প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২১, ২০২৪, ১১:২৫ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১, ২০২৪, ১২:০৯ পি.এম
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখলচেষ্টার অভিযোগ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে
আজিজুর রহমান মুন্না, সিরাজগঞ্জঃ সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার রানীগ্রাম বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে একই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত রানীগ্রাম কোরআনীয়া হাফিজিয়া কওমী মাদরাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে বিদ্যালয়টির ৬ জন নারী শিক্ষিকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯২৯ সালে রানীগ্রাম এলাকায় রানীগ্রাম বালক মক্তব প্রতিষ্ঠা হয়। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ওই প্রতিষ্ঠানটিতে মোট ৭৮ শতাংশ জমি দান করেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ওই মক্তব্যের মৌলভী হিসেবে শিশুদের আরবী পাঠদান করতেন মওলানা হাবিবুল্লাহ। ১৯৭৩ সালে মক্তবটিকে সরকারিকরণ করা হয় এবং নাম দেওয়া হয় রানীগ্রাম বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেই থেকে প্রতিষ্ঠানটি এলাকার প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা পালন করে আসছে। এই প্রতিষ্ঠানটির নামে ৭৮ শতাংশ জমি সর্বশেষ ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান শেষে নামজারী করা হয়। নামজারীর বিষয়টি জেনে রানীগ্রাম কোরআনীয়া হাফিজিয়া কওমী মাদরাসা কর্তৃপক্ষ উল্লেখিত জমি মক্তবের সম্পত্তি দাবী করে সিরাজগঞ্জ সদর ভূমি অফিসে মিসকেস দায়ের করে। যেটি এখনো চলমান।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সরেজিমেন গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়টির পূর্বপাশে মাদ্রাসা রয়েছে। তবে কোথাও কোন সাইনবোর্ড নেই। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, রানীগ্রাম হাফিজিয়া কোরআনীয়া কওমী মাদরাসা নামে একটি সাইনবোর্ড ছিল। যেটা অতি সম্প্রতি খুলে ফেলা হয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে তদন্ত করে মক্তবের কোন অস্তিত্ব নেই মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেছে পৌর ভূমি অফিস। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে রানীগ্রাম বালক মক্তবটিই রানীগ্রাম বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রুপান্তরিত হয়েছে। তবে রানীগ্রাম হাফিজিয়া কোরআনীয়া কওমী মাদরাসা দেখা গেছে। যেটি ব্যক্তি মালিকানার সম্পত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।
এদিকে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে স্কুলের নারী প্রধান শিক্ষিকাদের বিভিন্ন সময়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত মে মাসে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়রীও করেছেন প্রধান শিক্ষিকা। বর্তমানে স্কুলের জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে ৬জন নারী শিক্ষক চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলেও দাবী করেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মক্তবটি অনেক আগেই স্কুলে পরিণত হয়। ২০০৯ সালে স্কুলের জমিতে রানীগ্রাম ফোরকানিয়া হাফিজিয়া কওমী মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। প্রতি বছর এখানে ইসলামী জালসারও আয়োজন করা হয়। এখন জমি নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এ অঞ্চলে। জমির মালিকানা পাওয়ার জন্য মাদরাসার সাইনবোর্ডটি উঠিয়ে মক্তবের সাইনবোর্ড লাগানো হতে পারে বলে অনেকেরই ধারণা।
রেবেকা সুলতানা নামে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা বলেন, ৭৮ শতাংশ জমির মধ্যে কিছু ফসলী জমিও রয়েছে। ওই জমির ফসল বিদ্যালয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে ওই জমির ফসল মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ভোগ করছে।
রানীগ্রাম বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছা. হাফিজা খাতুন বলেন, বিদ্যালয়ের নামে জমির নামজারী হয়েছে। ওই নামজারী বাতিল করতে মাদরাসার সেক্রেটারি মো. হেলাল উদ্দিন মিসকেস করেছেন। মুহতামীম মাওলানা মুফতি মাসসউদুর রহমান ও হেলাল উদ্দিন বিভিন্ন সময়ে আমাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রযেছি।
রানীগ্রাম হাফিজিয়া কোরআনীয়া কওমী মাদারাসার সেক্রেটারি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ভুমিদাতাগণ মক্তবের নামে জমি দিয়েছিল। এসএস আরস রেকর্ডে মক্তবের নামই রয়েছে। এখানে এখনও মক্তব রয়েছে। আমরা জমির খাজনা-খারিজ করতে গিয়ে দেখি ৭৮ শতাংশ জমির সম্পূর্ণই স্কুলের নামে নামজারী করা হয়েছে। এলাকার লোকজন মক্তব্যের নামে ওই সম্পত্তি দান করেছে, স্কুলের নামে নয়। তাই আমরা নামজারীর বিরুদ্ধে মিসকেস দায়ের করেছি। তবে জমির কোন দলিল দেখাতে পারেননি তিনি।
Jসিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাইয়ার সুলতানা বলেন, ওই স্কুলের মালিকানাধীন ৭৮ শতাংশ জমি নামজারী করার পর মাদরাসা কর্তৃপক্ষ মিসকেস দায়ের করেছে। মিসকেসটি এখন সদর উপজেলা ভূমি অফিসে তদন্তাধীন রয়েছে।
Copyright © 2024 সকালের বাংলা. All rights reserved.