দৈনিক সকালের বাংলা ডেস্ক: ফারুক ই আজম: যিনি ছিলেন নৌ কমান্ডো অপারেশন ‘জ্যাকপট’-এর ডেপুটি কমান্ডার
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ও বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ফারুক ই আজম জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৯০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ডাটা এন্ট্রি কাজ চলছে। এরইমধ্যে ৪০ হাজারের মতো ডাটা এন্ট্রি সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকি ৫০ হাজারের কাজ চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নেয় রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস।
ফারুক ই আজম ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধে অসাধারণ সাহসিকতা ও অবদানের জন্য ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি ছিলেন নৌ কমান্ডোদের ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর ডেপুটি কমান্ডার, যা ১৬ আগস্ট ভোর রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে পরিচালিত হয়। এই অভিযানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দখলে থাকা দেশের গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র ও নদীবন্দরগুলোতে হামলা চালিয়ে সেগুলো মুক্ত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এই আত্মঘাতী অভিযানে পাকিস্তানি ও তাদের মিত্র বিদেশি জাহাজগুলোকেও টার্গেট করা হয়, যার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব ও বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম বিশ্বময় পরিচিতি পায়।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল আত্মত্যাগ, স্বপ্ন ও সাহসের এক অদ্বিতীয় সংগ্রাম। সেদিনকার ২২ বছর বয়সী এক তরুণ হিসেবে যুদ্ধের ময়দানে নেমেছিলাম বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে, শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও জাতীয় মর্যাদা রক্ষার তাগিদেই যুদ্ধে অংশ নিই।
১৯৭১ সালের মার্চে খুলনায় অবস্থানরত ফারুক ই আজম ৭ মার্চের ভাষণের পর উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠেন। এরপর তিনি চট্টগ্রামে ফেরেন এবং পরবর্তীতে রামগড় হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। হরিণা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শেষে তিনি নৌ কমান্ডো হিসেবে নির্বাচিত হন এবং চট্টগ্রাম বন্দরে পরিচালিত জ্যাকপট অভিযানে অংশ নেন। এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন রফিক এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডার জি মার্টিস, যাদের তত্ত্বাবধানে গেরিলা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
ফারুক ই আজম বলেন, “যুদ্ধের সময়কার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। স্বাধীনতার ঘোষণা শোনার পর মনে হয়েছিল, বাঙালির ইতিহাসে আমরা এক মহাসময়ে উপস্থিত। আজ সেই সময়ের স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে অনেক পার্থক্য দেখলে কষ্ট হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেন্দ্র করে এখন অনেকে ব্যবসা করছে, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থে, সমাজে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানহানি ঘটেছে।”
তিনি মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক মর্যাদা ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু এখনও দেশে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম চলছে।