হেলাল শেখঃ সারাদেশে বেকার মানুষদের টার্গেট করে ডিজিটাল প্রতারক চক্র বিভিন্ন ভাবে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা, এক দুইজনকে পুলিশ ও র্যাব কর্তৃক আটক হলেও বাকি প্রতারকরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে, যাদের আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়, কিছুদিন পর জামিনে এসে আবারও সেই প্রতারণামূলক কর্মকান্ড করে তারা।
রাজধানীসহ ঢাকার সাভার আশুলিয়ায় ই-কর্মাসে ব্যবসায় বিনিয়োগের নামে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইনে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারক চক্র কর্তৃক পোশাক শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে সুন্দরী নারী ও পুরুষ লোকজনকে লোভ দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ ও কোটি কোটি টাকা। এইসব প্রতারক চক্রের প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ দুই চার জনকে পুলিশ ও র্যাব গ্রেফতার করলেও তারা আদালত থেকে জামিনে এসে আবারও নতুন নতুন কৌশলে তাদের প্রতারণামূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, এর আগে জাতীয় সেবা ‘৯৯৯’ নাম্বার থেকে ফোন পেয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশ আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদ এর পাশে নরসিংহপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে জনতার সহযোগিতায় দুইজন প্রতারককে আটক করেন এবং আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়ে হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো-মাদারীপুর জেলা সদর থানার পাঁচখোলা গ্রামের আলী হোসেন মৃধার ছেলে প্রতারক চক্রের মূলহোতা মোঃ ইলিয়াস মৃধা (৩৬), ঝালকাঠি জেলার সদর থানার দক্ষিণ মানকশা গ্রামের আব্দুল জলিল মিয়ার ছেলে মোঃ জাহিদুল ইসলাম (৩২)। আশুলিয়া থানার মামলার আরও আসামী পলাতক রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামী ইলিয়াস মৃধা’র স্বাধীন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনলাইনে স্বাধীন ই-কমার্স নামে প্রতিষ্ঠান চালাতো কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি গ্রেফতারকৃতরা। এই অনলাইন ডিজিটাল প্রতারক চক্রটি আশুলিয়ার সবচেয়ে বড় একটি পোশাক কারখানার প্রায় ৪০জন শ্রমিক কর্মচারিসহ বিভিন্ন সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা প্রতারণামূলক ভাবে হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। ভুক্তভোগীরা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক ইলিয়াস মৃধার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি প্রদান করে। এরপর ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধ্যান করে জানতে পারেন যে, ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে ইলিয়াস ও তার লোকজনকে দেখা গেছে, এরপর প্রথমে তাদেরকে দেখে আটক করেন ভুক্তভোগীরা, এরপর থানায় মামলা করার জন্য অভিযোগ করেন তারা, এসময় প্রতারক ইলিয়াস মৃধা’র স্ত্রী মোছাঃ ফরিদা বেগম উল্টো জাতীয় সেবা ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে জানায় তার স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে। এ দিকে ভুক্তভোগীরা আশুলিয়া থানা পুলিশকে জানায় এবং অভিযোগ করার পরও পুলিশ ঘটনাস্থলে সময়মত না আসার কারণে তারাও ‘৯৯৯’ এ ফোন করে বিষয়টি জানায়, এ খবর পেয়েও যখন পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে না, এরপর ভুক্তভোগী একজন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারকে জানান, সেই সাথে র্যাব-১, র্যাব-৪ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে জানানো হয়। সেসময় আশুলিয়া থানার এসআই তামিম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ জলিল উদ্দিন ভুঁইয়া (রাজন) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং প্রতারকদেরকে থানায় নিতে পুলিশকে সহযোগিতা করেন।
ভুক্তভোগী মোঃ সাজু মিয়া বলেন, একজনের মাধ্যমে তাদেরকে এখানে কয়েক ধাপে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করায়। তারা বলেছিলো অনলাইনে ওষুধ বিক্রি করেন। তাদের নম্বর খুলে দেন প্রতিষ্ঠানের মালিক ইলিয়াস। তাদের একটি ওয়েবসাইট আছে বলে জানায়, এরপর একটি আইডি নম্বর খুলে দেন। তারা বিভিন্ন লোভ দেখায়, লাভের একটি অংশ প্রতিদিন আমার সেই অনলাইন আইডিতে জমা হবে বলেন। ভুক্তভোগীরা আরও জানায়, দীর্ঘদিন চলে গেলেও তাদের এইসব আইডিতে কোন টাকা পয়সা দেয় না। ভুক্তভোগীরা এই পরিস্থিতিতে বুঝতে পারেন যে, অনলাইন ডিজিটাল সাইট খুলে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে তারা। ভুক্তভোগীরা আরও জানায়, টাকা চাইতে গেলেই উল্টো হুমকি দামকি দেয় ইলিয়াস ও তার লোকজন। এরপর তাদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা করার জন্য লিখিত অভিযোগ করা হয়। এদিকে পুলিশের দাবী- এখন পর্যন্ত ২৪জন ভুক্তভোগীর সন্ধান পেয়েছি। যাদের কাছ থেকে প্রায় ৩৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে হিসাব পাওয়া গেছে। পুলিশ আরও জানায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামীরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, সব মিলিয়ে ভুক্তভোগীদের প্রায় ৬০০জন বিনিয়োগকারী রয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে চক্রটি।
জানা গেছে, সেসময় আশুলিয়া থানা পুলিশ গণমাধ্যমকে বলেন, অভিযোগ পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে ওইদিন মঙ্গলবার রাত ১ টার দিকে দুইজনকে আটক করা হয়। এরপর তাদেরকে প্রতারণা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বুধবার সকালে দুইজকে আদালতে পাঠানো হয়। জানা গেছে, প্রতারণা করে প্রতিষ্ঠানের মালিক ইলিয়াস মৃধা আশুলিয়ার কাঠগড়া সরকার পাড়া এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। ইলিয়াস ডেসটিনি’র কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরি করেছেন, ডেসটিনি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর সে এই টেনিং কাজে লাগাতে বিভিন্ন প্রতারণামূলক কর্মকান্ড শুরু করে। এইটা তার প্রতারণার একটি অংশ বলে স্বীকার করেছে পুলিশের কাছে। এই চক্রের সাথে আরও অনেকেই জড়িত আছে বলে সূত্র জানায়। অন্যদিকে ফেসবুকে একাধিক চক্র সুন্দরী নারীদের ছবি দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের অর্থ ফিটিংবাজি করে থাকে। সারা দেশে বেকার শিক্ষিত লোকজনকে টার্গেট করে বিভিন্ন চাকরির লোভ দেখিয়েও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। উক্ত প্রতিবেদন ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হবে।