মারুফ সরকার, প্রতিবেদক : দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক, পরিবেশবিদ ও বুদ্ধিজীবী মাহফুজ উল্লাহর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ রবিবার (২৭ এপ্রিল) মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দোয়া-মোনাজাত ও শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি বলেন, "মাহফুজ উল্লাহ ভাই ছিলেন এক অনন্য গুণী সাংবাদিক। তার পড়াশোনা, চেহারা, কথা বলার ভঙ্গি এবং পারিবারিক পরিচয় — সবকিছু মিলিয়ে তিনি ছিলেন এক বিরল প্রতিভা। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে দেখেছি। তিনি বেগম খালেদা জিয়া ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবনী বিষয়ক মূল্যবান বই রচনা করে গেছেন, যা আজও জনপ্রিয়।"
হাবিব আরও বলেন, "আমি ভেবেছিলাম আজ এখানে অনেক মানুষ আসবে ফুল দিতে। কিন্তু কয়েকজন ছাড়া কাউকে দেখছি না। যদি গুণীজনদের সম্মান না করি, তাহলে এ জাতি কীভাবে গুণীদের মর্যাদা রক্ষা করবে?"
অনুষ্ঠানের আয়োজক মাহফুজ উল্লাহ স্মৃতি পরিষদের সভাপতি এবং 'বাংলা পোস্ট'-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ অলিদ তালুকদার বলেন, "মাহফুজ উল্লাহ ছিলেন নির্ভীক, সৎ ও সাহসী সাংবাদিক। মতপার্থক্য থাকলেও তিনি তা সবসময় শালীন ভাষায় উপস্থাপন করতেন। আজ এমন সাংবাদিক সমাজে বিরল হয়ে পড়েছে।"
মাহফুজ উল্লাহর সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরে বলা হয়, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যা ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃস্থানীয় কর্মী হিসেবে ১১ দফা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
সাংবাদিকতার সঙ্গে ছাত্রাবস্থায় যুক্ত হয়ে তিনি সাপ্তাহিক বিচিত্রার জন্মলগ্ন থেকেই কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি চীনে বিশেষজ্ঞ, কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন।
তিনি ছিলেন বাংলাদেশের পরিবেশ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। জীবদ্দশায় বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ৫০টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেন, যা বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে।
মাহফুজ উল্লাহ ব্যক্তিগত জীবনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মুজাফফর আহমদের দৌহিত্র। তার অগ্রজ মাহবুব উল্লাহও ছিলেন ষাটের দশকের গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রনেতা। মাহফুজ উল্লাহ তিন সন্তানের জনক ছিলেন।
মাহফুজ উল্লাহ স্মৃতি পরিষদের যথাযথ ধারাবাহিক তিনদিনের কর্মসূচি পালনের মধ্যে আজ প্রথম দিনে স্বরণীয় শ্রদ্ধা নিবেদন ও কুরআন খতম কবর জিয়ারত অনুষ্ঠানে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বরণ্য সাংবাদিকের চয়েসফুল বাণীতে রেখে যাওয়া স্মৃতির অম্লান পিঞ্জর বাংলা পোস্টের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদারের সভাপতিত্বে- ও সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আরজে সুহিল ইরফান কৌশিক এর সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নব্বই গণ-অভ্যুত্থানের সফল সাবেক ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান হাবিব।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মাসুম আহমেদ, তৌহিদুল ইসলাম, মারুফ হোসাইন, সংবাদ কর্মী স্বদেশ বার্তা এর রাজীব আহমেদ, প্লাবন ও এনামূল হক বিন হাদি প্রমুখ। দোয়া মোনাজাত করেন বুদ্ধিজীবি কবরস্থান জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা ইব্রাহিম খলিল।
মোহাম্মদ অলিদ তালুকদার আরোও বলেন -আমার কাছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর- থেকে সবচেয়ে বেশি মনে হয়েছে- স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের গণ-অভ্যুত্থানের পর- দেশের ১৬ কোটি মানুষ তাদের অকুতোভয় দুঃসাহসী এক সন্তানকে হারিয়ে যেনো অসহায় হয়ে গেছে।
লক্ষ বক্ষ, কোটি কণ্ঠ মিলেও আজ একজন নীতি আদর্শের সংগ্রামী বীর মাহফুজ উল্লাহ'র মতো হুংকার ছাড়তে পারছে না। বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিকতার জনক দেশবরেণ্য বহু মূল্যবান গ্রন্থের লেখক ও কলামিস্ট মাহফুজ উল্লাহ কী ছিলেন তা সময়ই বলে দেবে। আমি কেবল এটুকুই বলবো যে, এমন যুগসচেতন সাহসী বীর অকুতোভয় সংগ্রামী মাহফুজ উল্লাহ প্রতিদিন জন্মায় না। হাজার বছর অপেক্ষা করে পুষ্পকানন যেমন লাভ করে একটি চক্ষুষ্মান ফুল, তেমনই-প্রতিভাবান" মাহফুজ উল্লাহ'র মতো সন্তান লাভ করতেও দেশের মাটিকে অপেক্ষা করতে হয় বহু যুগ।
পৃথিবীতে কেউই থাকে না। একদিন আমিসহ আমরা ও থাকবো না। সত্য চিরন্তন। চিরন্তন মানুষের সাহস, দৃঢ়তা, নীতি ও আদর্শ। আগামি দিনে সত্যের সংগ্রামে, নীতির যুদ্ধে, আদর্শের লড়াইয়ে প্রতিটি প্রজন্ম অতীত দৃষ্টান্ত থেকে হাত বাড়ালেই যেনো আলো পেতে পারে, আমাদের এই
মহানায়কদের জীবন-কর্ম-অবদান ও লিগ্যাসি গ্রন্থিত করে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।