সাইফুল ইসলাম জয় (হেলাল শেখ) ঃ ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়া ছয়তলা বেরুণ এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দোকান থেকে কিনে প্রতারণার শিকার হয়ে সাধারণ মানুষ দিশেহারা হচ্ছেন। সারাদেশে ভোক্তা—অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান নিয়োমিত না করায় ঢাকার আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ফার্মেসি দোকান রাস্তার ফুটপাতের দোকানে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ অবাধে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এসব ওষুধ খেয়ে মানুষের রোগ ভালো না হয়ে আরো কঠিন রোগ শরীরে বাসা বাঁধছে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইং) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উক্ত আশুলিয়ার বাইপাইল—আবাদুল্লাহপু সড়কের ফুটপাত দখল করে দোকান বসিয়ে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে ভেজাল ও নকল ওষুধ, সেই সাথে কিছু ফার্মেসি দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দেখা যায়, বিশেষ করে রাস্তার পাশে ফার্মেসিতে ধুলাবালির সাথে একাকার করে চলছে ব্যবসা। এর আগে গত বছরে দুপুর থেকে সন্ধা পর্যন্ত জাতীয় ভোক্তা—অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার আশুলিয়ার ইউনিক বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন, এ সময় নোভা হসপিটালের ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার অপরাধে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সাহারা মডাণ ফার্মেসিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। শেফা ফার্মেসীকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মোট ৫টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। এ সময় ইউনিক মেডিসিন কর্ণার ও সামিহা ফার্মেসী দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়ার অপরাধে ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল/ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিতকরণের নোটিশ দেয়া হয়।
নোটিশে উল্লেখ— এমতাবস্থায়, কেন আপনার ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল/ব্যবসায়িক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করিবার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হইবে না তাহা অত্র নোটিশ প্রাত্তির ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারী কার্যালয়ে উপস্থিত হইয়া কারণ দর্শানোর জন্য আপনাকে নির্দেশ প্রদান করা হইল। এ অভিযান করেন মোঃ আব্দুল জব্বার মন্ডল, সহকারী পরিচালক জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকা জেলা কার্যালয়, ঢাকা। এর আগে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানের সময় আশুলিয়ার জামগড়া ওষুধের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ধামরাই মেডিসিন কর্ণার বন্ধ করে পায়ের জুতা ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। উক্ত অভিযানের দিনও একই কাজ করেছে তারা, এসময় ধামরাই মেডিসিন কর্ণার ওষুধের দোকান প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ইউনিক মেডিসিন কর্ণার ও সামিহা ফার্মেসীর দোকানদারকে দোকান বন্ধ করতে বললে তারা ওই কথা শুনে তাদের ওষুধের দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যায়। জানা গেছে, শেফা ফার্মেসীর মালিক তার নামের আগে ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন লিখে ডাক্তার হিসেবে রোগী দেখেন। সূত্র জানায়, সাভার আশুলিয়ায় অবৈধ ওষুধ ক্রয়—বিক্রয় করে গত ১২—১৫ বছরে অনেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন, যেমনটি ধামরাই মেডিসিন কর্ণার এর মালিক।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ডিম, তেলসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে, বর্তমানে গত ৩—৪দিন ধরে আবার চিনি ও তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, চিনি প্রতি কেজি ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কেউ কোনো জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করতে পারতো না।
এর আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার আশুলিয়ায় ডিমের ৩টি আড়তকে মোট ৪ লক্ষ ৫০ হাজার জরিমানাসহ ১টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জনস্বার্থে সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর। ওইদিন শনিবার দুপুর ১২টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল বগাবাড়ি বাজার এলাকায় ডিমের আড়তে প্রথমে অভিযান পরিচালনা শুরু করেন ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। এসময় কয়েকজন অসাধুডিম ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়, আটককৃতরা হলেন—আসিফ হোসেন এন্টারপ্রাইজ ডিমের আড়তের মালিক শাহ আলম হোসেন ও এসজে এগ্রো এর মালিক স্বপন ইসলাম, পরে তাদেরকে জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ডিমসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের বাজারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আশুলিয়ায় ডিমের আড়তে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এভাবে কারসাজির মাধ্যমে ডিমের দাম বৃদ্ধি করা ইত্যাদি অপরাধে আসিফের ডিমের আড়তকে ১ লক্ষ টাকা, এস জে এগ্রো ডিমের আড়তকে ১ লক্ষ টাকা এবং আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের নরসিংহপুরের সরকার মার্কেটের ফয়সাল এন্টারপ্রাইজকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করাসহ ৩টি প্রতিষ্ঠান ডিমের আড়ৎকে মোট ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দুইটি প্রতিষ্ঠানের মালিক জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয় এবং পরে জরিমানা আদায় করে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য কাজী ফার্মে উৎপাদিত সব ডিম প্রস্তাবিত দরের চেয়ে বেশি দর হাঁকিয়ে নিলামের মাধ্যমে সব ডিম ক্রয় করে অতি মুনাফা লাভের আশায় বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে তারা। উক্ত প্রতিষ্ঠানে ডিম ক্রয়—বিক্রর কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি, এমনকি প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স ৩০ জুন ২০২২ইং তারিখে মেয়াদোত্তীর্ণ দেখা যায় তখন। এ সকল অপরাধে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ফয়সাল এন্টারপ্রাইজের সকল প্রকার কার্যক্রম জনস্বার্থে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিলো কিন্তু আইন অমান্য করে তারা পরের দিন থেকেই তাদের প্রতিষ্ঠান খোলা রাখেন। এ রকম অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে আশুলিয়ায়। আশুলিয়ার জামগড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া ডাক্তার, ভুয়া কবিরাজ, ভুয়া উকিল, লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি ও বিভিন্ন নকল পণ্য দোকানে ওপেন বিক্রি করা হচ্ছে। ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমান ওষুধের দোকান, ফার্মেসীতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা ও সরকারি আইন না মানার অপরাধে দোষীদের আটক করে জেল জরিমানা করার দাবী জানান সচেতন মহল। সোমবার ০৩/০২/২০২৫ইং তারিখ দৈনিক দেশের বার্তা টুয়েন্টি২৪ এর একটি পোষ্ট দেখা যায়, কালা জ্বরের দুই নাম্বার ওষুধ সরবরাহ করে শত শত মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তি বিদেশে পালিয়ে থেকে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে, সত্য চাপা থাকেনা বর্তমান প্রজন্ম ক্ষমা করবে না। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল।