নিজস্ব প্রতিনিধি, আনোয়ার হোসেন
যশোর: যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনীহার কারণে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে স্বল্প খরচে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হতো দরিদ্র সাধারণ রোগীরা।
সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ১৩ জুন হাসপাতালটিতে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা চালু করা হয়। এই সময়সূচিতে ৪২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিভিন্ন বিভাগের রোগীদের সেবা দিয়ে আসছিলেন। প্যাথলজি বিভাগ থেকেও রোগ নির্ণয়ের জন্য দেয়া হতো সাশ্রয়ী মূল্যের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা সুবিধা।
বৈকালিক এই সেবায় ছয়জন মেডিসিন, একজন নিউরোমেডিসিন, একজন নেফ্রোলজি, তিনজন কার্ডিওলজি, একজন রিউমাটোলজি, একজন সাইকিয়াট্রি, তিনজন অর্থোপেডিক সার্জন, চারজন সার্জারি, তিনজন নাক-কান-গলা, সাতজন গাইনি, ছয়জন শিশু ও ছয়জন চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োজিত ছিলেন। অল্প ফিতে রোগী দেখার ফলে সাধারণ মানুষের কাছে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
তবে অভিযোগ রয়েছে, বেশ কিছু চিকিৎসক নিজেদের ব্যক্তিগত চেম্বারে অধিক আয় নিশ্চিত করতে হাসপাতালে বিকেলবেলার দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখাতে থাকেন। অনেকেই নিয়মিত হাসপাতালে না এসে সহকারীদের মাধ্যমে রোগী সামলানোর ব্যবস্থা করতেন। শেষ পর্যন্ত চলতি মে মাস থেকে পুরো বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
গত বৃহস্পতিবার হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ চিকিৎসক চেম্বার তালাবদ্ধ, কর্মচারীরাও অনুপস্থিত।
রোগীদের অভিযোগ, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে কিছু চিকিৎসক একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে বৈকালিক সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, বিকালে হাসপাতালে ডিউটি থাকলে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা সম্ভব হয় না—এটাই তাদের মূল আপত্তি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, "বৈকালিক সেবার মাধ্যমে গরিব মানুষ সুলভে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছিলেন। আমি দায়িত্বে আসার পর বহুবার চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, কিন্তু তারা দায়িত্ব পালনে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা না থাকায় আমরা প্রশাসনিকভাবে তাদের বাধ্য করতে পারছি না।"
স্থানীয়রা সরকারের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে এই গুরুত্বপূর্ণ সেবাটি পুনরায় চালু হয় এবং সাধারণ মানুষ সুলভে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা পেতে পারে।