সাইফুল ইসলাম জয় (হেলাল শেখ): রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলা থেকে কম সময়ে রাজধানী ঢাকা যাতায়াত করতে কাজিরহাট-আরিচা নৌ-রুটের যাত্রীরা স্পিডবোট ব্যবহার করতেন।
পাবনা-মানিকগঞ্জের ব্যবসায়ীরা এসব স্পিডবোট নিয়ন্ত্রণ করতেন। জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ২০২৪ইং তারিখে সরকার পতনের পর স্পিডবোটের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মালিক, চালক ও কর্মচারীদের কোনো খোঁজ খবর নেই। এখন সেগুলো যমুনা নদীর চরসহ বিভিন্ন চরে বা নদী নালায় মূর্তির মত পড়ে আছে। এতে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন এই নৌ-রুটে চলাচলকারী যাত্রীসাধারণ।
এদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বাহনগুলোর রুট পারমিট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রক্রিয়া শেষ হলেই নতুন করে স্পিডবোট চালু হবে ইনশাআল্লাহ।
উক্ত বিষয়ে অনেকেই জানান, পাবনা থেকে যমুনা সেতু হয়ে রাজধানীতে যেতে সময় লাগে প্রায় ৫-৬ ঘন্টা। আবার যানজট থাকলে তা ১০-১২ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়। অথচ পাবনা হতে কাজিরহাট ফেরিঘাট থেকে স্পিডবোটে যমুনা নদী পার হয়ে মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাট দিয়ে ঢাকা যাতায়াতে সময় লাগে সর্বোচ্চ চার ঘন্টার মতো। স্পিডবোটগুলো বন্ধ থাকায় যাত্রীরা দ্রুত ঢাকা যাতায়াত করতে পারছেন না। ৫ আগস্টের আগে দুই পাড়ে লোকজনের মালিকানায় ১২-১৮ আসনের দুই শতাধিক দুই ধরনের স্পিডবোট চলাচল করতো।
সরজমিনে ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, স্পিডবোটগুলো বন্ধ থাকায় যাত্রী ও ঘাটের দোকানদার, সিএনজি চালক, স্পিডবোটের চালক কর্মচারীরা কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
স্পিডবোট চালক বাপ্পি, হাসানসহ অনেকেই জানান, প্রায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে কাজিরহাট থেকে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ আছে। যার ফলে চালকসহ সংশ্লিষ্টরা বেকার হয়ে বসে আছেন। তারা জানান, কাজ না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ পথে নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রী সরকারি চাকরিজীবী আশরাফুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি ঢাকায় চাকরি করেন, বিভিন্ন সময় জরুরি কাজে পাবনার বাড়িতে যেতে সে সময় কুইক সার্ভিস বা স্পিডবোট ব্যবহার করতেন, কম সময়ে যাতায়াত করার জন্য।
ঢাকা জেলার "সাভার সরকারি কলেজের প্রথম প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব শেখ" বলেন, গত ৫ আগষ্টের পর থেকে স্পিডবোট সার্ভিস বন্ধ থাকায় অসুবিধায় পড়তে হয়, গ্রামের বাড়ি পাবনার কাজিরহাট ফেরিঘাট থেকে স্পিডবোটে আরিচা আসতে ১৮-২০ মিনিট সময় লাগতো এখন দেড় থেকে ২ ঘন্টা সময় লাগে নদী পাড়াপাড় হতে, তিনি আরো বলেন, আমরা শিক্ষার্থীরা দেশ স্বাধীন করে কি পেলাম নতুন করে আরো সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এই শিক্ষার্থী।
কাজিরহাট ঘাটে চা-দোকানদার আব্দুল বাতেন বলেন, 'গত ৫ আগষ্টের পরের দিন থেকে স্পিডবোট বন্ধ থাকায় এই পথে যাত্রী পারাপার খুবই কমে গেছে, অল্প যাত্রী আসেন, তারা লঞ্চ দিয়ে পারাপার হোন, এর ফলে বেচা বিক্রি কম, ব্যবসা নাই। তিনি আরো বলেন, যখন স্পিডবোট চলাচল করতো তখন দিনে ৫-৬ হাজার টাকা বিক্রি হতো, আর এখন দিনে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০০০-১৫০০/টাকা। এ অবস্থায় ব্যবসা করে টিকে থাকা মুশকিল।
সিএনজি চালক নাসিম ও আকরাম হোসেন বলেন, স্পিডবোট বন্ধ থাকায় এই রোডে যাত্রী খুবই কম, ফলে তাদের ট্রিপ কমে গেছে, সারাদিন দুই একটি ট্রিপ ভাগে পড়ে, তাই বাধ্য হয়ে অন্য রোডে গাড়ি চালাচ্ছেন তারা।
কাজিরহাট ঘাট এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, এই ঘাটে বিগত দিনে দুই পাড়ের কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা স্পিডবোটগুলো ও ব্যবসা পরিচালনা করতেন। গত ৫ আগস্টের পর জনরোষের ভয়ে স্পিডবোটগুলো ফেলে তারা আত্মগোপনে আছেন।
বিআইডব্লিউটিএর নগরবাড়ী-কাজীরহাট কার্যালয়ের পোর্ট কর্মকর্তা মো. আব্দুল ওয়াকিল গণমাধ্যমকে বলেন, ৫ আগষ্ট থেকে প্রায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে কাজিরহাটে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সংশ্লিষ্ট বোট মালিক ও ইজারাদারের রুট পারমিট বাতিলের কথা লোক মারফত জানানো হয়, কিন্তু কেউ সাড়া দেননি। এখন নতুন করে দ্রুত রুট পারমিট দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তখন এসব স্পিডবোট চলাচল করতে পারবে বলে তিনি দাবি করেন।