বায়ু দূষণে প্রতি বছর ১লক্ষ শিশুর মৃত্যু হয় যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে! শুধু তাই নয়, দেশে ১২.৫শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী স্রেফ বায়ু দূষণ। বুধবার ছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এরই প্রাক্কালে মঙ্গলবার এমনই ভয়াবহ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। দেশের পরিবেশ সংক্রান্ত মূল চিন্তন ভাণ্ডার ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই)-এর দেশের পরিবেশ সংক্রান্ত এক সমীক্ষা রিপোর্টে ধরা পড়েছে, বায়ু দূষণে ১০হাজার শিশুর মধ্য গড়ে ৮.৫জন মারা যায় পাঁচ বছর বয়সের আগেই।
এরমধ্যে আবার শিশুকন্যার মৃত্যু বেশি। ১০হাজারে শিশুকন্যা মারা যায় ৯.৬জন। এই রিপোর্টই স্বীকার করে নিয়েছে যে, বায়ু দূষণ মোকাবিলায় সরকার গৃহীত প্রকল্পগুলি কোনও সাফল্যই পায়নি এখনও পর্যন্ত। এই ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকও। ওই মন্ত্রকের আধিকারিকরাও স্বীকার করে নিয়েছেন যে, পরিস্থিতি মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। তাঁরা যা আশা করেছিলেন, গৃহীত প্রকল্পগুলি তেমন ফল দিতে পারেনি।
চলতি বছরের গোড়ায় বায়ু দূষণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৭সালে বায়ু দূষণের জেরে ভারতে মৃত্যু হয়েছে ১২লক্ষ মানুষের। ‘গ্রিনপিস’-এর রিপোর্ট জানাচ্ছে, বিশ্বের রাজধানী শহরের মধ্যে বায়ু দূষণে সর্বাধিক দুষ্ট হচ্ছে দিল্লি। অবশ্য এই রিপোর্ট উড়িয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন পরিবেশ মন্ত্রী হর্ষবর্ধন, এবার তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রী হয়েছেন। তখন তিনি দাবি করেছিলেন, এই ধরনের সমীক্ষা আতঙ্ক ছড়ানো ছাড়া আর কিছুই করে না। কোনও সারবত্তা নেই এইসব রিপোর্টের।

২০১৩সালে বায়ু দূষণ প্রতিরোধে জ্বালানিচালিত যানবাহন ধীরে ধীরে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২০সালের মধ্যে এক কোটি ৫০লক্ষ জ্বালানিহীন এবং বৈদ্যুতিক যান বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়। কিন্তু সিএসই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯সালের মে মাস পর্যন্ত মাত্র ২লক্ষ ৮০হাজার ই-যান বিক্রি হয়েছে দেশে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। বস্তুত, এই অবৈদ্যুতিক যান ধীরে ধীরে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভারতই প্রথম গ্রহণ করে। কিন্তু ই-যান বিক্রির জাতীয় প্রকল্প কিন্তু সেই তুলনায় লক্ষ্যমাত্রা পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।
এই সমীক্ষা দূষণের নানা ধরনের বিষয়ের উপরেই করা হয়েছে। যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের সূচকগুলিকে খোঁজার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই জলবায়ু পরিবর্তনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘই। এই জলবায়ু পরিবর্তন এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক বিপদ। এর উপাদানগুলি প্রকট হয়ে ধরা পড়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের ‘সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস, ২০৩০’ প্রকল্পে। ভারত এখনও জলবায়ু পরিবর্তনের সূচকগুলির খোঁজ চালাচ্ছে। রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০১০ থেকে ২০১৪’র মধ্যে ভারতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ ২২শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মূল কারণ হলো শক্তি ক্ষেত্র। এই ক্ষেত্রই গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের জন্য ৭৩শতাংশ দায়ী। আবার চরম আবহাওয়াও ভারতের অন্যতম উদ্বেগের বিষয়। এর ফলে উত্তাপ বাড়ছে দেশে। ২০১৮সালে দেশের ১১টি রাজ্যকে চরম আবহাওয়ার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এই চরম আবহাওয়া ২০১৮সালে কেড়ে নিয়েছে ১৪২৫জীবন। এরই পাশাপাশি আবার জল, কৃষি, স্বাস্থ্য, বর্জ্য তৈরি ও বিনষ্ট, বন এবং বন্যপ্রাণীর মতো বিষয় নিয়েও মতামত দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে। সূত্র:
