ওমর ফারুক/ঢাকা

হত্যার শিকার মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির সঙ্গে কথোপকথনের ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের গ্রেফতারের গুঞ্জন উঠেছে গতকাল বুধবার থেকে। কোথাও তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করছে পুলিশ। তাকে গ্রেফতার করতে এরইমধ্যে ফেনী পুলিশের একটি দল এখন ঢাকায় অবস্থান করছে। ঢাকায় তার সম্ভাব্য অবস্থানগুলোতে তারা খোঁজ রাখছে। এছাড়া, ওসি মোয়াজ্জেমের গ্রামের বাড়ি ও কুমিল্লার বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। একইসঙ্গে তার মোবাইল ফোনের কললিস্টও সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত কয়েকদিন তিনি কার সঙ্গে কোন অবস্থান থেকে কথা বলেছেন সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেফতার হয়েছে উল্লেখ করে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।
বুধবার (১২ জুন) পুলিশেরর অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) যশোর থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করে বলে গুঞ্জন ওঠে। রাতভর এ গুঞ্জন অব্যাহত থাকে। পরে সিআইডির জনসংযোগ কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) শারমিন জাহান ব্রেকিংনিউজকে জানান, সিআইডি দেশের কোথাও থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করেনি।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন)সকাল ১০টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বরাত দিয়ে জানা যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানা ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট। তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি। তাকে গ্রেফতারের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। হয়তো খুব দ্রুতই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারবে।
এদিকে গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের দেশের বাইরে যাওয়ার সব পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ওসি যেকোনো সময় গ্রেফতার হবে।
গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠলে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। এ সময় আইনবহির্ভূতভাবে ওসি নুসরাতের জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন।
ওই ভিডিওটি বৃহস্পতিবার সোনাগাজীর আলো নামে একটি ফেসবুক পেজে ওই ভিডিওটি শেয়ার করে। এরপর ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিল- গত ২৭ মার্চ শ্লীলতাহানির চেষ্টার পর থানায় পুরো ঘটনা নিজ মুখে বর্ণনা করেছেন নুসরাত (ভিডিও)।
ভিডিওতে দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ওই ভিডিওটি ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে নাটক ও পরবর্তীতে অগ্নিদগ্ধের ঘটনাকে আত্মহত্যার রূপ দিতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
এছাড়া দুটি ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজউদৌলাসহ তার সহযোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ধরনের আরও অসংখ্য অভিযোগে গত ১০ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানা থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়।