হেলাল শেখঃ ঢাকার সাভারে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে সাভারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ কার্যালয় থেকে রহস্যজনক ভাবে ১৪৯টি গ্যাস মিটার চুরি হয়েছে। এসব মিটার বিভিন্ন সময় শিল্পকারখানা, বহুতল ভবন ও হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে খুলে এনে সংরক্ষণ করা হয়েছিলো। তবে তিতাস কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, এই চুরির সঙ্গে তাদের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী জড়িত নয়।
বৃহস্পতিবার (৮ মে ২০২৫ইং) সরেজমিনে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ে নীরবতা বিরাজ করছে। অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী অনুপস্থিত, চেয়ার-টেবিল ফাঁকা। উপস্থিত কেউই মিটার চুরির বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। কেউ বলেন “শুনেছি”, কেউ আবার জানান “এই দপ্তর আমার নয়”।
তিতাস গ্যাসের জোনাল বিপণন অফিসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী তৌফিক এলাহী সবুজ গণমাধ্যমকে বলেন, “আপনারা যতটুকু শুনেছেন, আমিও ততটুকুই শুনেছি। এর বেশি কিছু জানি না। এই দপ্তর আমার অধীনে নয়।” তবে তিনি কোন দপ্তরের অধীনে বিষয়টি, সেটাও নিশ্চিত করতে পারেননি।
মিটার পরীক্ষানিরীক্ষার দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী রতন চন্দ্র প্রধান জানান, “চুরি যাওয়া মিটারগুলো ‘রোটারি মিটার’ নামে পরিচিত। এসব মিটার সাধারণত শিল্পকারখানা, বহুতল আবাসিক ভবন এবং হোটেল-রেস্তোরাঁয় ব্যবহৃত হয়।” তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি।
তিতাস গ্যাস কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রধান হাবিল উদ্দিন বলেন, “দুই দিন আগে অফিস থেকে চুরির বিষয়টি জানতে পেরেছি। এর আগে কিছুই জানতাম না।” তিনি চুরির স্থান দেখিয়ে দিলেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেই স্থানটি উঁচু সীমানা প্রাচীর ও কাঁটাতারের ঘেরায় বেষ্টিত। এমন কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ১৪৯টি মিটার কিভাবে চুরি হলো এবং এসব বহন করতে হলে যে ছোট ট্রাক প্রয়োজন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তর এড়িয়ে যান।
তিতাস গ্যাস আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (আরএমএস ইঞ্জিনিয়ারিং, টেস্টিং অ্যান্ড সিলিং শাখা) প্রকৌশলী আবদুল্লাহ হাসান আল মামুন বলেন, “চুরি যাওয়া মিটারগুলো বিভিন্ন সময় শিল্পপ্রতিষ্ঠান, হোটেল ও বহুতল ভবন থেকে খুলে এনে রাখা হয়েছিল। সব মিটারই অকেজো এবং ডাম্পিংয়ের জন্য ঢাকার ডেমরায় পাঠানোর প্রক্রিয়ায় ছিলো। গত ৪ তারিখের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চুরির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। একজন ব্যক্তিকে ফুটেজে দেখা গেছে। তবে গাড়ি ছাড়া একজন ব্যক্তি কীভাবে ১৪৯টি মিটার নিয়ে গেলো?, সেই প্রশ্নে তিনি দাবি করেন, আমাদের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এতে জড়িত নয়, ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, এক্সপার্ট দিয়ে বিশ্লেষণও চলছে।”
এ ঘটনায় তিতাসের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং তারা বিষয়টি দেখছে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী মামুন। সিদ্ধান্ত এলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সাভারে মিটার চুরির বিষয়ে মুটো ফোনে জানতে চাইলে গাজীপুরের মিটার সেকশন ডিজিএম বোরহান উদ্দিন বলেন, মিটার চুরির ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, একই স্থানে ৮-১০ বার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে সরকারের ৮ থেকে ১০ লক্ষাধিক টাকা লোকসান হয় এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,গ্যাস অফিসে যার যার আলাদা সেক্টর রয়েছে, কেউ অনিয়ম দুর্নীতি করলে তদন্ত কমিটি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন কর্তৃপক্ষ। উক্ত তিতাস অফিসের অনিয়মে সরকারের কোটি কোটি কোটি রাজস্ব হারাচ্ছে, এ ব্যাপারে ধারাবাহিক ভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।