নিজস্ব প্রতিবেদক :
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ছাত্রলীগ নেতা ‘সরকারি বরাদ্দের চাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাল’ বলায় ইউপি চেয়ারম্যান এবং ছাত্রলীগ নেতা আরমান দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতার প্রশ্নের প্রতিউত্তরে হাসান মাকসুদ মিজান বলেন, সরকারি চাল, জেলেদের চাল এই চাল বরাদ্দ করা হয়েছে জেলেদের জন্য। অন্য কেউ নেওয়ার সুযোগ নেই, এই চাল প্রধানমন্ত্রী অসহায় জেলেদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) উপজেলার বড়খেড়ি ইউনিয়নের মাহমুদা উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরমান হোসেন বিজয়কে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলেন আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মাকসুদ মিজান ।
হাসান মাকসুদ মিজান রামগতি উপজেলার বড়খেড়ি ইউনিয়ন পরিষদের দুই বারের সফল বিজয়ী চেয়ারম্যান। তিনি একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সভাপতি। তার বাবা সাবেক দুই দুই বার সফলতার সাথে বড়খেড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
অডিও বক্তব্যে শোনা যায়, ইউনিয়ন ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে বিজয়ী ভূমিকা রেখে আসছেন চেয়ারম্যান হাসান মাকসুদ মিজান। তবে ভুল বোঝাবুঝির মধ্য দিয়ে চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের নেতা হয়েও তাকে কোনো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন না বলে এ কর্মী অভিযোগ করেন।
একপর্যায়ে বিজয় চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ করে বলে ওঠেন, ‘আমি ছাত্রলীগ করেও কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি না। আপনারা যাদের সুযোগ-সুবিধা দেন তারাই মিছিলের সামনে থাকে। তারা মাথায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া চালের বস্তা নিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রীর নামেই খারাপ খারাপ কথা বলে। এমন লোক সহযোগিতা পেলেও আমি পাচ্ছি না। আমাকে একটা কার্ড দিলে কি আমি খেয়ে ফেলবো? আমি তো আশপাশের লোকজনকে সহযোগিতা করতে পারি।’
তার এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে ইউপি চেয়ারম্যান হাসান মাকসুদ মিজানকে বলতে শোনা যায়, শেখ হাসিনা কি নিষেধ করেছে কাউকে চাল দিতে? কোনটা শেখ হাসিনার চাল? আরমান বলে ওঠেন, সরকারি চাল। তখন মিজান বলেন, সরকারি চাল কি শেখ হাসিনার চাল? আরমান তোমার বয়স যখন ৬ বছর, তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগের দুঃসময় বা খারাপ সময় দেখেছো? জন্মের পর থেকেই আওয়ামী লীগের সুসময় দেখছো। আওয়ামী লীগের ক্ষমতা আর ক্ষমতা। আমি বড়খেড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এখানে আওয়ামী লীগ করতে গিয়ে নানান প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। পরিষদ শুধু আওয়ামী লীগের নয়। পরিষদ আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াতসহ সব নাগরিকের। এখানে সবাই সুযোগ পাবে। তুমি (ছাত্রলীগ নেতা) কেন পরিষদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেছো? আমার বিরুদ্ধে তোমার অভিযোগ থাকতে পারে। তুমি আমার বিরুদ্ধে লিখতে পারতে। পরিষদের বিরুদ্ধে লেখা তোমার উচিত হয়নি। তোমার কোনো কিছু প্রয়োজন হলে আমিসহ অন্যান্যদের বলতে পারতে। ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ তোমাকে লিজ দেওয়া হয়নি। তুমি যদি একটি ইউনিটের নেতা হয়ে কেন্দ্রীয় নেতার মতো লেখালেখি করো তা তো হবে না। এ অধিকার তো তোমাকে কেউ দেয়নি।’
এ বিষয়ে মাহমুদা উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরমান হোসেন বিজয় বলেন, ‘আমি দলের পক্ষে কিছু কথা বলেছি। এজন্যই চেয়ারম্যান আমাকে এসব কথা বলেছেন। তবে অডিও রেকর্ডিংটি কে করেছেন তা জানা নেই।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বড়খেড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মাকসুদ মিজান বলেন, ‘একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক হয়ে এ ধরনের কোনো কথাই আমি বলতে পারি না। এ ঘটনা আমার মনে পড়ছে না।’ তবে একটি কথায় বলতে চাই সেটি হলো, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নৌকা পেয়ে নির্বাচন করেছি। দুই দুই বারের চেয়ারম্যান হয়েছি। আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে কি ভাবে এই কথা বলি। জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল জেলেরা নিবে। এখানে অন্যরা কিভাবে নিবে? এই ইউনিয়ন পরিষদের যারা জেলে আছেন তাদের জন্য এই চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। আমি এই চাল কি ভাবে তাকে দিবো? আমাকে জনগণ ভালোবাসে, আমিও জনগণকে ভালোবাসি। এই ক্ষেত্রে জনগণের চাল আমি তাকে কি ভাবে দিবো? সেটা আমাকে বলেন।
বড়খেড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শিরুফ দাস বলেন, আরমান যে বিষয়টি বলে, আসলে তা কি ভাবে বলে। এখানে জেলেদের চাল সে কি ভাবে নিবে। আমি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েও কখনো এই ভাবে চাইনি। সে কি ভাবে চায়? ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান মাকসুদ মিজান তিনি দলের জন্য কষ্ট করেছেন। তিনি দলের প্রতি এমন খারপ মন্তব্য কখনো করেনি। আমাদের নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দূর করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিজয় করতে হবে।
রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদ বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। আমি শুনিনি।