এক শিক্ষার্থীর জন্য এক শিক্ষক!

শিক্ষা

মোঃ সাইফুল ইসলাম,মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধিঃ
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার সুজাতপুর মধ্যপাড়া শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী আছে মাত্র ছয়জন। আর এ ছয় শিক্ষার্থীকে পাঠদানের জন্য ওই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত রয়েছেন পাঁচজন শিক্ষক। সরেজমিন যেয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়।
জানা যায়, ১৯৮৯ সালে উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়নের মশিয়াহাটি বাজারের পূর্বপাশে স্থানীয়দের দান করা জমির ওপর সুজাতপুর মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গড়ে ওঠে। ২০০০ সালে বিদ্যালয়ে চার কক্ষের একটি একতলা ভবন নির্মিত হয়। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে আছেন বিনা পানি মণ্ডল। অন্য চার সহকারী শিক্ষক হলেন, মাধুরি বিশ্বাস, স্বপ্না বৈরাগী, বিউটি বিশ্বাস ও শিপ্রা মলি­ক। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, এ প্রতিষ্ঠানে প্রাক প্রাথমিক ও প ম শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী নেই। প্রথম শ্রেণিতে একজন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে একজন, তৃতীয় শ্রেণিতে দুজন ও চতুর্থ শ্রেণিতে দুজন শিক্ষার্থী রয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম দিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ৫০ জনের নিচে শিক্ষার্থী রয়েছে এমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা চাওয়া হয়েছে। এরপর সরেজমিন শিক্ষার্থীর খোঁজে নিতে শুরু করে দপ্তরটি। এ সময় সুজাতপুর মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান বিনা পানি মণ্ডল তাঁর বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানান। গত বছর এ প্রতিষ্ঠানে ১৭ জন শিক্ষার্থী ছিল বলে দপ্তরকে তথ্য দেন প্রধান শিক্ষক। এদিকে প্রধান শিক্ষকের দেওয়া তালিকা ধরে ওই বিদ্যালয়ের প্রকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুসন্ধানে নামেন সংশ্লিষ্ট অ লের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পলাশ কান্তি। পরে তিনি প্রতিষ্ঠান ঘুরে ছয়জন শিক্ষার্থীর অস্তিত্ব পান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনা পানি মণ্ডল বলেন, ‘২০১৮ সালে আমি এ প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছি। তখন ১৮ জন শিক্ষার্থী পেয়েছিলাম। এরপর শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে থাকে। প্রাক প্রাথমিকে কোনো শিক্ষার্থী নতুন ভর্তি হচ্ছে না। গত বছর ৮ জন শিক্ষার্থী ছিল।’ শিক্ষার্থী কম থাকার কারণ হিসেবে বিনা পানি বলেন, বিদ্যালয়টি নব্য জাতীয়করণ হয়েছে। তারপর থেকে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম থাকায় ৩-৪ বছর আগে উপজেলা শিক্ষা অফিস জানান, এ প্রতিষ্ঠান উঠে যাবে। এ কথা শোনার পর অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের আর এ প্রতিষ্ঠানে দেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষক নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না। এখানে কোনো লেখাপড়া হয় না। শিক্ষার্থী বাড়ানোর ব্যাপারে শিক্ষকদের কোন আগ্রহ কিংবা আন্তরিকতা কোনটিই নেই। কুলটিয়া ইউনিয়নে দায়িত্বরত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পলাশ কান্তি বলেন, ‘চার মাস আগে আমি এ অ লের দায়িত্ব পেয়েছি। এসে দেখেছি সুজাতপুর মধ্যপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানিবন্দী। প্রতিষ্ঠানে ঢোকার জন্য একটি বাঁশের সাঁকো আছে। ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে এ বিদ্যালয়টি অধিকাংশ সময় পানিতে ডুবে থাকে। শিক্ষকেরা পাঠদান করাতে পারেন না ঠিকমতো। এ কারণে এখানে শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না। বর্তমানে বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষক ও ছয়জন শিক্ষার্থী রয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর সূত্র জানা যায়, উপজেলায় অন্ততঃ ১০টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫০ জনের নিচে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সুজাতপুর মধ্যপাড়া শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছয়জন, মঠপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২১ জন, কুমারসীমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৯ জন, পাঁচকাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৩ জন, দক্ষিণ পাঁচকাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৪ জন, ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৪ জন, হাটগাছা মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪০ জন, কামিনিডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৩ জন, উত্তর দহকুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪০ জন ও জোঁকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, ৫০ জনের নিচে কম শিক্ষার্থীর বিদ্যালয় সংখ্যা ১০টি হলেও সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে উপজেলার এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০ টির কম নয়। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সেহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘সুজাতপুর মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৪ জন জানতে পেরে আমি একদিন প্রধান শিক্ষককে ডেকেছি। তখন তিনি স্বীকার করেছেন তাঁর প্রতিষ্ঠানে মাত্র ছয়জন শিক্ষার্থী। পরে আমি বিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’ ‘আমার প্রতিবেদন অনুযায়ী সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে গেছেন।’উল্লেখ্য,উপজেলার ২৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৪৪৬জন শিক্ষক কর্মরত আছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *