প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৫, ২০২৪, ২:২২ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪, ২:৫৫ পি.এম
আজিজুর রহমান মুন্না, সিরাজগঞ্জঃ
ইউনাইটেড নেশনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইউনিডো) এবং বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন (বিডিএফ) আয়োজিত প্লাস্টিক ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আন্তঃস্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০২৪-এর সিরাজগঞ্জ পর্বের চূড়ান্ত বিতর্ক ও সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিরাজগঞ্জ শহরের অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে সমাপনী অনুষ্ঠানে, প্লাস্টিকের ব্যবহারে গণসচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমের ভূমিকাকে প্রতিপাদ্য করে হওয়া ফাইনাল বিতর্ক শেষে সিরাজগঞ্জ পুলিশ লাইনস স্কুল এন্ড কলেজ চ্যাম্পিয়ন এবং পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয় রানার আপ হয়। বিজিত দলের যাবির ইবনে হক ফাইনালের সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হয়েছেন। সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্কুল থেকে মোট ১৬টি দল দুই দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এবং শেষদিনে কর্মশালায় অংশ নেয় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী। প্রতিযোগিতার পাঁচটি পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা প্লাস্টিকের টেকসই ব্যবহার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, এবং পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে তাদের বিষয়ে তাদের জ্ঞান, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং বিতর্কের দক্ষতা প্রদর্শন করে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লিটুস লরেন্স চিরান। তিনি বিতর্কের মাধ্যমে যেকোনও সমস্যার বিশ্লেষণে শিক্ষার্থীদের জড়িত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। প্লাস্টিক দূষণের ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবেলায় তরুণদের সম্পৃক্ততার উপর জোরারোপ করে তিনি বলেন, “প্লাস্টিক দূষণ শুধু একটি পরিবেশগত সমস্যা নয়; এটা আমাদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। যদিও দেশের প্রচলিত নীতি এবং আইনগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তথাপি তরুণ প্রজন্মের সচেতনতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ আশু প্রয়োজন।”
এসময় শিক্ষার্থীদের বিপুল সাড়া এবং গঠণমূলক চিন্তাভাবনা দেখে আনন্দ প্রকাশ করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরও যোগ করেন, “বিতর্ক করে, আপনি শুধু একটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছেন না – আপনি সমাধানের অংশ হয়ে উঠছেন। আমি আত্মবিশ্বাসী যে শিক্ষার্থীরা আজ এখানে যে ধারনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন তা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নীতি ও কর্মপদ্ধতি প্রণয়নে অবদান রাখবে।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মোঃ আব্দুল গফুর, প্লাস্টিকের টেকসই ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের উন্নয়নে সাধারন মানুষের সম্পৃক্ততার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই তৃণমূল পর্যায়ে শুরু হয় এবং এই লড়াইয়ে ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে আমাদের সমাজের প্রতিটি সদস্যকে জড়িত করা অপরিহার্য। আজকের বিতর্কে কিশোরবয়সী শিক্ষার্থীরা যে অন্তর্দৃষ্টি এবং যুক্তি প্রকাশ করল তা পরিবেশ সচেতন সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমাদেরকে প্রচণ্ড আশাবাদী করে তুলেছে।” এসময় তিনি বিতর্কে অর্জিত জ্ঞানকে শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন ও পারিবারিক জীবনে নিয়ে চর্চা করার আহ্বান জানান।
ইউনিডো বাংলাদেশের ন্যাশনাল এক্সপার্ট মাহবুল ইসলাম এই অনুভূতির প্রতিধ্বনি করে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হল বিতর্কের মাধ্যমে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেখানে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা প্লাস্টিক দূষণের নানা মাত্রার জটিলতা ও আঙ্গিকগুলি অন্বেষণ করতে পারে এবং সমাধানগুলোর বিকাশ ও প্রয়োগে অবদান রাখতে পারে। আমাদের দেশে টেকসই প্লাস্টিকের যথাযথ ব্যবহারের বহুল প্রসারের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্পখাতের উন্নয়ন জরুরি। চলমান প্রতিযোগিতায় বিতর্কের সকল যুক্তি-প্রতিযুক্তির মধ্য দিয়ে এই বিষয়গুলিও সামনে এসেছে যা পরিবেশ-ভাবনায় বর্তমানের তরুণদের সংবেদনশীলতাকে ফুটিয়ে তোলে।” তিনি আরও বলেন, “প্লাস্টিক ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আলোচনায় শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করার লক্ষে ইউনিডো আগামী দিনগুলোতেও দেশের সরকার ও মানুষের সাথে একযোগে কাজ করে যাবে।”
সিরাজগঞ্জ সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মনোয়ার হোসেন প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তরুণদের সম্পৃক্ত করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বলেন, “সিরাজগঞ্জে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্বিত। তরুণপ্রাণকে সক্রিয়ভাবে এই ধরনের সমালোচনামূলক বিষয়গুলির সাথে জড়িত দেখতে পারাটা উৎসাহব্যঞ্জক এবং আমি বিশ্বাস করি যে তারা আমাদেরকে একটি স্বাস্থ্যকর ও নির্মল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
প্রতিযোগিতাটি “বাংলাদেশে টেকসই প্লাস্টিক ব্যবহার এবং সামুদ্রিক লিটার প্রতিরোধের প্রতি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি” শীর্ষক বৃহত্তর প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং নরওয়ে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালযয়ের অর্থায়নে ইউনিডো এবং পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক যৌথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। চলমান এই প্রকল্পের লক্ষ্য বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণের ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবেলা করা।
সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের (বিডিএফ) সভাপতি প্লাবন গঙ্গোপাধ্যায় আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি আগামী দিনের যোগ্য নেতৃত্বের প্রস্তুতি ও বিকাশের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে। তিনি বলেন, “বিডিএফ বিশ্বাস করে যে বিতর্কের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনাগুলোকে রাষ্ট্রের বৃহত্তর আয়োজন ও পরিকল্পনার সাথে সম্পৃক্ত করাটা দেশের সংস্কার ও স্থায়ী উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান এই প্রতিযোগিতাটি বিশেষভাবে সময়োপযোগী কেননা বাংলাদেশের পরিবেশের উপর প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রকটভাবে দৃশ্যমান এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্বগ্রহণের অল্পদিনের মধ্যেই এই বিষয়ে তাদের সংবেদনশীলতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে।”
শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের বিপুল উদ্দীপনাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে বিডিএফ সভাপতি প্লাবন আরও বলেন, “স্কুলশিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে রাজধানীর বাইরে, এই বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্ক করার মাধ্যমে, আরও যৌক্তিক এবং দায়িত্বশীল প্রজন্ম তৈরি করা সম্ভব যারা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এখানে অংশগ্রহণকারী সকলের এহেন উত্সাহ এবং আয়োজনসংশ্লিষ্ট সকলের নিষ্ঠা আমাদের এই বিশ্বাসকে আরও বেগবান করেছে।”
বিডিএফের সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের পাশাপাশি আরও উপস্থিত ছিলেন ইউনিডো’র প্লাস্টিক রিসাইক্লিং অ্যান্ড কনজিউমার অ্যাওয়ারনেস বিষয়ক জাতীয় বিশেষজ্ঞ মহোবুল ইসলাম, বিডিএফের সাধারণ সম্পাদক জেহাদ আল মেহেদী, জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি মাহমুদুল আলম রাসেলসহ আরও অনেকে।
এই আন্ত-স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতাটির কক্সবাজার পর্ব পরবর্তী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে।