হেলাল শেখঃ ঢাকার সাভারে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শহীদ পরিবারের দায়ের করা হত্যা মামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা মোমিনুল ইসলাম রাজু ওরফে জোড়া ধর্ষক রাজুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি২০২৫ইং) ভোররাতে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সাহায্যে সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত-মোমিনুল ইসলাম রাজু (৩২) মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার ধানকরা ইউনিয়নের কামতা গ্রামের আ.লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। রাজুসহ তার পরিবার সাভারের ব্যাংক কলোনী এলাকায় বি-২৮/১ এর আজহার উদ্দিন ভিলার ৩ তলা ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করে আসছেন।
জানা গেছে, জোড়া ধর্ষক রাজু আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক পলাতক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের অস্ত্রধারী ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ধামসোনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের ডামি নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন রাজু। এ কারণে দলীয় হাইকমান্ডের নজর পেতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে প্রকাশ্যে গুলি চালায় এই ছাত্রলীগ নেতা।
সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আশিক ইকবাল গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ই আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে গ্রেফতার এড়াতে সাভার পৌর বিএনপির এক নেতাকে ম্যানেজ করে এতদিন পলাতক ছিলেন মোমেনুল ইসলাম রাজু। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের স্বজনরা বেশ কিছু মামলা করেছেন। সেই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি মোমেনুল ইসলাম রাজু ওরফে জোড়া ধর্ষক রাজু।
তথ্য সূত্র জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সাভার উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোমেনুল ইসলাম রাজুর বিরুদ্ধে দুইটি ধর্ষণ, মাদক ও হত্যা মামলা রয়েছে। এদিকে রাজুর গ্রেফতারের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে সাভার মডেল থানা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রাজুর হাতে নির্যাতিত সাধারণ জনগণ ও ভুক্তভোগীরা।
নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের এই নেতার বিরুদ্ধে থানা থেকে দায়ের হওয়া ধর্ষণের মামলা প্রত্যাহার করতে ভুক্তভোগী পরিবারকে চাপ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার বলছে, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রাজুর পাশাপাশি ছাত্রলীগ নেতার বাবা আ.লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন ও ওই ছাত্রলীগ নেতার কর্মীরা তাদেরকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে মামলা প্রত্যাহারের জন্য।
এরই মধ্যে বিয়ের আশ্বাসে আপস মীমাংসা করার কথা বলে ভুক্তভোগীকে ডেকে নিয়ে মারধর ও প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে ঢাকার একটি আদালতে পৃথক আরেকটি মামলা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।
ওই মামলায় মোমিনুল ইসলাম রাজুসহ অন্য আসামিরা হলেন সাভার পৌর আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন(৫৩) এবং যুবলীগ নেত্রী জয়া আক্তার(২৬)।
স্থানীয় সূত্র, পুলিশ সূত্র, আদালতে দায়ের হওয়া মামলা ও ধর্ষণ মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মোমিনুল ইসলাম রাজুর সঙ্গে ভুক্তভোগী এক তরুণীর (২৮) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত বছরের শুরু থেকে ছাত্রলীগ নেতা ও ভুক্তভোগী তরুণী সাভার উপজেলার রাজাশন এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস শুরু করেন। যৌতুক হিসেবে ওই তরুণীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে নগদ এক লাখ টাকা নেন রাজু। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর ওই তরুণীকে বিয়ে করার কথা ছিল তার। তবে বিয়ে না করে ওই ভাড়া বাড়িতে সেদিন সন্ধ্যায় জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে কৌশলে পালিয়ে যায় রাজু। পরবর্তীতে এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই ভুক্তভোগী তরুণী। এই ঘটনা মীমাংসা করার কথা বলে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন আ.লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন। জুলাই আন্দোলনের পর ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে মীমাংসা না হওয়ায় ঘটনার ২৯ দিন পর ২০২৪ এর ১৪ নভেম্বর ভুক্তভোগী তরুণী বাদী হয়ে রাজুর বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
চলতি বছরের গত ২ জানুয়ারি ভুক্তভোগী তরুণীকে ডেকে এনে মারধর করে হত্যা চেষ্টা চালায় মোমিনুল ইসলাম রাজু ও তার লোকজন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ভুক্তভোগী তরুণী। ধর্ষণ সহ এই ঘটনায় ঢাকার একটি আদালতে মামলা দুটি বিচারাধীন রয়েছে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের শর্তে উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিন নিয়ে পুনরায় সাভারে এসে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের লিফলেট বিতরণ করে আসছিল রাজু। এসব ঘটনায় তাকে সাভার পৌর বিএনপি’র এক নেতা সহযোগিতা করছেন।
অপর একটি ধর্ষণের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এমবিবিএস পড়ুয়া এক নারী শিক্ষার্থীর (২৬) সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন রাজু। পরবর্তীতে বিয়ের আশ্বাসে তাদের মধ্যে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে ওই নারী শিক্ষার্থী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে বিয়ের চাপ দিলে জোরপূর্বক তাকে এমএম কিট খাইয়ে ভ্রূণ হত্যা করে মোমিনুল ইসলাম রাজু। এই ঘটনায় আপোস-মীমাংসা করে পার পেয়ে যায় অভিযুক্ত এই ছাত্রলীগ নেতা।
সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আশিক ইকবাল বলেন, ‘ মোমেনুল ইসলাম রাজুর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়েছে। সেই মামলায় তাকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা গত জুলাই-আগস্ট সাভারে জমায়েত হতে থাকেন। এ সময় স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী সাভার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শীর্ষ সন্ত্রাসী মঞ্জুরুল আলম রাজীব ওরফে বিচি বাবা এবং ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম ওরফে ডিম সাইফুলের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এ ঘটনায় সাভার আশুলিয়ায় শতাধিক ছাত্র-জনতা শহীদ হন। এমন অসংখ্য ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শহীদের স্বজনর