জাহিদ আল হাসান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে কাঁচা মরিচের ফলন ও দাম বেড়ে যাওয়ায় হাসি ফুটেছে মরিচ চাষিদের মুখে। বর্তমান বাজারে কাঁচা মরিচ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকায়। বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় অধিক লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি বছর চাষিরা মরিচের চাষাবাদ করে বদলে দিয়েছে নিজের ভাগ্যের চাকা। ক্ষেতের মধ্যেই স্থানীয় পাইকারদের কাছে মরিচ বিক্রি করতে পেরে স্বস্তিও পেয়েছেন এ এলাকার চাষিরা। মরিচের ব্যাপক চাহিদা থাকায় স্থানীয় শত শত পাইকার ওই সব প্রান্তিক কৃষকদের কাজ থেকে মরিচ ক্রয় করে উপজেলার বিভিন্ন হাটে ক্রয়কৃত মরিচ বিক্রি করে তারাও লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১টি পৌরসভা সহ ১৩টি ইউনিয়নে মরিচ চাষের লক্ষ্য মাত্রা ১১০ হেক্টর। এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ৯০ হেক্টর যা চলমান রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ২৭৫ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে চর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন চরাঞ্চলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মাঝে ২০ টি প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। এ সকল প্রদর্শনীর কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া মরিচ চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে।
জানা যায়, বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। এসব এলাকায় গোড়াই পিয়ার, রামনিয়াশা, হোকডাঙ্গা, টিটমা, নাগড়াকুড়া, দড়িকিশোরপুর, মধ্য গোড়াই, কদমতলা, অজুর্ন, বিরহিম, সন্তোষ অভিরাম, সাদুয়া দামারহাট, কর্পূরা, খারিজা লাটশালাসহ অসংখ্য চর সহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চলতি মৌসুমে মরিচের বাম্পার ফলনসহ মরিচের ভালো দাম থাকায় চাষিরা মরিচ ক্ষেতে পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন, আবার কেউ ক্ষেতের মরিচ তুলছেন, অনেকেই আবার মরিচ বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। শত শত বিঘা জমিতে প্রচুর পরিমানে মরিচের চাষবাদ করেছেন চাষিরা। যে সকল চাষির নিজস্ব কোন জমি নেই, তারাও অন্যের জমি লিজ (কন্ট্রাক) নিয়ে মরিচসহ নানা ধরনের সবজির চাষ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। এবারে মরিচের বাজার দর অনেক বেশি থাকায় চাষিরা মরিচ চাষের প্রতি অনেক আগ্রহ বেড়েছে।
উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলে মরিচ চাষি রুহুল আমীন জানান, এবারে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ১৮ শতক জমিতে মরিচের চাষ করেছেন। মরিচের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এপর্যন্ত খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা আরও খরচ হবে প্রায় ১০ হাজার টাকা। মোট খরচ হবে প্রায় ২২ হাজার টাকা। জমিতে মরিচের আশা করছেন প্রায় ৪০ মণ। আয়ের আশা করছেন প্রায় ১ লক্ষ টাকা থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। বিভিন্ন এলাকার মরিচ চাষি বাবলু মিয়া, চাঁদ মিয়া, হাফিজুর রহমান ও মতিয়ার রহমান সহ আরও অনেকে বলেন, এবারে আবহাওয়া অনুকুল থাকায় মরিচের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বাজার দর ভালো থাকায় আমরা অনেক খুশি। এছাড়া মরিচ চাষের প্রতি অনেক আগ্রহ বেড়েছে এলাকার কৃষকদের।
উপজেলার পৌরসভার সবজি বাজারের আরতদার মুকুল মিয়া (৬৮), আলম মিয়া (৬৫) ও আনারুল মিয়া (৪৫) বলেন, কাচা মরিচের বাজার দর আগের তুলনায় অনেক কমেছে। স্থানীয় ভাবে মরিচ বাজারে আমদানি হলে অনেকটাই হাতের লাগালে থাকবে বলে জানান তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন জানান, এবারে উপজেলায় মরিচ চাষের লক্ষ্য মাত্রা প্রায় অর্জনের পথে। কারণ মরিচের দাম ভালো থাকায় মরিচ চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। এছাড়া আবহাওয়া অনুকূল থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। মরিচের ভালো দাম পেয়েও খুশি হয়েছেন চাষিরা। উপজেলা কৃষি অফিস মরিচ চাষিদের বিভিন্ন ধরণে পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে।