যোগেন্দ্রনগর গ্রাম এখন অপরাধীগ্রামে পরিণত হয়েছে

ক্রাইম রিপোর্ট সারাদেশ

নাটোরের গুরুদাসপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত জালাল উদ্দিনের কাটা হাত উদ্ধার এবং দোষি ব্যক্তিদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ পুলিশ। তবে জালাল হত্যার ঘটনায় নিহতের ছেলে বাবু মন্ডল শুক্রবার গুরুদাসপুর থানায় বাদী হয়ে একই গ্রামের ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।
সরজমিনে শুক্রবার নিহত জালাল উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শোকের মাতম চলছে। স্ত্রীর কান্না থামছে তো ছেলের কান্না থামছে না। আর বৃদ্ধা মা কেঁদেই চলেছেন।

নিহতের স্ত্রী জমেলা কান্নারত অবস্থায় বলেন, ‘স্বামী খুন হওয়ায় আমি বিধবা হলাম। ছেলে মেয়েরা এতিম হল। বৃদ্ধ শাশুড়ি আর ছেলে মেয়েকে নিয়ে কিভাবে চলব আল্লারে…’ বলেই তিনি জ্ঞান হারালেন।

নিহতের ছেলে বাবু মন্ডল বলেন, ২০১১ সালের ২৪ মে প্রতিবেশী মমিন মোল্লাকে কে বা কারা গলা কেটে হত্যা করে। তখন আমার বাপ চাচাদেরকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মমিন হত্যা মামলার আসামি করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) নাটোর কোর্টে সেই মামলার হাজিরা ছিল। ওই মামলাটি আপসের জন্য সকাল ৬টার দিকে নিহত মমিন মোল্লার ভাই শরিফ, সাইদুলসহ আশরাফুল ও মাহাবুর মোবাইল ফোনে আমার বাবাকে পার্শ্ববর্তী সাবগাড়ী গ্রামের অ্যাডভোকেট গোলাম সরোয়ার স্বপনের বাড়িতে আসার কথা বলে।

বাবু আরও জানান, তার বাবা জালাল উদ্দিন সরল মনে তাদের কথামত স্বপন উকিলের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সাবগাড়ী রোডে মোশারফের বাড়ির কাছে পৌঁছালে আসামিরা প্রকাশ্যে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে চাপাতি ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে দুই হাত কেটে নেয় ও দুই পা ভেঙে দেয়। পরে বাম হাত কেটে নিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় জালালকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর দুপুর দেড়টার দিকে তিনি মারা যান।

এছাড়া স্থানীয় লোকজন জানান, ২০১৩ সালের ১৩ মে যোগেন্দ্রনগর গ্রামের সফুরাকে শারীরিক নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় সুফুরা ভাই কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। এই মামলার আসামি ছিলেন নিহত মমিনের ভাই সাইদুল, শরীফ এবং ছেলে রফিকসহ বশে কয়েকজন। ফলে দীর্ঘ দিনের বিরোধর জের ধরেই এই নৃশংস ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের জানান, যারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা প্রকৃতই সন্ত্রাসী। তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপকর্মের অপরাদের সঙ্গে জড়িত।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক জানান, যোগেন্দ্রনগর গ্রাম এখন অপরাধীগ্রামে পরিণত হয়েছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে না।


তিনি বলেন, হাত-পা কেটে নেয়া, হত্যা করা, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার মতো নানা ঘটনায় এলাকার মানুষ এখন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। গত তিনমাস আগেও যোগেন্দ্রনগ্রর গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে মমিনের (৩৭) হাত কেটে নেয়া হয়। তার আগে একই গ্রামের কোবাদ হাজির ছেলে মোজামের (৩৮), ওসমানের ছেলে খালেক (৩৬) ও করম আলীর ছেলে খালেকের (৫৭) হাত কেটে নেয়া হয়। আর এসব ঘটনা পারিবারিক কলহের জের ধরেই ঘটেছে। মাত্র পাঁচ-ছয়টি পরিবারের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে চলেছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ২০০১ সালে রাজনৈতিক কলহে জালালের পরিবার ৫ বছর এলাকা ছাড়া ছিল। ওই সময় জালালের জমিজমা দখল করে নেয় প্রতিপক্ষের লোকজন।

এ ব্যাপারে গুরুদাসপুর থানা পুলিশের ওসি মোজাহারুল ইসলাম বলেন, পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আসামিরা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। শিগগিরই আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *