হেলাল শেখঃ রাজধানী ঢাকা ও সাভার আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সহজ সরল মানুষকে কৌশলে সমিতির ফাঁদে ফেলে চড়া সুদের কারবার জমজমাট ভাবে করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা, প্রতিদিনই নেওয়া হয় কিস্তির টাকা। এর আগে এক মা ও মেয়েকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগে থানায় মামলা হয়। অভিযোগ রয়েছে, একাধিক সমিতির পরিচালক স য়ের কোটি কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে। সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে তারা এই কারবার করছে বলে অনেক অভিযোগ রয়েছে। গাজীপুরের পর এবার আশুলিয়ার নরসিংহপুর, জামগড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সমবায় সমিতিসহ নামে বে-নামে অনেক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক চড়া সুদের কারবার করতে নারীদের চাকুরি দিয়ে ধর্ষণ চেষ্টা ও ধর্ষণসহ একাধিক অনৈতিক কর্মকান্ড করার অভিযোগ পাওয়া যায়।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি ২০২৪ইং) জানা গেছে, এর আগে সমবায় সমিতির এক নারী ম্যানেজার আশুলিয়া থানায় ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন, এ অভিযোগে বলা হয় উক্ত বিবাদী আমাকে আমার বেতনের টাকা না দিয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে ধর্ষণ করে। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, উক্ত সিদ্দিক একজন খারাপ প্রকৃতির লোক, তার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সময় অনেক মেয়ের উপর অত্যাচার ও ধর্ষণ চেষ্টা করার প্রমান তিনি নিজে। তিনিও দোষ করেছেন বলে স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে গেলে, আশুলিয়ার ‘নরসিংহপুর একতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ এর পরিচালক মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের নারী ম্যানেজার ও নারী কর্মীর বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় অভিযোগ করেছি। আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টা বা ধর্ষণের যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা। এ দিকে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে অনৈতিকভাবে ম্যানেজ করার জন্য অনেক চেষ্টা করে তিনি ব্যর্থ হোন। আবু বক্কর সিদ্দিক দিনাজপুর জেলার বিরুল থানার নাগরবাড়ী এলাকার রহিতুল্লাহর ছেলে। পুরো বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, এর আগে গাজীপুর ও ঢাকার আশুলিয়ায় সুদের টাকা নিয়ে অনেকেই সর্বশান্ত হয়েছে আর দিশেহারা হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই। গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে সুদের টাকার জন্য মোছাঃ মমতাজ বেগম (৪০), ও তার মেয়ে মাহবুবা আক্তার ঝুমা (১৬) কে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে এর আগে। কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার সিরাজপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের স্ত্রী মমতাজ বেগম ও তার মেয়ের নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল। উক্ত মা ও মেয়েকে যারা নির্যাতন করেছে, তাদের এই অপরাধের বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। সারাদেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা গ্রাম গঞ্জের ও শহরের পাড়া মহল্লায় মানুষকে কৌশলে জিম্মি করে সুদের কারবার করছে, তারা অনেকেই সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে চড়া সুদের জমজমাট ব্যবসা করছে। টাকা দিতে দেরি হলে টর্চার রুমে নির্যাতন করারও অভিযোগ রয়েছে।
কালিয়াকৈর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ওসি রাজীব চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে জানান, গত ১১ ফেব্রয়ারি ২০২১ইং উপজেলার সিরাজপুর এলাকায় সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় মমতাজ বেগম ও তার মেয়ে মাহবুবা আক্তার ঝুমাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। এ বিষয়ে বিধবা নারী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে ওইদিন রাতেই ৮জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করার জন্য অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের আলোকে শুক্রবার (১২ফেব্রæয়ারি ২০২১ইং) একটি মামলা রেকর্ড করা হয়। মামলা নং ৩২/ তারিখঃ ১২/০২/২০২১ইং। এ মামলায় সিরাজ গ্রামের মৃত মুক্তার হোসেনের ছেলে মোঃ সবুজ মিয়া (৪৫) কে পুলিশ গ্রেফতার করে। গত পাঁচ বছর আগে মমতাজ বেগমের স্বামী আব্দুর রশিদ মারা যান। এরপর মমতাজ বেগম তার একমাত্র মেয়ে ঝুমাকে নিয়ে বন বিভাগের জমিতে বসবাস করে আসছেন। এ ছাড়া তিনি পোশাক কারখানায় কাজ করে অনেক কষ্টে তার মেয়ে ঝুমাকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। অভাব-অনটনের মধ্যে কোনরকম ভাবে তাদের সংসার চলে। কিন্তু সুদের কারবারীসহ একটি চক্রের ফাঁদে পড়ে প্রায় তিন লাখ টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সুদ কারবারিদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন মমতাজ বেগম। এর পরে তাকে বাধ্য হয়ে স্থানীয় আব্দুল গফুর ও মনির হোসেনসহ বেশ কয়েক জনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হয়েছে বলে জানান।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, সুদের টাকা নেওয়ার দুই মাস পর থেকে ওই সুদের টাকা আদায় করতে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলো গফুর-মনিররা। এ নিয়ে গত ১ ফেব্রæয়ারি স্থানীয় মাতব্বরদের মধ্যস্থতা করে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য এক মাসের সময় বেঁধে দেন তারা। কিন্তু সেই সময় শেষ না হতেই আব্দুল গফুর ও তার স্ত্রী কুলসুম বেগম, ছেলে রিপন হোসেন এবং মনির হোসেন ও তার স্ত্রী শিল্পী বেগম, মেয়ে মুক্তা আক্তার, ছেলে শহিদ হোসেন ও স্থানীয় নয়ন হোসেনসহ ওই দিন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মমতাজ বেগমের বাড়ি ঘেরাও করে সুদের টাকা আদায় করতে তারা মমতাজ বেগমকে একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করতে থাকে, এসময় মাকে মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে গেলে তার কিশোরী মেয়ে ঝুমাকে একই গাছের সাথে বেঁধে রাখে এবং মারধর করে তারা। এই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করতে গেলে মমতাজের ছোট বোন মেহেরিন সুলতানাকেও তারা গাছের সঙ্গে বাঁধার চেষ্টা করে। মা-মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে প্রায় এক ঘন্টা ধরে নির্যাতন চালায় তারা। তবে এলাকাবাসী অনেকে বিষয়টি দেখলেও তাদেরকে উদ্ধার না করে এড়িয়ে গেছেন। এ সময় কৌশলে ভুক্তভোগী মমতাজ বেগমের বোন মেহেরিন পুলিশের জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন করেন। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ ভুক্তভোগী নির্যাতনের শিকার মা ও মেয়েকে উদ্ধার করেন। তবে পুলিশ আসার খবর পেয়ে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।
নির্যাতিতা মমতাজ বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রায় তিন লাখ টাকা হারিয়েছি। এখন ওই টাকার জন্য সুদে টাকা নিতে হয়েছে, ওই টাকা যোগাড় করতে আব্দুল গফুর ও মনির হেসেনের পরিবারসহ কয়েকজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হয়েছে। টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ইব্রাহীম এক মাসের সময় দিয়েছেন, আমি ওই টাকা ফেরত দেবো। কিন্তু ওই সময় শেষ হওয়ার আগেই তারা আমার বাড়ি ঘেরাও করে আর আমাকে ও আমার মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করাসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেছে। স্থানীয়রা জানান, ভুক্তভোগীদের নির্যাতনের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা করার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। এদিকে অভিযুক্ত গফুরসহ সুদ কারবারীরা তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা বলে এড়িয়ে যান। এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোনে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এবং এ ঘটনার সাথে জড়িত বাকী আসামীদেরকে গ্রেফতা করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।
গাজীপুর, আশুলিয়া, সাভার, ধামরাইসহ বিভিন্ন এলাকায় গত ৫ বছর ধরে সমিতির নামে লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা দিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন শত শত মানুষ। আশুলিয়ায় চেতনা নামের একটি প্রতিষ্ঠান মানুষের কোটি কোটি টাকা নিয়েছে, পল্লী চিকিৎসক মোশারফ এর মতো অনেকেই সর্বশান্ত হয়েছেন। সমাজ সেবা অফিসার, পুলিশ প্রশাসন ও র্যাব জানায়, অভিযোগ পেলে দোষীদের আটক করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পর্ব-১।