে অনেক। ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে শুরু হয় সাধারণ ছুটি। অবশ্য এর আগেই বিপুলসংখ্যক মানুষ রাজধানী ও শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যায়। সাধারণ ছুটির আদলে লকডাউন চলে মে মাস পর্যন্ত। মার্চ মাসের শেষের দিকে করোনা সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করলে লকডাউন শুরু হয় এপ্রিল মাস থেকে। এটি চলে আগস্ট মাস পর্যন্ত।
পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, ‘গত পূর্বে করোনার কারণে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন দারিদ্র পরিস্থিতিকে আরও লাজুক করে তুলেছে।’ নতুন দরিদ্র মানুষদের মধ্যে এই শহর থেকে গ্রামে চলে যাওয়া মানুষই বেশি। এসব মানুষের জন্য প্রচলিত ধারার দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি নেওয়া যাবে না। নতুন দরিদ্র এসব মানুষ হয়তো কারও কারও কাছে সহায়তাও চাইতে পারবেন না। তারা নতুন কাজের সন্ধান চাইবে। নীতি নির্ধারণী স্তরে এসব মানুষের বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে।
জরিপ প্রতিবেদনটির বড় অংশ তুলে ধরেন বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন। তিনি বলেন, আয়—বেকারত্ব—খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি নানা খাতে গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, শহর অ লের মানুষের আয় কোভিড—পূর্ব সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে। যেমন: কাগজ ও প্লেটের দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত ছাপা হচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মানুষ প্রচারণা চালানোর কারণে গণমাধ্যম কর্মী অর্থাৎ সাংবাদিকদের আয় কমেছে কিন্তু খরচ বাড়ছে। দেশের অনলাইন সংবাদ প্রচার প্রচারণা চলছে।
বিশেষ করে গ্রাম লে এ আয় কমেছে ১২ শতাংশ। কোভিডের আগে শহরা লের দরিদ্র মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিলো ৭ শতাংশ, এটি সর্বশেষ জরিপে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫শতাংশে। গ্রামে বেকারত্ব কোভিডকালে বেড়েছে মাত্র ৪ শতাংশ। তেল গ্যাসের দাম বৃদ্ধিসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। শুধু খাদ্য নয়, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসার ব্যয় শিক্ষা ও যোগাযোগ খাতে দরিদ্র মানুষের ব্যয়ও বেড়েছে। বাড়তি এসব ব্যয় মেটাতে শহরের দরিদ্র এবং গ্রামের মানুষের ধার করতে হয়, অনেক সময় ধারের অর্থ পাওয়া যায় না বলে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুদের টাকা নেওয়া হলে আরও বেশি সমস্যার সৃষ্টি হয়। দোকানিদের কাছ থেকে বাকিতে খরচ করা, গ্রামে এই হার ৬২ শতাংশ, শহরে এখন ৬০ শতাংশ তবে শিল্পা লে ৯০% বাকি, দৈনন্দিন চলার জন্যই সবচেয়ে বেশি ধার করতে হয় বলে অনেকেই জানান।
সাবেক তত্ত¦াবধয়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর গণমাধ্যমকে বলেন, সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ে শহরের মানুষ। দারিদ্রবিমোচনের প্রচলিত প্রচেষ্ঠায় বা সামাজিক সুরক্ষার চলমান ধারায় এ দারিদ্র্য থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এ নিয়ে নতুন চিন্তা করা দরকার। বর্তমানে যে, তেলের দাম বাড়ছে, বাস ও গণপরিবহনের ভাড়া ইচ্ছা মতো নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। দরিদ্র দেশে কথিত ডিজিটাল সিন্ডিকেটে সকল জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো হচ্ছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে সরকারি ভাবে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেন সচেতন মহল।