মারুফ সরকার, স্টাফ রিপোর্টার: রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ অন্তর্বর্তী সরকারকে ২৪ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ কংগ্রেস। শনিবার (১৭ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উন্মুক্ত সংবাদ সম্মেলন করে এ প্রস্তাব দেয় দলটি। সংবাদ সম্মেলনে দলটির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, রাষ্ট্রে কিছু মৌলিক সংস্কার দরকার, যা কোন রাজনৈতিক সরকার করতে চায় না। এখন জনগণের সামনে সময় এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়ে কাজগুলো করিয়ে নেয়ার। দেশের বিচার, প্রশাসন, অর্থ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার দরকার। আমাদের নবীন শিক্ষার্থীরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে তার জন্য বিভিন্ন খাতে কিছু পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে হবে; যাতে দুর্নীতি শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা যায়। রাষ্ট্রীয় সংস্কারের সাথে সাথে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গী ও মানসিকতার পরিবর্তনের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এই সময় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারে ২৪ দফা প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ কংগ্রেসের নেতারা। তাদের দেওয়া প্রস্তাব গুলো হলো, ১. নতুন নির্বাচন কমিশন আইন ও বিধি প্রণয়ন করতে হবে। ২. বিসিএস ক্যাডারদের সমমানে নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে এবং তাদের মধ্য থেকে ধারাবাহিক পদোন্নতির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করতে হবে। ৩. নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব বিধি দ্বারা কমিশনের সকল নিয়োগ, বদলী ও পদোন্নতি পরিচালিত করতে হবে। ৪. নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী এবং নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্বমুক্ত করতে হবে। ৫. জেলা প্রশাসকদের পরিবর্তে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদেরকে রিটার্নিং অফিসার এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদেরকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করতে হবে। ৬. অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে নির্বাচন দিতে হবে। ৭. বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত, স্বাধীন ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। ৮. সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে আলাদা বিধি প্রণয়ন করে উচ্চ ও নিম্ন অলাদতে পেশাগত দক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে বিচারক/বিচারপতি ও আইন কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। ৯. নিয়োগ/পদোন্নতির ক্ষেত্রে জেষ্ঠ্যতার ব্যত্যয় বন্ধ করতে হবে। ১০. ইউনিয়ন পর্যায় থেকে প্রশাসনিক স্তর বিন্যাস ও সার্বিক বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। ১১. অবৈধভাবে অর্জিত যে কোন সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। অন্যান্য প্রস্তাবগুলো হলো, ১২. সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, র্যাবসহ সকল বাহিনীকে রাষ্ট্রপতির অধীনে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে এবং স্ব স্ব চাকুরি বিধি দ্বারা নিয়োগ, বদলী ও পদোন্নতি পরিচালিত হতে হবে। ১৩. কোন ব্যক্তি দুই বারের অধিক রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান থাকতে পারবেন না। ১৪. দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী করতে হবে। ১৫. সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে। ১৬. ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বাদ দিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে হবে। ১৭. অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন এবং অন্যান্য আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের মতামত গ্রহন করতে হবে। ১৮. সরকারী, আধা সরকারী ও শ্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। ১৯. সরকারকে অবগত না করে বিদেশে কোন সম্পদ করলে বা গচ্ছিত রাখলে সমপরিমাণ অর্থ জরিমানার বিধান করতে হবে। ২০. ঋণখেলাপী- ঋণজালিয়াতীসহ ব্যাংকিং খাতের সব ধরণের অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ব্যাংক মনিটরিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। ২১. ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্ষদ গঠনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। ২২. শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্ত আনতে হবে এবং কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। ২৩. ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে জাতী মানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ২৪. চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিদেশগামীতা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে এবং সকল প্রকা চিকিৎসা সেবা ও ওষুধের মান বৃদ্ধি ও মূল্য কমাতে হবে। উন্মুক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব এ্যাডভোকেট মোঃ ইয়ারুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মোঃ শফিকুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুল আওয়াল, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোঃ মিজানুর রহমান, ন্যাশনাল সিনেট সদস্য এ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রশিদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিব সম্পাদক মোঃ নাজমুল মোর্শেদ প্রমুখ।