বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঢাকার ধামরাই ও সাভার আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় মাদক সন্ত্রাসীদের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে, এতে চুরি ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেড়েই চলেছে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে মাদক সেবনকারীরা। মাদক সন্ত্রাসীরা শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানারকম মাদকদ্রব্য অবাধে বিক্রি করছে আর এদের সহায়তা করে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য। মাদক সেবন করে অনেকেরই অকালে মৃত্যু হচ্ছে।
জানা গেছে,আশুলিয়ার জামগড়া উত্তর মীর বাড়ির বাসিন্দা তাজিবুল মীর (৩১) কে মদ সেবন করানোর কারণে মৃত্যু হয়, দোষীদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় গত ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ইং তারিখে একটি মামলা দায়ের করেছেন নিহত তাজিবুল মীরের বাবা ওয়াহিদ মীর। মামলা নং ৩৯। তারিখ ১৮/০১/২৩ইং। ঢাকার আশুলিয়ায় ও টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানায় একাধিক মাদক মামলার আসামী মোছাঃ নুর জাহান ওরফে ফিরোজা বেগম (৪০) এর দাপটে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার শক্তিশালী মাদকের সিন্ডিকেট রয়েছে। মাদক ব্যবসা ও অসামাজিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে। অন্যজন আশুলিয়ার জামগড়া উত্তর পাড়ার মোঃ ওয়াহেদ মোল্লা’র ছেলে মাদক ব্যবসায়ী মোঃ শরিফুল ইসলাম (ওরফে শরিফ মোল্লা) সহ এলাকার মাদক সন্ত্রাসীদের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসী জানায়, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। শরিফুল ইসলাম শরিফ মোল্লার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ, জিডি বা মামলা করা হলে তার তদবির করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ম্যানেজার পরিচয়ে মুজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী। এতে পুলিশ প্রশাসন ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাজে বাধা সৃষ্টি করা হয়।
আশুলিয়ার অনেকেই জানান, মাদক ব্যবসায়ীরা শক্তিশালী তাই তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে চায়না। অনুসন্ধান করে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দড়িসয়া গ্রামে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে হাতে নাতে গাঁজাসহ ফিরোজা বেগমকে আটকের পর দুই বছরের সাজা প্রদান করেন। গাঁজা সেবন ও নিজ হেফাজতে গাঁজা সংরক্ষণ যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ সালের ৩৬ (১) এর ২১ ধারা লঙ্ঘন ও দণ্ডনীয় অপরাধ। এই ধারা মতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ২ (দই) বৎসর বিনাশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়। এদিকে আশুলিয়ার জামগড়া উত্তরপাড়ার শরিফুল ইসলাম শরিফকে ডিবি পুলিশ কতৃর্ক আটক করে তার হেফাজত থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। তিনি ওই মামলায় জামিনে এসে আবারও সক্রিয় মাদক ব্যবসা করছে এবং বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। সেই সাথে জমি ক্রয়—বিক্রয় করা নিয়ে মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে শরীফ মোল্লার বিরুদ্ধে। সে স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তার সাথে আরও ৬—৭ জনের গ্রুপ রয়েছে, এই ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না বলে এলাকাবাসী জানায়।
জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুরের দড়িসয়া গ্রামের আলী আকবরের স্ত্রী মোছাঃ নুর জাহান ওরফে ফিরোজা বেগমের বিরুদ্ধে ঢাকার আশুলিয়া থানাসহ বিভিন্ন থানায় মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে। এবারের গল্পটাই যেন ভিন্ন: স্বামী একজন রিক্সা চালক আর স্ত্রী বাসা বাড়িতে কাজের বোয়া থেকে এখন বিশাল প্রভাবশালী মাদক সিন্ডিকেটের পরিচালনাকারী নারী ফিরোজা বেগম। তিনি এখন টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুরের দড়িসয়া গ্রামে ইটের দালানকোঠা তৈরি করে বাড়িতে চারসাইড দিয়ে লাগিয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এলাকাবাসীর দাবি—সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দেখে তার বাড়িতে কারা কখন আসছে, প্রতিবেশি কেউ তার বাড়িতে প্রবেশ করলে তাকে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করাসহ মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। অনেকেরই প্রশ্ন: কি তার উপার্জন আর কি বা তার ব্যবসা? দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানে উঠে আসে কে এই নুর জাহান ওরফে ফিরোজা বেগম। জানা গেছে, একজন দিনমজুর আলী আকবরের অপ্রতিরোধ্য স্ত্রী ফিরোজা বেগম মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করেন, এরপর এখন ক্ষমতাধরের খাতায় নাম লিখেছে মাদক ব্যবসা ও অনৈতিক কর্মকান্ডকে পুঁজি করে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইলের দড়িসয়া পাড়া গ্রামের একবেলা খেয়ে আর অন্যবেলা না খেয়ে অনাহরে অর্ধাহারে থাকা সেই দিনমজুর স্বামী আলী আকববসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে ফিরোজা বেগম কাজের উদ্দেশ্যে ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার মোশারফ ম্যানশন নামের একটি বাড়ির কক্ষ ভাড়া নিয়ে ওই বাড়ির মালিকের বিশাল ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে প্রায় ১০বছর ধরে বিভিন্ন মাদক ব্যবসা করে আসছিলো। সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় তিনি এই মাদকের কারবার করে লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছেন। এলাকাবাসী জানায়, ফিরোজা বেগমের মাদকের বিশাল শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে, দেশের সীমান্ত দিয়ে আসা বিদেশী মদ, ইয়াবা ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক তার মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় চালান পাঠানো হয়। ২০১২ সালে সিরাজগঞ্জ, ২০১৭ সালে আশুলিয়া, ২০২১ইং সালে টাঙ্গাইলে মাদকসহ হাতে নাতে আটক হয় ফিরোজা বেগম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অনেকবার গ্রেফতার হলেও আইনের ফাঁকফোকড় দিয়ে তিনি ও তার দুই ছেলে কৌশলে বেড়িয়ে এসে ক্ষমতা ও টাকার দাপটে অবাধে চালাচ্ছে তাদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড।
এলাকাবাসী—মাদককে না বলে পৃথক ভাবে একাধিকবার মাদক বিরোধী মিছিল ও মানববন্ধনসহ সাংবাদিক সম্মেলন করেন। মাদক নিমূর্লের দাবিতে সামাজিক ভাবে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন তারা। মাদক ব্যবসায়ীদের দ্বারা ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা বন্ধের জন্য সামাজিক প্রতিরোধে এলাকার যুবসমাজকে বাঁচাতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন এলাকাবাসী। এ বিষয়ে দড়িসয়া গ্রামের ইউপি সদস্য (মেম্বার) আব্দুস সামাদ বলেন, পূর্বের ইতিহাস তারা আগে জামগড়ায় থাইকা কাম কাজ করছে। ১৫—১৬ বছর যাবতসেখানেই থাকতো তারা। তার দুই ছেলে বিভিন্ন মাদকসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে একাধিকবার, ফিরোজা বেগমও গাঁজাসহ আটক হয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে দুই বছরের সাজা দেন। তিনি আরও বলেন, এই ফিরোজা বেগমের পরিবারের লোকজন সবাই এখন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন।
উক্ত বিষয়ে জানতে সরেজমিনে গিয়ে আশুলিয়ার জামগড়া ও টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুরের দড়িসয়া গ্রামে মোছাঃ নুর জাহান ওরফে ফিরোজা বেগমের বাড়িতে তাকে পাওয়া যায়নি। পুলিশ ও র্যাব জানায়, অপরাধী সে যেই হোক না কেন তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য ও কিছু কথিত সাংবাদিক মাদকের সাথে জড়িত থাকার কারণে মাদক সন্ত্রাসীরা অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা।