বিশেষ প্রতিনিধি-হেলাল শেখঃ ঢাকার সাভার আশুলিয়ায় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে পুলিশের উপর্যুপরি গুলিতে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মারা গেছেন নারীসহ ৯ জন।
মঙ্গলবার ৬ আগস্ট সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আশুলিয়া থানার পাশে ফুটওভার ব্রিজে ঝুঁলছে দুইজন মানুষের লাশ, বিভিন্ন স্থানে আগুনে পুড়ে যাওয়া লাশের লাশের দুর্গন্ধ বেড় হচ্ছে, কতজনের মৃত্যু হয়েছে তার হিসাব নাই।
সাংবাদিক খোকা চৌধুরী ও সাংবাদিক এনামুল হক এবং শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষসহ দুই শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদেরকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে ধামরাই থানায় আগুন দিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা।
গতকাল বিকালে সাভার থানা থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা পালিয়ে গেলে থানার সামনে বিভিন্ন যানবাহন ও ভবনে আগুন দেওয়া হয়। সাভার থানার দিকে অগ্রসরমান হাজারও জনতার মিছিলে পুলিশ উপর্যুপরি গুলি ছোড়ায় বেড়েছে নিহতদের সংখ্যা।
জানা গেছে, সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে আশুলিয়া থানার বাইপাইল থেকে সাভার থানা রোড পর্যন্ত। উন্মুক্ত জনতা আশুলিয়া থানার দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। সেখানেও গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান মাছ ব্যবসায়ী রমজান (৪০)সহ দুইজন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ ও ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুপুরে আন্দোলনকারীরা ঢাকার দিকে অগ্রসর হলে সাভার বাজারের বাসস্ট্যান্ডে সূচনা হয় সংঘর্ষের। তার আগে পরিস্থিতির বাছবিচার না করেই কারফিউ ভঙ্গ করে বাইরে কেন- এই অপরাধে নির্বিচারে গুলি ছোড়ে পুলিশ।
এতে গুলিবিদ্ধ হন মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সাংবাদিক সৈয়দ হাসিবুন্নবীসহ অর্ধশতাধিক। এদের মধ্যে এক তরুণীসহ তিনজন মারা যান এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। একপর্যায়ে পুলিশ পিছু হটলে ক্ষুব্ধ জনতাও তাদের ধাওয়া করে। এ সময় আত্মরক্ষার্থে থানা রোডের পুলিশ হাউজিংয়ের বহুতল ভবনে আশ্রয় নিলে ক্ষুব্ধ জনতা তাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় জনতাকে লক্ষ্য করে ভবনের ওপর থেকে গুলি ছোড়া হলে গুলির মুখেই জনতা ওই ভবনে উঠে পড়ে।
এ সময় উপর্যুপরি গুলিতে মারা যান আরও ৫ জন। অন্যদিকে ক্ষুব্ধ জনতার আরেকটি অংশ থানা অভিমুখে অগ্রসর হলে সেখান থেকে গুলি ছুড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। স্রোতের মতো গুলিবিদ্ধরা আসতে থাকেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দেড় শতাধিক গুলিবিদ্ধ মানুষকে একযোগে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ধামরাই থানা পুড়িয়ে দেওয়া ও সাভার থানা আক্রান্ত হবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।
থানায় আক্রান্ত একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, সেনাবাহিনীর সাহায্য চাওয়া হয়েছে। সেটা না পেয়ে এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে একটি ট্রাকে করে পালিয়ে যান সাভার মডেল থানার কর্মকর্তারা।
এদিকে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফকরুল আলম সমর, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু আহমেদ নাসিম পাভেল, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন আহমেদ টিপুর বাড়িতে আগুন দিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা।
গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাভার মডেল থানার ৪০-৫০ জন পুলিশ ১২টি গাড়ি নিয়ে সাভার থেকে শিমুলতলা হয়ে উত্তর দিকে চলে যায়। এ সময় তারা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করেও গুলিবর্ষণ করতে থাকে পুলিশ। এতে কতজন হতাহত হয়েছেন তা জানা যায়নি। তিন থানা ভাঙচুরের পর ব্যাপক উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইজুড়ে। এদিকে খবর নিয়ে জানা যায়, আশুলিয়া থানা পুলিশ থানা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
মঙ্গলবার ৬ আগস্ট ২০২৪ইং তারিখে দুপুর ১২টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আশুলিয়ার বাইপাইলে থানার আশপাশে মানুষের অনেক লাশ পড়ে আছে এবং ফুটওভার ব্রিজে ঝুঁলছে লাশ। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভিন্ন বিএনপি’র নেতাকর্মী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা যায়।