বাংলাদেশের আট কোটি নাগরিকের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি পঁচিশ বছরের তরুণ-তরুণী। এদের শতকরা নব্বই ভাগ গ্রামবাসী এবং এদের এক বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ স্কুলের চৌহদ্দির বাইরে সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত অস্তিত্ব পালন করছেন। এই বিপুল যুবশক্তিকে সচেতন ও সংগঠিত করার জন্য এবং বৃত্তিমূলক দক্ষতা বৃদ্ধি করণ কার্যক্রমের মাধ্যমে এদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সমাজকল্যাণ ক্ষেত্রের আওতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জাতীয় যুবসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়িত করা হবে। সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন ক্ষেত্রেও যুব সমবায় আন্দোলনকে জোরদার করা হবে। আমাদের দল এইসব আন্দোলন ও কার্যক্রমকে মজবুত বলিষ্ঠ করবে এবং তরুণ-তরুণী সমাজকে উন্নয়নমূলক, গঠনমূলক ও সমাজসেবাধর্মী কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট করার সার্বিক প্রচেষ্টা চালাবে। দেশের শিক্ষিত বেকার যুব সমাজের কর্মসংস্থানের সফল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমাদের দল বিশেষ প্রচেষ্টা চালাবে। দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীতে এই বেকার জনশক্তিকে কাজে লাগাবার ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশের নব্বই শতাংশ মানুষ পল্লী এলাকার অধিবাসী। গত আড়াই বছরের নিরলস উদ্যোগ এই বঞ্চিত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পরিবেশ রচনা করেছে। এই ভিত্তিকে আরও মজবুত করা এবং গ্রাম বাংলার দ্রুত অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রগতির নিশ্চয়তা বিধান করা পার্টির অন্যতম মূল উদ্দেশ্য। আমাদের দল গ্রামীণ জনগণের জীবনে বৈপ্লবিক সমৃদ্ধি ও সার্বিক উন্নতি আনয়নে বদ্ধপরিকর। গ্রাম বাংলায় যাতে দারিদ্র ক্ষুধা ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার অবসান ঘটে সে উদ্দেশ্যে পার্টি যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাবে।
এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পার্টি:
– গ্রামীণ কুটির শিল্প, ব্যাপক কৃষি শিক্ষা, মৎস্য চাষ শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বলিষ্ঠ ও ব্যাপকতর ভিত্তিতে সংগঠিত করবে;
– গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে অক্ষরজ্ঞান ও জীবন উপযোগী শিক্ষার বিস্তার ঘটাবে;
– গ্রামাঞ্চলে পর্যায়ক্রমে উন্নতমানের বাসস্থান ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে;
– গ্রামীণ জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও পুষ্টিবর্ধন নিশ্চিত করবে;
– গ্রামীণ বিদ্যুত্যায়ন প্রক্রিয়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত উন্নয়নের জন্য সার্বিক প্রয়াস চালাবে;
– ভূমি-ব্যবস্থা ও প্রশাসনকে ন্যায়বিচার ভিত্তিক, আধুনিক ও সুবিন্যস্ত রূপ দেবে।
সংক্ষেপে, পল্লী এলাকার দ্রুত উন্নয়নকে সকল পর্যায়ে অগ্রাধিকার দিয়ে পার্টি পল্লী অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়ন সাধন করে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করবে।
বাংলাদেশের পল্লী এলাকার অধিবাসীদের আশি শতাংশই কৃষিজীবী। আমাদের দল প্রগতিশীল কৃষিনীতির মাধ্যমে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য কৃষিজাত দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে স্বয়ংসম্পন্ন ও আত্মনির্ভরশীল করতে বদ্ধপরিকর। খাদ্যশস্য ও কৃষিজাত দ্রব্যের উৎপাদন দ্বিগুণ করার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তাকে সফল পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আমরা সার্বিক ও আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাব।
এ উদ্দেশ্যে আমরা:
– সুংসংহত কৃষি কার্যক্রমকে মজবুত করব;
– প্রয়োজনমত কৃষি যন্ত্রপাতি, উপকরণ সরবরাহ করে প্রতিটি কৃষিজীবীকে বাস্তবমূখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমৃদ্ধির সংগ্রামে সফল ও দক্ষ কৃষক হিসেবে গড়ে তুলব;
– সুসংগঠনের মাধমে দরিদ্র ও ক্ষুদ্র কৃষকের হাত মজবুত করে তা ভাগ্য উন্নয়নে সাহায্যে করে জাতীয় অর্থনীতিকে স্বনির্ভর এবং বলিষ্ঠ করে গড়ে তুলব। এই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য আমাদের দল একটি বাস্তবমূখী ভূমি সংস্কার ও ভূমি বন্টনের পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
বস্তুত আমাদের কৃষি, পশুপালন ও মৎস্যনীতি কার্যক্রম আমাদের দেশকে খাদ্যে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই করবে না, বরং খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত করবে, যাতে করে খাদ্য শস্য, অন্যবিধ কৃষিজাত পণ্য এবং মাছ রপ্তানী করে আমরা জাতীয় সমৃদ্ধির পথ বিস্তৃততর করতে পারি।
সামগ্রীক জাতীয় উন্নয়ন, বিশেষত পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুসংগঠিত এবং জনসমর্থিত সমবায় আন্দোলন যে বলিষ্ঠ ও ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে পারে এ সম্পর্কে পার্টি সচেতন। আমাদের দল বিশ্বাস করে যে, আমাদের দেশে সমবায় আন্দোলনের প্রসার ও সাফল্যের প্রধান প্রতিবন্ধক হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায় আমলাতান্ত্রিক সংগঠন ও মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রাধান্য এবং জনগণের অশিক্ষা ও জনমতে সমবায় সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞানের অভাব। সেজন্য আমাদের পার্টি সরকারঃ
– সমবায় ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান ঘটাবে এবং মধ্যস্বত্বভিত্তিক সুবিধাবাদী ও দুর্নীতিবাজ টাউট শ্রেণীর আমূল উৎখাতের ব্যবস্থা নেবে;
– আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে ও জাতীয়ভিত্তিক ব্যাপক সমাজসেবা ও কল্যাণমূলক আন্দোলন চালিয়ে জনমনে সমবায় সম্পর্কে সঠিক ধারণার সৃষ্টি করবে;
– সমাজসেবা মূলক কার্যক্রমকে জোরদার করে সমবায়ী মনোভাবের বিস্তার ঘটিয়ে সমবায় আন্দোলনকে সফল করার প্রচেষ্টা চালাবে ।
এই সকল ব্যবস্থা সার্থকভাবে গ্রহণ করে পার্টির সরকার সমবায় আন্দেলনকে কৃষি ও কুটির শিল্পে ব্যাপক উন্নয়নধর্মী বিস্তারের বাহন হিসাবে গড়ে তুলবে এবং গ্রামীণ কৃষক, মজদুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ইত্যাদিকে অর্থনৈতিকভাবে সুসংহত করে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির বলিষ্ঠ মাধ্যম হিসাবে কাজ করার সুযোগ করে দেবে।
জাতীয় শিল্প-শ্রমিক নীতিতে শ্রমিক ও জাতীয় স্বার্থের এক সুষ্ঠ সমন্বয় ও সমতা বিধানের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। শ্রমিকগণ যাতে তাদের ন্যায্য পাওনা ও সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারেন তার ব্যবস্থা আমাদের পার্টি করবে। সেই সঙ্গে শ্রমক্ষেত্রে গঠনমূলক, উৎপাদনশীল মনোভাব ও কার্যক্রম বিকাশের উপর প্রতিনিয়ত গুরুত্ব দেয়া হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও পরিচালনার অধিকার অক্ষুন্ন রাখা হবে এবং সংগঠিত ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে শ্রমিক ও জাতীয় স্বার্থের রক্ষাকবচ হিসাবে গড়ে তোলা হবে।
আমাদের দলের বিশ্লেষণ অনুযায়ী সর্বাত্মক উন্নয়নই হচ্ছে সার্থক স্বাস্থ্য কর্মসূচী ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের চাবিকাঠি। জাতীয় স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবর্ধন কর্মসূচী এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের তুলনামূলক ব্যর্থতার কারণ এই যে, এই সব কর্মসূচীকে অতীতে সামাজিক ও সংকীর্ণ পেশাগত তত্ত্ববাদ জীবন বিচ্ছিন্ন এক প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য জনসংখ্যামূলক কার্যক্রম আমাদের দেশে তখনই সফল হবে যখন এগুলোকে জীবনমান উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করা যায়। পার্টি সন্তোষের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রম জীবনমূখী ও জীবন নির্ভর হয়ে উঠেছে। পার্টি এই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা আন্দোলনকে জাতীয় পর্যায়ে সফল করার জন্য আমাদের সরকারঃ
