আনোয়ার হোসেন নিজস্বপ্রতিনিধিঃ
বেনাপোল একমাত্র “ক” শ্রেনীর বেনাপোল পৌরসভাটি এখন দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে। নাগরিক সেবার বিপরীতে চলছে হয়রানী ও উৎকোচ গ্রহণের মহোৎসব।পৌরসভার অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সবকিছু ঠিকঠাক চললেও বিপাকে পৌরবাসী। নাগরিক সেবা পেতে গিয়ে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে প্রতি নিয়ত।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বেনাপোল পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ হওয়ায় অপকর্মের জবাবদিহীতা এড়াতে অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছে দূর্নীতিগ্রস্থ পৌরসভার এক ডজনের বেশী কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
পৌরবাসির কাছ হতে বিনা রশিদে পানির সংযোগ লাইন দেওয়ার নামে টাকা উত্তোলন করে সেই টাকা পৌরসভা তহবিলে জমা না রাখা,পৌর এলাকায় নতুন ভবন নির্মাণকাজে অনুমোদন দেওয়ার সময় অর্থবানিজ্য,জরুরী সেবা কাজে বিলম্ব ও সুকৌশলে টাকা নেওয়া,পৌর কর নির্ধারণে স্বেচ্ছাচারিতা,ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছ হতে অর্থবানিজ্যে কাজ শেষ না হওয়ার পূর্বেই কাজ বুঝে না নিয়ে বিল পরিশোধ করে দেওয়াসহ বিবিধ অভিযোগ রয়েছে বেনাপোল পৌরকর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। আর এই সকল অনিয়ম-দূর্নীতির মুলে রয়েছে বেনাপোল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন।
পৌরবাসারী দেওয়া অভিযোগের সূত্র ধরে পৌর এলাকায় ব্যাপক অনুসন্ধান চালালে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।গত মঙ্গলবার ( ২৯ অক্টোবর ) রাতে বেনাপোল পৌর ভবনে সরেজমিনে গিয়ে ডেকোরেশন কাঠ মিস্ত্রিদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।তালাবদ্ধ পৌরসভায় তারা ভিতরে ইন্টেরিয়র ডেকারেশনের কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় , তাহারা অপু ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। বেনাপোল পৌরসভার ডেকারেশনের বাকী রাখা কাজ ঠিকাদারের ফোন কল পেয়ে সমাপ্ত করতে এসেছেন।
বিষয়টি নিয়ে অধিকতর খোঁজ খবর নিলে পৌরসভা সূত্রে জানা যায়,সাবেক মেয়রের মেয়াদকালে ২০২৩-২৪ অর্থ বৎসরে পৌর ভবনের ১ম তলার শোভা বর্ধনের কাজের জন্য সাম্ভব্য ২ কোটি ২০লাখ টাকা ব্যায়ে সংস্কার প্রকল্প নামের কাজ দেওয়া হয় মুকুল এন্ড ব্রাদার্স নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে।সিডিউল ও ওয়ার্ক ওডার প্রাপ্তির পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আনুমানিক ৬ মাস পূর্বে কাজ শুরু করেন যাহা এখনো শেষ করতে পারেনাই।
ভবনের ইন্টেরিয়র ডিজাইনের অর্ধেক কাজ শেষ করেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রকৌশলী মোশারফ,সচিব সাইফুল ও সাবেক মেয়র নাসির উদ্দিনের সহযোগীতায় কাজের সমস্ত বিল উত্তোলন করে নেন যা সম্পূর্ন বে আইনী।এমনকি পৌরভবনের নিচতলার সংস্কার কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয় থেকেও কোন অনুমোদন নেওয়া হয়নী বলে জানা গেছে।
ঠিকাদারের বিল উত্তোলন বিষয়ে সচিব সাইফুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান,প্রকৌশলী মোশারফ ঠিকাদারের দায়িত্বভার নিয়েছেন এবং বিল তুলে নেওয়ার বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।
এবিষয়ে বেনাপোল পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক কাজী নাজিব হাসান বলেন,আমি দায়িত্বভার নেওয়ার পর হতে সবকার্যক্রম নিয়মতান্ত্রিক ও স্বচ্ছতার সাথে হবে। কাজ শেষ করার পূর্বেই বিল উত্তোলন প্রশ্নে? দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন জানিয়ে আরো বলেন এ বিষয়ে সাবেক মেয়রকে জিজ্ঞেস করেন কেমন করে তিনি ঠিকাদারের বিল পাশ করলো।
এছাড়াও পৌর ভবনের সংস্কার কাজে পুকুরচুরি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে সাবেক কাউন্সিলরসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবী মেয়র,ঠিকাদার ও প্রকৌশলী মোশারফ মিলে সংস্কার কাজের টাকা লোপাট করেছেন যা সুষ্ঠ তদন্তে বেরীয়ে আসবে।
সাবেক দূর্নীতিগ্রস্থ মেয়রদের দোসর প্রকৌশলী মোশারফ বরাবরের মত এবারও সংস্কার কাজের ব্যায় দ্বিগুন ধরে প্রকল্প ব্যায় নির্ধারন করেছেন। অভিযোগ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মালিক ও সাবেক মেয়রের সাথে সাক্ষাৎ তের চেষ্ঠা চালালেও সাক্ষাৎ না মেলায় তাদের বক্তব্য জানা যাইনী।
পৌরবাসীর ট্যাক্সের টাকায় গঠিত পৌর তহবিলের অর্থ সীমাহীন দূর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে তছরুফের হিসাব কে দিবে? এমন প্রশ্ন এখন জনমনে। প্রতিকার পেতে যশোর জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষন চেয়ে সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দূর্নীতিতে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের দাবি তুলেছে এলাকাবাসী।