কালিয়াকৈরে শর্তে নয়,অর্থেই মিলছে পাঠদানের অনুমতি, বাসা ভাড়া নিয়ে চলছে শিক্ষা-কার্যক্রম

শিক্ষা


কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বোর্ডের দেওয়া শর্ত নয়, অর্থেই
মিলছে নিম্ন -মাধ্যমিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদানের
অনুমতি। এ সুযোগে বাসা ভাড়া নিয়ে কোন রকমে চলছে শিক্ষা-
কার্যক্রম। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষা বোর্ডের নিয়মনীতির তুয়াক্কা
না করে কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এভাবেই গড়ে
উঠেছে নিম্ন-মাধ্যমিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে ব্যাহত হচ্ছে
শিক্ষা ব্যবস্থা।


উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী সূত্রে জানা
গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৪৫টি মাধ্যমিক, ৮টি মাদ্রাসা ও
৮টি স্কুল এন্ড কলেজ রয়েছে। চলতি বছর আরো ৮টি কিল্ডারগার্ডেন
এবং কেজি স্কুলকে নিম্ন ধ্যমিক শিক্ষা পাঠদানের অনুমতি
দিয়েছে শিক্ষা বোর্ড। এর মধ্যে গ্রামবাংলা বিদ্যালয়,
রোজগার্ডেন মডেল স্কুলসহ তিনটি স্কুলের অনুমতি পত্র উপজেলা
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে পৌছেছে। এছাড়া এবিসি মডেল হাই
স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মৌচাক মডেল স্কুল, ট্যালেন্টপুল প্রি-ক্যাডেট
এন্ড হাই স্কুল, জেনিথ প্রি.এল কেজি এন্ড হাই স্কুলসহ আরো
পাঁচটি স্কুল পাঠদানের অনুমতি পেলেও ওই পত্র উপজেলা মাধ্যমিক
শিক্ষা অফিসে পৌছেনি। এ ছাড়াও উপজেলা থেকে আরও প্রায় ৫০
শিক্ষা প্রতিষ্ঠিান থেকে নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা পাঠদানের অনুমতি
চেয়ে শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।


সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এবং পাঠদানের অনুমতি পাওয়া না পাওয়া
শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,
কালিয়াকৈর উপজেলায় ব্যাংঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে
বাণিজ্যিকভাবে কয়েক’শ কিল্ডারগার্ডেন ও কেজি স্কুল। পাঠদানের
অনুমতিহীন এসব প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থীদের অন্য কোনো
অনুমোদিত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থেকে রেজিস্টেশন করানো হয়ে থাকে।
আর এই সুযোগে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশি বেতন আদায় ও
কোচিংয়ের মাধ্যমে গলাকাটা টাকা নেওয়া হচ্ছে। এসব

কিল্ডারগার্ডেন ও কেজি স্কুলে শিক্ষার মান উন্নয়নের তেমন
কোনো ব্যবস্থা ও গুরুত্ব নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ
প্রতিযোগিতা করছে, কে কার আগে পাঠদানের অনুমতি পাবে?
পাঠদানের অনুমতি পেলেই যেন তাদের রমরমা শিক্ষা বাণিজ্য মজবুত
হয়। যার কারণে এসব প্রতিষ্ঠান খুলতে না খুলতে অনুমতি
প্রতিযোগীতায় মেতে উঠে কর্তৃপক্ষ। গত এক বছরে
গ্রামবাংলা বিদ্যালয়, রোজগার্ডেন মডেল স্কুল, এবিসি মডেল
হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মৌচাক মডেল স্কুল, ট্যালেন্টপুল প্রি-
ক্যাডেট এন্ড হাই স্কুল, জেনিথ প্রি.এল কেজি এন্ড হাই স্কুলসহ
আটটি স্কুল নিম্ন-মাধ্যমিক পাঠদানের অনুমতি পেয়েছে। অথচ
এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা বোডের্র দেওয়া অধিকাংশ শর্তই
পূরণ করেনি। বোর্ডের শর্ত পুরণ না হলেও তিন বছরের জন্য নিম্ন-
মাধ্যমিক পাঠদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে মানহীন এ সব শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তু বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমি নেই,
চলছে ভাড়া বাসায়। অনেক ভবনের নিচ তলায় ফ্যামিলি বাসা, উপর
তলায় স্কুল, পর্যাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থী নেই, শিক্ষার্থীদের চলাচলের
রাস্তাও নেই। ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
পাঠদান। ছোট ছোট শ্রেনীকক্ষ তার সাথে রয়েছে টয়লেট, সেখান
থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধও। অধিকাংশ স্কুলে নেই খেলার মাঠ, রাস্তায়
চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এসব কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা
ব্যবস্থা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ
জানিয়েছেন, স্কুল পরিদর্শনে আসা শিক্ষা বোর্ড ও উপজেলা
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই পাঠদানের অনুমতি
পেয়েছেন। অনুমতি পেতে সব মিলিয়ে প্রতিটা স্কুলকে আড়াই
লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত উৎকুচ দিতে হয়েছে। তবে শিক্ষা
পরিবেশহীন অনিয়ম মাফিকভাবে গড়ে উঠা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
থেকে কতটুকু শিক্ষা লাভ গ্রহণ করবে শিক্ষার্থীরা? কিভাবে বা
তাদের মেধা বিকশিক হবে এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের।
আবার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোর্ডের সকল নিয়মকানুন ও শর্ত
মেনে চললেও টাকা না দেয়ায় তাদের পাঠদানের অনুমতি মিলছে না।
অথচ উপজেলায় অনেক ঝুকিপূর্ন ভবনেও বোর্ডেও নিয়ম না মেনে
স্কুল পরিচালনা করে পেয়েছেন পাঠদানের অনুমতি।

এবিসি মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল
ইসলাম রাজু জানান, ভাড়া বাসায় তাঁর স্কুল। সম্পর্ক ভাল থাকা
কারণে উপজেলা শিক্ষা অফিস আমার স্কুল পরিদর্শন না করেই
অনাপত্তি পত্র দিয়েছে। তিনি আরও জানান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা
অফিসার দীর্ঘদিন তিনি এ উপজেলায় কর্মরত থাকায় অনেকের
সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেছে, যার ফলে তিনি বোর্ডের শর্ত না
মানলেও স্কুল পরিদর্শন ছাড়াই অনাপত্তি পত্র দিয়েছেন। এছাড়া
বোর্ড থেকে লোক এসে দেখে পাঠদানের অনুমতি দিয়েছে। এ
অনুমতি পেতে টাকা-পয়সা লাগছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কিছু করতে গেলে কম-বেশি টাকা লাগেই।
মৌচাক মডেল স্কুলের পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল
হান্নান জানান, তিনিও ভাড়া নিয়ে স্কুল করেছেন। তবে অনুমতির
জন্য সব শর্ত দেখেন না। এছাড়া টাকা-পয়সা দিয়েই আমরা
অনুমতি এনেছি।


উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান,
নিজস্ব জমিসহ যে সব শর্ত রয়েছে, নিম্ন মাধ্যমিক পাঠদানের
অনুমতি পেতে সেসব শর্ত পূরণ করতে হবে। তবে বোর্ড কর্তপক্ষ
যে প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য মনে করেছেন, সেই প্রতিষ্ঠানকেই
অনুমতি দিয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *