হেলাল শেখঃ সারাদেশে প্রায় লক্ষাধিক ভুয়া ডাক্তার চিকিৎসার নামে প্রতারণা করছে। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ সেবন করে বেশিরভাগ মানুষের রোগ ভালো হচ্ছে না। এর আগে ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়ায় ফার্মেসী দোকানে অভিযান চালিয়ে বিক্রয় নিষিদ্ধ ২২ ধরনের ভারতীয় ওষুধ জব্দ করেন ওষুধ প্রশাসন। কয়েকজন ভুয়া ডাক্তারকে র্যাব-৪ কর্তৃক গ্রেফতার করা হলেও অতি দ্রæত আদালত থেকে জামিনে এসে আবার যা তাই রোগীদের সাথে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করছে আশুলিয়ায়।
জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো ওষুধের দোকান দিয়ে ভেজাল ও নি¤œমানের ওষুধ বিক্রি করে অনেকেই লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেলেও এ ব্যাপারে কারো কোনো মাথা ব্যথা নাই। বেশিরভাগ এলাকায় ভুয়া ডাক্তার কর্তৃক চিকিৎসার নামে প্রতারণা ও ভেজাল ওষুধের বিক্রির ছড়াছড়ি। গত (১৩ অক্টোবর ২০২১ইং) দুপুর ২টার দিকে আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া চৌরাস্তা বাসস্ট্যাÐে সুফিয়া ফার্মেসিতে ওষুধ প্রশাসন কর্তৃক অভিযান পরিচালনা করা হয়। জানা যায়, বিক্রয় নিষিদ্ধ ভারতীয় ওষুধ বিক্রির সময় অভিযান পরিচালনা করেন ঢাকার ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তাগণ। এসময় সুফিয়া ফার্মেসিতে প্রবেশ করেন এবং দোকানের ভেতরে থাকা ২২ ধরনের নিধিদ্ধ ওষুধ জব্দ করা হয়। এই অভিযান শেষে সুফিয়া ফার্মেসির বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রির কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ দিয়েছেন ওষুধ প্রশাসন।
বিশেষ করে এর আগে বিভিন্ন অনলাইন ও সংবাদপত্রসহ গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। অনুমোদনবিহীন ভেজাল ওষুধ চেনা কঠিন, রাস্তার পাশে হাট-বাজারে নানারকম ওষুধ বিক্রি হওয়ায় সেই ওষুধ সেবন করে বেশিরভাগ রোগীদের রোগ মুক্তি না হয়ে বাড়ছে বিভিন্ন রোগের যন্ত্রনা। ভুয়া ডাক্তার কর্তৃক চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণা করা হচ্ছে মানুষের সাথে, সেই সাথে কিছু ডাক্তারের ব্যবহার এতোটাই খারাপ যা কসাইদেরও হার মানাবে তারা। র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও জেলা-উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তাগণ মাঝে মধ্যে ২-৪জন ওষুধ ব্যবসায়ীকে আটক ও ভুয়া ডাক্তারকে গ্রেফতার করে জেল জরিমানা করলেও জেল জরিমানা ভোগ করেও তারা ভালো হচ্ছে না, কোনো ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না তাদের চিকিৎসার নামে প্রতারণা। পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না চিকিৎসা সেবায় অনিয়ম দুর্নীতি। ভুয়া ডাক্তার ও ভেজাল ওষুধ দিয়ে অবাধে চলছে চিকিৎসা সেবার নামে নানারকম এইসব প্রতারণা।
সূত্রমতে জানা গেছে, বাংলাদেশে ভুয়া ডাক্তারের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। তারা রাজধানীসহ সারাদেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা এবং থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণা করছে। সেই সাথে অনুমোদনবিহীন ভেজাল ওষুধ রোগীদের কাছে বিক্রি করে সংশ্লিষ্টরা অবৈধভাবে অর্র্থ কামিয়ে বাড়ি গাড়ি করেছে, রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে অনেকেই। অন্যদিকে নামী দামি কোম্পানীগুলো ওষুধের গায়ে মূল্য লিখছেন না। ওষুধের গায়ে মূল্য না থাকায় কৌশলে দাম বেশি নিচ্ছেন অনেক ওষুধ দোকানদার। সেই সাথে নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি করে লাখ লাখ টাকার কারবার করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এক কথায় চিকিৎসা সেবার নামে অনিয়ম দুর্নীতির কারণে সরকারের বদনাম হচ্ছে। ভেজাল ওষুধে মানবদেহে রোগ ভালো না হয়ে আরও খারাপ পরিণতি হচ্ছে। বেশিরভাগ ওষুধ সেবন করে রোগ ভালো হচ্ছে না। রাস্তা-ঘাটে ও মুদি দোকানেও ওষুধ বিক্রি করতে দেখা যায়। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে অনেকেই ডাক্তার সেজে ওষুধের দোকান খুলে বসে চিকিৎসা করছে। যাদের ওষুধ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই তারাও এখন কথিত ডাক্তার। এর কারণে চিকিৎসা সেবায় বেশি জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অনেকেই জানায়। শুধু সচেতনতার অভাবে মানুষের শরীর স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
ঢাকার ধামরাই ও সাভার-আশুলিয়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিন থানায় প্রায় ২০ হাজারের বেশি ওষুধের দোকান রয়েছে, তাদের অনেকেরই সঠিক কাগজপত্র নেই। অনেকের বৈধ কাগজপত্র থাকলেও তার মেয়াদ নেই। সেই সাথে ক্লিনিক ব্যবসায় বিভিন্ন টেস্টের নামে অবৈধ ভাবে ভোক্তাকে ঠকানো হচ্ছে। ব্যাঙের ছাতার মতো ওষুধের দোকান ও ক্লিনিক ব্যবসা জমজমাট ভাবে চলছে। সূত্র জানায়, ঢাকার প্রধান শিল্পা ল আশুলিয়ায় কিছু ক্লিনিক ও হাসপাতালে বাচ্চা নষ্ট করার সুকৌশল রয়েছে।
র্যাব জানায়, ভুয়া চিকিৎসক নিজেকে ডাক্তার হিসেবে উল্লেখ করে আসেন। রোগ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি থাকার কথাও অনেক ব্যবস্থাপত্রে লিখেন এবং অনুমোদনহীন ভেজাল ওষুধ লিখে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে। ক্লিনিক ও হাসপাতালের সামনে ওষুধ কোম্পানির গাড়ী-মটরসাইকেল দেখলে মনে হয় সেখানে মটরসাইকেলের বাজার লেগেছে। উক্ত ব্যাপারে রাজধানী ঢাকার ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক সৈকত কুমার বলেন, ভারতীয় নিষিদ্ধ ওষুধ জব্দ করাসহ নিয়মিত অভিযান চলছে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।