ইয়াবা গডফাদার হাজী সাইফুলের বন্দুকযুদ্ধে নিহত অজানা কাহিনী

ক্রাইম রিপোর্ট সারাদেশ


দীর্ঘদিন বিদেশে আত্মগোপনে থেকে সম্প্রতি দেশে ফেরার পর বৃহস্পতিবার রাতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী হাজী সাইফুল করিম।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত সাইফুলের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম ও টেকনাফ থানায় মাদকসহ ৭টি মামলা রয়েছে। তার বাড়ি টেকনাফ পৌরসভার শীলবুনিয়াপাড়ায়।

জানা গেছে, বিবিএ পাস করে সাইফুল ২০০০ সালের পর চট্টগ্রাম শহর থেকে এসে টেকনাফ স্থলবন্দরকেন্দ্রিক সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসা শুরু করেন। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল এসকে ইন্টারন্যাশনাল। তার পরিবার সেই সময় চট্টগ্রামে বসবাস করলেও পরে তারা টেকনাফে পুরনো বাড়িতে ফিরে আসেন। বিয়ে করেন টেকনাফের প্রভাবশালী পরিবারের মেয়ে বিএনপি নেতা আবদুল্লাহর বোনকে।

টেকনাফ স্থল বন্দরের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের মধ্যে পরিচিত মুখ হাজী সাইফুল করিম। অন্তত কাগজে কলমে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী হিসেবেই তার নাম। কিন্তু মিয়ানমার থেকে ইয়াবা নিরাপদে এনে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সবচেয়ে লম্বা হাতটা এই হাজী সাহেবেরই।

বৈধভাবেই মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে কাঠ আমদানি করা হয়। বিশালাকৃতির সব টিক, সেগুন, গর্জন জলপথে জাহাজে এবং ট্রলারে করে দেশে আসে। এই কাঠ আমদানির জন্য হাজী সাইফুলের নিজেরই একাধিক পণ্যবাহী জাহাজ রয়েছে। এই কাঠ আমদানির অন্তরালে রয়েছে মরণ নেশা ইয়াবার ব্যবসা। সারাদেশে প্রতিদিন যে ইয়াবা পাচার হয় তার সিংহভাগে জড়িত এই হাজী সাইফুল করিম।

হাজী সাইফুল অল্পদিনেই ব্যবসায় সফলতা অর্জন করেন। একাধিকবার তিনি সেরা করদাতার (সিআইপি) খেতাবও অর্জন করেন। কিন্তু পরবর্তী সময় ইয়াবার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তিনি। ইয়াবা ব্যবসার আড়ালে রাতারাতি ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন হাজী সাইফুল করিম।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমারের বড় বড় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলাদেশের হাজী সাইফুল করিমই ছিলেন সবচেয়ে বিশ্বস্ত। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আনতে গেলে সাইফুল করিমের মধ্যস্থতা ছাড়া ইয়াবা আনা যায় না।

সরকারি প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থা যতবারই ইয়াবা পাচারকারীর তালিকা করেছে, প্রতিটি তালিকায় এক নম্বারে ছিল টেকনাফের শীলবুনিয়াপাড়ার হানিফ ডাক্তারের ছেলে হাজী সাইফুল করিমের নাম। বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সুপারিশ করেছে তার প্রতিটিতেই উল্লেখ ছিল হাজী সাইফুল করিমকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাবে ইয়াবা পাচার।

এত তালিকা, রিপোর্ট ও সুপারিশের পরও বহাল তবিয়তে ব্যবসা করে গেছে হাজী সাইফুল। বছর চারেক আগে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকলেও কিছুদিন আগ পর্যন্ত পুলিশের সরাসরি সহযোগীতায় প্রকাশ্যে ইয়াবা ব্যবসা সারাদেশে নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। সাইফুলের ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে পুলিশের সবচেয়ে শক্তিশালী অসাধু একটি সিন্ডিকেট। চট্টগ্রামের সরকারী দলের প্রভাবশালী দুই জন জনপ্রতিনিধিও এই সিন্ডিকেটে জড়িত বলে জানা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *