নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মোহাম্মদপুর থানাধীন ঢাকা উদ্যানে বিগত কয়েকটি দুর্ধর্ষ খুনের কারনে শংকিত ঢাকা উদ্যানবাসী। এবার রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন, ঢাকা উদ্যানের বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের হাউজিং এর নাইট গার্ড, মোঃ রবিউল ইসলামকে চাকু দিয়ে ছুড়িকাঘাত করে খুন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নিহত রবিউলের বড় ভাই মোঃ আশরাফুল আলম (৪০) মোহাম্মদপুর থানায় ১টি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ২৫, ১১/১০/২০২৪ ইং।
মামলার এজাহারে রবিউলের বড় ভাই উল্লেখ করেন, আমার মেজ ভাই মোঃ রবিউল ইসলাম (৩৪), তার স্ত্রী চাঁদনী বেগম তাদের ছেলেমেয়ে সহ মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান, রোড নং-২, ব্লক-সি, বাসা নং-২৬ ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাস করিয়া মোহাম্মদপুর থানাধীন, ঢাকা উদ্যান বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের হাউজিং এর নাইট গার্ডের চাকুরি করিতো। ১১/১০/২০২৪ ইং হতে রাত অনুমান ১.০০ ঘটিকার সময় আমার চাচাতো ভাই জিকরুলের মোবাইল হতে জানায় যে, আমার মেজ ভাই মোঃ রবিউল ইসলাম (৩৪) এর শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। কিছুক্ষণ পরে আমার চাচাতো ভাই জিকরুল আমাকে পুনরায় ফোন করে জানায়, আমার ভাই রবিউল ইসলাম মারা গেছে এবং তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। আমি উক্ত সংবাদ পাইয়া আমার গ্রামের বাড়িতে আমার বাবা ও মাকে এবং নিকট আত্মীয়-স্বজনকে জানাইয়া আমার স্ত্রীকে নিয়ে দ্রুত রওনা করিয়া উক্ত হাসপাতালে পৌঁছাই। উক্ত হাসপাতালে উপস্থিত লোকজনসহ ঢাকা উদ্যান বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড হাউজিং এর সহকারী ম্যানেজার মোঃ দেলোয়ার হোসেন ছায়েদী ও সিকিউরিটি সুপারভাইজার মোঃ আব্দুল হান্নান মোবাইল ফোনে দেখানো মতে, আমার ভাই মোঃ রবিউল ইসলাম এর লাশ সনাক্ত করি। ঢাকা উদ্যান বহুমুখী সমবায় সমিতির লিমিটেড হাউজিং এর সহকারী ম্যানেজার ও তাদের সিকিউরিটি সুপারভাইজারদের নিকট হইতে আমার ভাই মোঃ রফিকুল ইসলামের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে খবর নিয়ে জানা যায় যে, ১০/১০/২০২৪ ইং তারিখ বৃহস্পতিবার ভোররাত অনুমান পাঁচটায় লোহার রড চুরি করিয়া নিয়ে যাওয়ার সময় আমার ভাই মোঃ রবিউল ইসলাম (৩৪) তার সঙ্গীয় অন্যান্য নাইটগার্ড মাহফুজ, আব্দুল মালেক, মোঃ সেলিম মিলে লোহার রড চুরির সাথে জড়িত চোর সুজন ওরফে ডিপজল (২২) সহ তার সঙ্গীয় অজ্ঞাতনামা ৫-৭ জন চোরদের ধাওয়া করে তাদের নিকট থেকে লোহার রড আটক করে, ঢাকা উদ্যান বহুমুখী সমবায় সমিতির লিমিটেড হাউজিং এর ভেতর নিয়ে আসে।পরবর্তীতে আমার ভাই মোঃ রবিউল ইসলাম (৩৪) বৃহস্পতিবার ১০/১০/২০২৪ ইং তারিখ অনুমান ১০ঃ১৫ ঘটিকায় মোহাম্মদপুর থানাধীন ঢাকা উদ্যান বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের হাউজিং, ব্লক-এ, রোড নং-৩ এর জাকিরের দোকানের সামনে নাইট গার্ডের ডিউটি করার সময় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে অজ্ঞাতনামা ৫-৭জন ব্যক্তিদের সহায়তায় আসামী সুজন ওরফে ডিপজল (২২) তার হাতে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ভাই মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম (৩৪)এর পেটে ও বাম হাতের বাহুতে, এলো পাথারি আঘাত করিয়া গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম করে। ঘটনার দিনের উক্ত সময়ের আশেপাশে সিসি ফুটেজ ক্যামেরায়ও তা পরিলক্ষিত হয়। পরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক, আমার ভাই মোঃ রবিউলকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
সরেজমিনে জানা যায়, আসামি সুজন ওরফে ডিপজল(২২) এর পিতা মোঃ আনছু। ঠিকানা- ব্লক-এ, রোড নং-৩, ঢাকা উদ্যান, থানা- মোহাম্মদপুর।
নিহত রবিউলের স্ত্রী চাঁদনী বলেন, আমার দুটি বাচ্চা আছে। বাচ্চা দুটি নিয়ে কিভাবে খাব, কিভাবে চলবো? আমার মেয়ে একটা ক্লাস সিক্সে পড়ে, ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে। এখন তো আমার দেখার মতো কেউ নাই, আমি খুব অসহায়।ঢাকা উদ্যান বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সিকিউরিটি গার্ড ছিল আমার স্বামী। তাদের কাছে আমি আমার পরিবারের জন্য সার্বিক সহযোগিতা চাচ্ছি এবং সরকারের কাছে আমার স্বামী হত্যার দ্রুত বিচার চাই।
রবিউলের মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছেলে বলেন, ঘটনার দিন রাতে বাসা থেকে আমার আব্বু ডিউটিতে যাওয়ার সময়,আব্বুকে পরোটা নিয়ে আসার জন্য বলেছিলাম। আব্বু বলছে ঠিক আছে আনমু। রাত ১০ঃ৩০ ঘটিকায় খবর এসেছে আমার আব্বুকে সন্ত্রাসীরা ছুরি মেরেছে। আমার আম্মু সেখানে গিয়েছে। আমি অনেক কান্না করেছি। আমার আব্বুকে যারা খুন করেছে তাদের বিচার চাই।
সিকিউরিটি গার্ডের সুপারভাইজার মোঃ আব্দুল হান্নান বলেন, নাইটগার্ড রবিউল ইসলাম অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আসামি সুজন ওরফে ডিপজল (২২) নাইট গার্ড রবিউল ইসলামকে হত্যা করে। এ ব্যাপারে নিহতের বড় ভাই মোঃ আশরাফুল আলম মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।আমরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত আসামিকে ধরে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
উক্ত বিষয়ে, ঢাকা উদ্যান বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সেক্রেটারি ফজলুল করিম বাদল বলেন, আমরা এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই প্রশাসনের কাছে। প্রশাসন যেন দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসে। এলাকার মানুষের নিরাপত্তার কাজে নাইট গার্ডরা দায়িত্ব পালন করে। তাদের যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে তারা কিভাবে কাজ করবে। এ সমস্ত যারা সিকিউরিটি গার্ড আছে তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব হচ্ছে প্রশাসনের। আমরা প্রশাসনের কাছে রবিউল হত্যার দ্রুত বিচার চাই। আমরা ঢাকা উদ্যান বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষ থেকে আমাদের নাইট গার্ড রবিউলের পরিবারের পাশে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব।
উক্ত মামলার বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ, আলী ইফতেখার হাসান জানান, উক্ত ঘটনা জানার পর থেকেই, আমাদের পুলিশ বাহিনীর ২টি টিম আসামিকে ধরার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সিসিটিভির ফুটেজ অনুযায়ী আমরা আসামিকে ধরার জন্য আইডেন্টিফাই করছি। আসামি সুজন ওরফে ডিপজলের সাথে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা আমরা তদন্তাধীন রেখেছি। খুব দ্রুত আসামী ধরা পড়বে আশাবাদী।