গোলাম মোস্তাফিজার রহমান মিলন, হিলি(দিনাজপুর) সংবাদদাতা:
মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষকতা করেন উপজেলার মধ্যবাসুদেবপুর মহল্লার বাসিন্দা সাবিনা ইয়াসমিন (৪৫)। ৪ বছর আগে কোন এক অজানা রোগে মারা যান স্বামী রাজু আহম্মেদ। তিনি (রাজু আহম্মেদ) পেশায় ছিলেন একজন মুদি দোকানী। নিজের শিক্ষকতার বেতন ও স্বামীর ছোট্ট মুদি দোকানে যা আয় হতো তা দিয়ে তিন ছেলে মেয়েসহ স্বাচ্ছন্দে চলছিল পরিবার। স্বামী মারা গেলে বন্ধ হয়ে যায় মুদি দোকান। শিক্ষকতা পেশায় যা পান তা দিয়ে স্কুলগামী দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলে সংসার। তাঁর এ পেশায় মাসিক বেতন ৫ হাজার টাকা। সেই বেতন ও নিয়মিত পাননা। পান তিন মাস পরপর। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বেতন তুলেছেন। সে হিসেব মতে চলতি মার্চ মাসে বেতন ও বোনাস পাওয়ার কথা। সে আশায় বুক বেধে ছিলেন। ঈদের আর বেশী দিন বাকি নেই। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ঈদের কেনা কাটা। কিন্তু সাবিনার পরিবারে নেই ঈদ আনন্দ। তিনি যে মসজিদ ভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রম এর আওতায় শিক্ষকতা করেন সেই প্রকল্পের মেয়াদ গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। নতুন করে প্রকল্প এখনো অনুমোদন হয়নি। তাই বেতন পাচ্ছেন না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, নিয়মিত বেতন পাওয়া যায় না। অনেক কষ্টে সংসার চালাতে হয়। এক বুক আশা ছিল ঈদের আগে পাবেন বেতন বোনাস। সেই বেতনের টাকা দিয়ে ছেলে মেয়েকে কিনে দিবেন ঈদের নতুন জামা কাপড়। কিন্তু তা আর হবেনা। গত দুই দিন আগে ফিল্ড সুপার ভাইজান জানিয়েছেন ঈদের আগে বেতন বোনাস হবেন। কারন নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ অনুমোদন এখন পর্যন্ত হয়নি।
অপর শিক্ষক ইমরুল কায়েস জানান, তিনি এক যুগ ধরে এই প্রকল্পের আওতায় শিক্ষকতা করে আসছেন। ৫ বছর পর পর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে সাথে সাথে বাড়ানো হতো। এখন শুনছি প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় তিন মাস আগে শেষে হলেও এখন পর্যন্ত বাড়ানো হয়নি। তাই বেতন বোনাস পাওয়া নিয়ে অনিশ্চিত।
মডেল কেয়ার টেকার সাজ্জাদ হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, বাবা ঈদে নতুন জামা কিনে দিবে সেই আশায় আছে তার ছেলে—মেয়েরা। এখন দেখছি জামা কাপড়তো দূরের কথা না ঈদে না খেয়ে থাকতে হবে।
হাকিমপুর মডেল রিসোর্স সেন্টার কাম উপজেলা সাব অফিস মূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণ শিক্ষা কার্যক্রম আওতায় ৬৭ টি কেন্দ্রে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এরমধ্যে ৩৮টি কেন্দ্র প্রাক প্রাথমিক, ২৮ টি কেন্দ্রে সহজ কুরআন শিক্ষা ও একটিতে বষস্ক শিক্ষা চালু রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে শিক্ষক পাঠদান রয়েছেন। মডেল রিসোর্স সেন্টারে একজন ফিল্ড সুপার ভাইজান, একজন জন মডেল কেয়ার টেকার ও ৩ জন সাধারণ মডেল কেয়ার টেকার রয়েছেন।
হাকিমপুর মডেল রিসোর্স সেন্টার কাম উপজেলা সাব অফিস এর ফিল্ড সুপার ভাইজান জানান, শুধু শিক্ষকগণ নয় রিসোর্স সেন্টারের ৫ জন স্টাপও বেতন বোনাস অনিশ্চিত। তবে প্রকল্পটির আওতায় শিক্ষা কার্যক্রম, যাকাত আদায়, সরকারি নির্দেশন মসজিতে পৌছানোসহ সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
ইসলামিক ফাইন্ডেশন দিনাজপুর জেলা কার্যালয় এর উপ—পরিচালক মশিউর রহমান জানান, গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর ৭ম পর্যায়ে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ৮ পর্যায়ে প্রকল্পের মেয়াদ এখনও অনুমোদন হয়নি। তাই ঈদের আগে বেতন—বোনাসের বম্ভবনা নেই।