– আমাদের দেশের নব্বই শতাংশ গ্রাম নিবাসী দরিদ্র ও নিরক্ষর মানুষের জীবনের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের অক্লান্ত চেষ্টা চালাব- এদের মধ্যে সমাজ চেতনা ও সামাজিক একতাবোধকে সংহত করার প্রয়াস চালাব- সমাজের উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ প্রচেষ্টাকে জোরদার করবে। অর্থনৈতিক শিক্ষাগত ও সামাজিক উন্নয়নের দৃঢ়ভিত্তি সহজেই জাতীয় স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমকে বাঞ্ছিত সফলতা এনে দ
ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাবার জন্য সাম্প্রতিককালে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে পার্টি তাকে সমর্থন জানায়। আমাদের দলের সরকার এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের পক্ষপাতি যা জাতীয় ঐক্য আনে, উৎপাদন বাড়ায় এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নতির নিশ্চয়তা দেয়। আমাদের সরকার বিজ্ঞানভিত্তিক, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার দ্রুত প্রসার ঘটাবে যাতে করে শিক্ষিত তরুণ-তরুণী বেকারত্বের অভিশাপে না ভোগে। নিরক্ষরতা দূরীকরণ, জীবননির্ভর ও জীবনমূখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য আনুষ্ঠানিক এবং ব্যবহারিক শিক্ষা বিস্তারের জন্য সারা দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।
সুষ্ঠু এবং সুপরিচালিত যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র উন্নত ও সমৃদ্ধ হতে পারে না । জাতীয় অর্থনীতি, বিশেষত গ্রামীণ অর্থনীতি ও মানব সম্পদ যাতে দ্রুত উন্নতি লাভ করতে পারে সে জন্য পার্টি রেল, সড়ক, বিমান ও নৌ-পরিবহনসহ সকল যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার সর্বাত্মক উন্নতি সাধনের প্রচেষ্টাকে অব্যাহতভাবে জোরদার করে চলবে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ এখনও বহুলাংশে অনাবিষ্কৃত ও অল্প ব্যবহৃত। প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ উন্নয়ন ও ব্যাপক ব্যবহার জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অন্যতম নিশ্চিত উপাদান। বাংলাদেশের বিচিত্র ও বহুমূখী প্রাকৃতিক সম্পদ- পাথর, তেল, কয়লা, গ্যাস, চীনামাটি, পানি, সৌরতাপ, বনজ ও পশুজাত দ্রব্যাদি যাতে যথাযথভাবে দেশ ও জাতির উন্নয়নে ও সমৃদ্ধি অর্জনের কাজে লাগে সে জন্য পার্টির সরকার আধুনিক বাস্তবমূখী উন্নয়ন ও ব্যবহার নীতি প্রণয়ন করবে এবং সে নীতি অনুযায়ী বলিষ্ঠ কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও জনগোষ্ঠী জাতীয় উন্নয়ন প্রয়াস ও প্রক্রিয়ায় সার্থকভাবে সংশ্লিষ্ট হতে পারেনি। ঐতিহাসিক কারণে বা সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবের কারণে এসব অঞ্চল ও জনগোষ্ঠী অপেক্ষাকৃতভাবে অনুন্নত অবস্থায় আছে। এসব এলাকা ও জনগোষ্ঠীর সার্বিক মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে আমরা জোরদার করবো। যে সব আদিবাসী ও দুর্গম অঞ্চলের অধিবাসী উপজাতি ঐতিহাসিক ও ঔপনিবেশিক কুশাসন ও শোষণের কারণে শিক্ষাগত অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে পেছনে পড়ে আছেন তাদের দ্রুত অর্থবহ উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য আমাদের পার্টি সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা বাস্তবায়িত করবে।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী। আমাদের জাতির বীর সশস্ত্র সৈনিকবৃন্দ যাতে দেশ রক্ষার কাজে সম্পূর্ণভাবে সার্থক হয়ে উঠতে পারে সে জন্য আমাদের দলঃ
