
মীর আমান মিয়া লুমান, স্টাফ রিপোর্টার:
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় গাইনি চিকিৎসক সংকটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটি প্রভাবশালী ডাক্তার-ফার্মেসি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অবশেষে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ-এ “ছাতকে ডাক্তার ও ফার্মেসি মিলে সিন্ডিকেটের অভিযোগ, বিপাকে রোগীরা” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকালে ছাতক ট্রাফিক পয়েন্টে অবস্থিত বিতর্কিত নীপা ফার্মেসিতে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তরিকুল ইসলাম। এসময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুসরাত আরেফিন ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মেডিকেল প্র্যাকটিস এবং বেসরকারি ক্লিনিক অধ্যাদেশ ১৯৮২-এর সেকশন ১৩(২) ধারায় ফার্মেসিটিকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এমন অনিয়ম না ঘটে, সেজন্য প্রতিষ্ঠানটিকে প্রাথমিকভাবে সতর্কও করা হয়। এই অভিযান ছাতকের স্বাস্থ্যখাতে বিরাজমান সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই মোবাইল কোর্ট স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ এবং প্রশাসনের প্রতি আস্থাহীনতা যখন জনরোষে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, ঠিক তখনই ইউএনও’র এই সাহসী পদক্ষেপ আশার আলো দেখিয়েছে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এই অভিযান কেবল অনিয়ম কমাতেই নয়, বরং জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে প্রশাসনের প্রতি তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হচ্ছে। প্রশাসনের এই ধরনের সরাসরি এবং জনমুখী উদ্যোগ প্রমাণ করে যে, সরকার সত্যিই জনকল্যাণে অঙ্গীকারবদ্ধ।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এমন একটি পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ইউএনও স্যার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আমাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ, এতে অনিয়ম কমে আসবে এবং সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। অপর একজন নাগরিকের মন্তব্য ছিল, প্রথমে আমরা হতাশ ছিলাম, কিন্তু এখন দেখছি প্রশাসন আমাদের কথা শুনছে। ইউএনও স্যারের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা সপ্তাহে তিনদিন নীপা ফার্মেসিতে রোগী দেখেন এবং এ সময় অতিরিক্ত ফি আদায় করেন। তার বিরুদ্ধে চিকিৎসার নামে রোগীদের জিম্মি করে ফার্মেসির নির্ধারিত ওষুধ কিনতে বাধ্য করারও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই ডা. জোহরার বিরুদ্ধে পেশাগত নৈতিকতা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন, দাবি করেছেন তিনি সরকারি হাসপাতালের অভাবকে পুঁজি করে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করেছেন।
স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, নীপা ফার্মেসির মালিকের ছেলে একজন সিনিয়র সহকারী সচিব হওয়ায় প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে এসব অভিযোগ বারবার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তাদের মতে, ক্ষমতার অপব্যবহারই এই সিন্ডিকেটের মূল চালিকা শক্তি। ডা. ফাতেমাতুজ জোহরার নৈতিক স্খলন এবং নীপা ফার্মেসির আর্থিক লোভ ও ক্ষমতার দাপট এই দুইয়ের সম্মিলনে ছাতকের স্বাস্থ্যসেবার চিত্র ভয়াবহভাবে নষ্ট হয়েছে বলে একাধিক পক্ষ দাবি করেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি এবং সর্বোচ্চ জরিমানা করেছি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।