হেলাল শেখঃ ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) কমিশনার অতিরিক্ত আইজিপি জনাব হাবিবুর রহমান কি ভাবে হলেন মানবতার ফেরিওয়ালা? তিনি অভিমত প্রকাশ করেন যে, পিছিয়ে থাকা বেদে ছোটো জাতের নয়, তারাও মানুষ। তাদেরও নিজস্ব একটি ভাষা আছে যা পৃথিবীর অনেক দেশের নেই, অনেক জাতি গোষ্ঠীর নেই তাদেরকে অবহেলা না করে আসুন তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই বলে এমনই অভিমত প্রকাশ করেছেন, বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক, মানবতার ফেরিওয়ালা, পুলিশ বাহিনীর গর্ব, প্রকৃত সাংবাদিকদের বন্ধু হাবিবুর রহমান (হাবিব)-বাকিটা ইতিহাস।
জানা গেছে, জনাব মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান হাবিব সাহেব মানবতার ফেরিওয়ালা হওয়ার কারণ, বেদে ও হিজড়াসহ সাধারণ মানুষের বন্ধু তিনি। উল্লেখ্য গত (২২ ফেব্রæয়ারি ২০২২ইং) তারিখ বিকেলে বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এর সভাপতিত্বে দেশ বরেন্য গুনিজনের উপস্থিতিতে বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক সেইসময়ের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি জনাব হাবিবুর রহমান, বিপিএম (বার) পিপিএম (বার) রচিত বাংলাদেশের গ্রন্থ “ঠার’ বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা” বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানের শুরুতে কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ জনাব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষনা করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবি কামাল চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে বইটির মোড়ক উম্মোচন করেন। এসময় দেশের সুনামধন্য লেখক গবেষক গুণীজন এবং ঢাকা রেঞ্জসহ ডিএমপি ও বিভিন্ন ইউনিটের পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি মাদকাসক্তদের সুস্থ জীবনে ফিরতে হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন এবং সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাদকাসক্তদের সুস্থ জীবনে ফিরতে ‘ওয়েসিস’ এক মরুদ্যান বলে মন্তব্য করেছেন তখনকার ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি (উপ মহাপরিদর্শক) হাবিবুর রহমান। মাদকাসক্তদের সু-চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র ‘ওয়েসিস’ মরুভূমিতে যেন এক মরুদ্যান বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। হাবিবুর রহমান বলেছেন, ‘মাদকের ভয়াবহ ছোবলে আমাদের তরুণ সমাজের অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তাদেরকে মাদকমুক্ত করে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এজন্য মাদক নিরাময় ও পূনর্বাসন কেন্দ্র ‘ওয়েসিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সত্যিকার অর্থেই এ যেন মরুভূমিতে এক মরুদ্যান।’ এর আগে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে ‘ওয়েসিস’ এর উদ্বোধন করা হয়। মাদকাসক্তদের সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ করা হয়। সেসময়ের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি বর্তমান ডিএমপি কমিশনার অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান ‘ওয়েসিস’ এর পরিচালনা পরিষদের সভাপতি।
উক্ত ওয়েসিস উদ্বোধনকালে হাবিবুর রহমান মাদককে একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে সামাজিক ভাবেই এর সমাধান করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটি স্থাপনের পটভূমি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মাদকের ভয়াবহ ছোবলে পড়ে আমাদের তরুণ সমাজের অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তাদেরকে মাদকমুক্ত করে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আইজিপি মহোদয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনা ও তত্ত¡াবধানে আমরা ওয়েসিস করেছি। তিনি আরও বলেন, ‘মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্বলিত সাততলা ভবনের ৬০ শযয্যার ওয়েসিস মনোরোগ চিকিৎসক, সাইকোলজিস্ট, সাইকোথেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, ইয়োগা এক্সপোর্ট এবং অ্যাডিকশন কাউন্সেলরদের মাধ্যমে বিশ্বমানের সমম্বিত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। এখানে পুরুষ এবং মহিলা রোগীর জন্য পৃথক ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া ওয়েসিস-এর চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক তদারকি, স্বতন্ত্র কাউন্সেলিং সেশন, উন্নতমানের শরীর চর্চা কেন্দ্র, বিনোদন সুবিধা, ইনডোর ও আউডডোর গেমস, কর্মমূখী প্রশিক্ষণ ও জীবনধর্মী শিক্ষামূলক নানা আয়োজনের ব্যবস্থা আছে সেখানে। মাদকাসক্তদের সু-চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ‘ওয়েসিস’ যেন সত্যিকার অর্থেই মরুভূমিতে এক মরুদ্যান।’ এর আগে দুপুরে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটির উদ্বোধন করা হয়।ওই সময়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আরও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আজিজুল ইসলামসহ আরও অনেকে। এই অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে মাদক তৈরি হয় না কিন্তু আমরা এর ভয়াবহতার শিকার। মাদক থেকে যদি যুবসমাজকে বিরত না রাখি তাহলে এর পরিণতি কী হবে তা আমরা দেখেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খা বাহিনীর চৌকস অফিসারদের অভিযান পরিচালনা করে আমরা মাদক সন্ত্রাস ও জঙ্গি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করে সফল হচ্ছি। এখন মাদকের বিরুদ্ধেও আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, ‘যারা মাদকাসক্ত তাদের জীবনে কি হবে? আমরা তাদেরকে সুস্থ জীবনে ফিরাতে চিকিৎসা দিতে চাই। পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ‘ওয়েসিস’ স্থাপনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন মন্ত্রী।
এর আগে গত বছর শীতে এই পুলিশের কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান তাঁর নিজস্ব অর্থায়নে উত্তরণ ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে ঢাকা বিভাগের রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনকর্মীদের মাঝে বিপুল পরিমাণ কম্বল বিতরণ করেন। (১৬জানুয়ারি ২০২১ইং) দুপুরে রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান এর উপস্থিতিতে এসব কম্বল বিতরণ করা হয়। এ সময় পুলিশ সুপার বলেন, অসহায় যৌনকর্মীদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলার দিন শেষ। তারা সুবিধা বি ত, তাদের এই দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে কেউ কোনো ফায়দা লুটতে চাইলে তার পরিণতি ভালো হবে না। তিনি সবাইকে সাবধান করে দেন, আরও বলেন, আপনারা সাবধান হোন। রাজবাড়ী জেলার সাধারণ মানুষদেরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখতে প্রয়োজনে সকল পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হবে, দুষ্টু প্রকৃতির অনেক মানুষ আছেন এই জেলায়, কিন্তু তাদেরকে আগে থেকেই সাবধান করে দিচ্ছি, “হয় আপনারা থাকবেন না হয় রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপার থাকবে” সময় আছে এখনো আপনারা খারাপ পথ থেকে বের হয়ে এসে সাধারণ ভাবে জীবন যাপন করুন।
দৌলতদিয়ায় ১৩শ’ (১৩০০) শীতার্ত যৌনকর্মীকে কম্বল দেন ওইদিন। এই কম্বল বিতরণের সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি লাভলী চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সালাউদ্দিন, শেখ শরীফ-উজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল), গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ-আল তায়াবীর, দৌলতদিয়া পূর্বপাড়া অসহায় নারী ঐক্য সংগঠনের সভানেত্রী ঝুমুর বেগম, দৌলতদিয়া মুক্তি মহিলা সমিতির চেয়ারম্যান মর্জিনা বেগমসহ জেলা, থানা পুলিশ অফিসারগণসহ আরও উপস্থিত ছিলেন অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য। এ সময় শীতার্ত যৌনকর্মীরা কম্বল হাতে পেয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়ে সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন। উল্লেখ্য যে, তিনি গোয়ালন্দ উপজেলার তেনাপচা ইউনিয়নে ইতি মধ্যে যৌন পল্লীর অসহায় মানুষদের আয় রোজগারহীন যৌনকর্মীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেছেন। জনাব হাবিবুর রহমান কেন মানবতার ফেরিওয়ালা তা বুঝতে বাকী নেই প্রিয় পাঠকগণ। তবে ঢাকার আশুলিয়ায় মাদক সন্ত্রাসী শরিফুল ইসলাম মোল্লা নামের এক মাদক কারবারির পক্ষে কাজ করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ম্যানেজার পরিচয়দানকারী মুজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী। এতে পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করা হয়। বাংলাদেশে পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান চাচ্ছেন মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে কিন্তু কিছু ব্যক্তি অনৈতিক কর্মকান্ড করায় তা সম্ভব হচ্ছে না। জনাব হাবিবুর রহমান হাবিব সাবেক ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার-অতিরিক্ত ডিআইজি, এরপর ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, বর্তমানে (ডিএমপি) কমিশনার অতিরিক্ত আইজিপি মহোদয়। তিনি গরীবের বন্ধু, সাদা মনের মানুষ, মানবতার ফেরিওয়ালা-বাকিটা ইতিহাস। তিনি কি শুধুই একজন পুলিশ? পিছিয়ে থাকা বেদে সম্প্রদায়কে সাড়ে চার শ বছরের গøানিময় জীবন থেকে মুক্ত করে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে এনেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা জনাব হাবিবুর রহমান। তার উদ্যোগে সাভারের বেদে পল্লীতে এখন মাদ্রাসা ও স্কুল হয়েছে। সেখানে শিশুরা লেখাপড়া শিখতে পারছে। বিশেষ করে “উত্তরণ ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় একেবারে কোণঠাসা বেদে সম্প্রদায় সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে সাফল্য বয়ে আনার সুযোগ পেয়েছে এই গর্বিত পুলিশ কর্মকর্তার জন্য সাধারণ মানুষ ধন্য।