– সশস্ত্র বাহিনী যাতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, সমরোপকরণ এবং সজীব সংগঠন লাভ করে তার সার্বিক ব্যবস্থা করবে।
– জনভিত্তিক দেশরক্ষা ব্যবস্থাকে জোরদার করবে।
– দেশরক্ষা বাহিনী যাতে সকল পেশাগত ও ন্যায়সঙ্গত চাহিদা পূরণের জন্য জাতীয় সাহায্য ও সহায়তা পায় সে ব্যবস্থা করবে।
১৯৭১-এর মহান মুক্তি সংগ্রামের সেনানীরা আমাদের জাতীয় উপলব্ধি ও সংহতির কেন্দ্রীয় উপাদান। তাঁরা যাতে বাস্তবভিত্তিক সৃজনশীল, গঠনমূলক উৎপাদনমূলক কার্যক্রমে শরীক হতে পারেন সেজন্য আমাদের পার্টি ও তার সরকার সুচিন্তিত কর্মসূচী বাস্তবায়নে ব্রতী হবে। এ উদ্দেশ্যে:
– মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে তাদেরকে নিজেদের, নিজ পরিবারের ও জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত করার কর্মপন্থাকে বলিষ্ঠতর করা হবে;
– পঙ্গু ও অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের কে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দিয়ে তাদেরকে পুনঃউপার্জনক্ষম ও আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তিতে পরিণত করবে;
– মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষণ ও প্রচার করবে;
– প্রতিরোধমূলক মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন মহান ঘটনা ও স্থানকে চিহ্নিত করবে এবং সেই সব ঘটনা ও স্থানকে অবিস্মরণীয় করার ব্যবস্থা করবে।
– মুক্তিযুদ্ধের খাঁটি দলিল ও প্রামাণ্য ইতিহাস জাতীয় পর্যায়ে সংরক্ষণ করে ভবিষ্যৎ বংশধরকে অনুপ্রাণিত করবে।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য আমাদের জাতীয় পরিচয়ের ও আত্মউপলব্ধির অনস্বীকার্য উপাদান। ১৯৪৮-৫২ এর ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের সার্থকতার প্রথম মৌলিক সোপান। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যাতে জাতীয় জীবনে পূর্ণ ও ব্যাপক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয় সে জন্য আমাদের দল ও তার সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালাবে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মূল কেন্দ্র যাতে বাংলাদেশ ভিত্তিক হয় সে জন্য আমাদের দল সর্বাত্মক প্রয়াস চালাবে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের পার্টিঃ
– বিদ্যালয় ও বিদ্যায়তনসমূহে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চা জোরদার করবে;
– বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়নের জন্য নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কার্যক্রম সুসংবদ্ধ ও বলিষ্ঠ করবে;
– জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার বলিষ্ঠতর ব্যবহার ও ব্যাপকতর প্রসারের চেষ্টা করবে এবং উচ্চতর ও মাধ্যমিক শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ও গবেষণামূলক গ্রন্থাদি বাংলায় দ্রুত রচনার বা অনুবাদের আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
জাতীর স্বতঃস্ফূর্ত সৃজনশীল প্রতিভার সুষ্ঠু ও সার্বিক বিকাশের উদ্দেশ্যে আমাদের দল সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ক্রীড়ার সংগঠিত ও বিস্তৃততর উন্নয়নের প্রচেষ্টা নেবে। এ লক্ষ্য অর্জন করার জন্য আমরাঃ
– দেশের সকল এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক সংস্কৃতি ও ক্রীড়া কেন্দ্র পর্যায়ক্রমে এবং সুবিন্যস্তভাবে গড়ে তুলব;
– সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সকল জননির্ভর এবং জীবনমূখী লোক প্রচেষ্টাকে প্রয়োজনীয় বাস্তব সাহায্য ও সহায়তা দেবো;
– দেশের আনাচে কানাচে সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে যে সকল প্রতিভাশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী রয়েছে তাদেরকে চর্চা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ দিয়ে তাদের সাধনালব্ধ কৃতিত্বকে জাতীয় সম্মান ও সম্পদে রূপান্তরিত করার সুসংগঠিত প্রচেষ্টা চালাবো;
ধর্ম আমাদের ঐতিহ্যের অবিভাজ্য অংশ। বাংলাদেশ বিভিন্ন ধর্মীয় মানুষের আবাসস্থল। ইসলাম এদেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্ম ও জীবনদর্শন। ইসলাম ধর্মের শিক্ষা যাতে মুসলমানদের জীবনে সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত হতে পারে সেজন্য আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাব। অনুরূপভাবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা যাতে নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্ম শিক্ষা লাভ করতে পারেন সেজন্য আমাদের দল আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাবে। সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংরক্ষণ ও সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিশেষ যত্নবান হওয়ার বিশেষ করে অনগ্রসর জাতীয় জীবনে তাদের অধিকতর সুবিধা ও অংশগ্রহণের সুযোগের যথাযথ ব্যবস্থা করে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে সূদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
আমাদের দলের দৃঢ় বিশ্বাস এই যে, সংগঠিত জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনের সকল প্রচেষ্টা-
বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক জগতে যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদার আসনে সমাসীন করতে পারবে। সকল জাতির স্বাধীন সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক প্রীতি, সখ্য ও শান্তি গড়ে উঠুক এবং সুরক্ষিত হোক ইহাই জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান লক্ষ। বাংলাদেশের জনগণ আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ও সংঘর্ষের বিরোধী জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলন ঘটিয়ে আমাদের দল এমন এক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবে যার আওতায় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা ভিত্তিক সাম্যের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। আমাদের দল অন্য দেশ ও জাতির অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করে যাবে। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে আমাদের মৌলিক প্রধান লক্ষ্য হচ্ছেঃ
ক) জাতিসংঘের সনদ এবং এর মূলনীতির প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন;
খ) আন্তর্জাতিক শান্তি ও সম্প্রীতি গভীরতর ও স্থায়ী করার প্রচেষ্টায় সামিল হওয়া;
গ) তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সহমর্মিতা ও সখ্যতা দৃঢ় করে তোলা;
ঘ) মুসলিম দুনিয়ার ভ্রাতৃপ্রতিম সকল দেশের সঙ্গে গভীর ও স্থায়ী বন্ধুত্ব অটুট রাখা ও সম্প্রসারিত করা;
ঙ) আরব ও লিলিস্তিনী ভাইদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় পূর্ণ সমর্থন দান করা;
চ) জোট নিরপেক্ষ বিশ্বের সঙ্গে মৈত্রীর বন্ধন-জোরদার করে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা;
ছ) প্রতিবেশী সকল রাষ্ট্রের সাথে বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিকটবর্তী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা দৃঢ় ও স্থায়ী করা ।
জ) এশিয়া ও অফ্রিকাসহ দুনিয়ার যে সকল এলাকায় অত্যাচারী ঔপনিবেশিক স্বৈরাচারী সংখ্যালঘু সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রাসরণবাদী শাসন ও শোষণ চলছে সে সব অঞ্চলের জনগণের বিপ্লবী মুক্তি আন্দোলনে সকল প্রকার সমর্থন দেওয়া।
পার্টির পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অটুট রেখে সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করে এমন এক শান্তিপূর্ণ ও উন্নয়নমূখী পরিবেশ গড়ে তোলা যা বাংলাদেশের জনগণের উন্নয়ন, সুখ ও সমৃদ্ধির সহায়ক হবে।