শ্রীলংকার বিপক্ষে রেকর্ড জয়ে সমতায় সিরিজ শেষ করলো নিউজিল্যান্ড

খেলা

 ব্যাটিং-বোলিং অলরাউন্ড নৈপুণ্যে শ্রীলংকার বিপক্ষে কলম্বো টেস্ট জিতে নিলো সফরকারী নিউজিল্যান্ড। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট আজ ইনিংস ও ৬৫ রানের ব্যবধানে জিতে ন্যায় সফরকারী কিউইরা। ইনিংস বিবেচনায় শ্রীলংকার বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের এটি সবচেয়ে বড় জয়। এই জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করলো নিউজিল্যান্ড। গল-এ সিরিজের প্রথম টেস্ট ৬ উইকেটে জিতেছিলো শ্রীলংকা।


বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান টম লাথামের ১৫৪ রান এবং উইকেটরক্ষক বিজে ওয়াটলিং ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে কলম্বো টেস্টে স্বাগতিক শ্রীলংকার বিপক্ষে চতুর্থ দিন শেষে প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ৩৮২ রান। ফলে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ১৩৮ রানে এগিয়ে ছিলো কিউইরা। প্রথম ইনিংসে ২৪৪ রান করেছিলো শ্রীলংকা।
লাথাম আউট হলেও অপরাজিত থাকা দুই ব্যাটসম্যান ওয়াটলিং ৮১ ও গ্র্যান্ডহোম ৮৩ রানে আজ পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করেন। শেষ দিনের দ্বিতীয় বলেই উইকেট পতনের তালিকায় নাম তুলেন গ্র্যান্ডহোম। আগের ৮৩ রানেই থেমে যান তিনি। তবে ৬৩তম টেস্টে ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভুল করেননি ওয়াটলিং। তার সেঞ্চুরি ও শেষ দিকে পেসার টিম সাউদির ঝড়ো গতিতে ১০ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় অপরাজিত ২৪ রানে ৬ উইকেটে ৪৩১ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে নিউজিল্যান্ড। শ্রীলংকার স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরা ১১৪ রানে ৩ উইকেট নেন।


মধ্যাহ্ন-বিরতির আগে নিউজিল্যান্ড ইনিংস ঘোষনা করায় ১৮৭ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে শ্রীলংকা। স্বাগতিকদের লক্ষ্য ছিলো আজ শেষ দিনের বাকি সময় ব্যাট করে ম্যাচটি ড্র রেখে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত করা। আর নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য ছিলো, শেষ দিনের বাকি সময়ের মধ্যে শ্রীলংকার দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়ে সিরিজ হার থেকে নিজেদের রক্ষা করা। শেষ পর্যন্ত বোলাররা নিউজিল্যান্ডের মুখে হাসি ফোটালেন। বোল্ট-সাউদি-প্যাটেল-গ্র্যান্ডহোম-সমারভিলের দুর্দান্ত নৈপুন্যে ১২২ রানেই অলআউট হয়ে যায় শ্রীলংকা। ফলে ম্যাচ হেরে সিরিজ ড্র তে শেষ করতে বাধ্য হয় লংকানরা।


প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই রানের খাতায় শূন্য থাকা অবস্থায় রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন শ্রীলংকার ওপেনার লাহিরু থিরিমান্নে। ১৪তম বলে নিউজিল্যান্ড পেসার ট্রেন্ট বোল্টের শিকার করে শূন্য হাতে ফিরেন আরেক ওপেনার কুশল পেরেরা। ৪ রানে ২ ওপেনারকে হারানোর চাপ ভোলার চেষ্টা করেও পারেনি শ্রীলংকা। কারন দুই ওপেনারের পর পরের ব্যাটসম্যানদের বড় ইনিংস খেলতে দেননি নিউজিল্যান্ডের বোলাররা। ৩২ রানের মধ্যে শ্রীলংকার পাঁচ ব্যাটসম্যানের পতন নিশ্চিত করে ফেলেন সমারভিল-গ্র্যান্ডহোম-প্যাটেল। কুশল মেন্ডিস ২০, সাবেক অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ৭ ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ১ রান করে ফিরেন। এমন অবস্থায় ৫ উইকেটে ৩৩ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় শ্রীলংকা। আর তখনই ম্যাচ বাঁচাতে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যায় লংকানরা।
এ অবস্থায় ৪১ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক দিমুথ করুনারতেœ ও উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকবেলা। রানের চেয়ে ঐ সময় উইকেটে টিকে থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো শ্রীলংকার জন্য। জুটিতে ১৩২ বল মোকাবেলা করেন করুনারতেœ-ডিকবেলা।


এরপর দিলরুয়ান পেরেরা শূন্য রানে ফিরলে সুরাঙ্গা লাকমলকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন ডিকবেলা। অষ্টম উইকেটে ১০৭ বল মোকাবেলা করে দিনের শেষভাগে ম্যাচের লাগাম টেনে নিয়ে আসেন ডিকবেলা। কিন্তু দলীয় ১১৫ রানে লাকমলকে আউট করে নিউজিল্যান্ডকে খেলায় ফেরান সমারভিল। লাকমল ১৪ রান করেন। জুটিতে যোগ হয় ৪০ রান ।
লাকমলের আউটের ২৪ বল পরই শ্রীলংকার শেষ ভরসা ডিকবেলাকে শিকার করে নিউজিল্যান্ডের জয় সময়ের ব্যাপারে পরিণত করেন প্যাটেল। ৫১ রান করেন ডিকবেলা। তার আউটের পঞ্চম বলেই শ্রীলংকার শেষ ব্যাটসম্যান লাসিথ এম্বুলডেনিয়াকে নিজের শিকারে পরিণত করে নিউজিল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন বোল্ট। লংকানরা গুটিয়ে যায় ১২২ রানে। বোল্ট-সাউদি-প্যাটেল-সমারভিল ২টি করে উইকেট নেন। গ্র্যান্ডহোম ১টি উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের লাথাম।
টেস্ট সিরিজ শেষে এবার আগামী ১ সেপ্টেম্বর তিন ম্যাচের টি-২০ লড়াইয়ে নামবে শ্রীলংকা ও নিউজিল্যান্ড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *