তিতাস গ্যাসের ১ হাজার অবৈধ সংযোগ বিচ্চিন্ন-একই স্থানে অভিযান ৭-৮বার খরচ ৮ লক্ষাধিক টাকা!

ক্রাইম রিপোর্ট

বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ায় সরকারি প্রতিটি অভিযানে তিশভতস গ্যাসের ৫শ’ থেকে ১ হাজার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সরকারের তহবিল থেকে খরচ হয় প্রায় লক্ষাধিক টাকা, একই স্থানে ৭-৮ বার অভিযান করার নজির রয়েছে, তাহলে সরকারের কত টাকা খরচ ও কত টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে?। তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে চলছে জমজমাট বাণিজ্য-সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন মহল।
মঙ্গলবার (২১ জুন ২০২২ইং) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ঢাকার আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের বাংলাবাজার ইটাখোলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছেন সাভার তিতাস কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি-পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার পরিস্থিতি বা সক্ষমতা আপাতত নেই, তাই গ্রাহকদের আশায় ঝুলিয়ে না রেখে গ্যাস সংযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধ রাখার জন্য সরকারি সিদ্ধান্তটি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে-কথাগুলো বলেছেন, সাভার তিতাস কর্তৃপক্ষ ও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ঢাকার আশুলিয়ার কাঠগড়া, ইউসুফ মার্কেট, তাজপুর, এদিকে জামগড়া গফুর মন্ডল স্কুল এলাকা, মীর বাড়ি, চিত্রশাইল শাপলা বিল্ডিং এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগের ছড়াছড়ি। তথ্যমতে, এসব অবৈধ সংযোগ দাতারা হচ্ছে জামগড়া এরাকার নাজিমউদ্দিন, সোহেল মীর, সাঈদ মীর, শামীম, শরীফ, মোস্তফা, মদিনা হোটেলের সেলিমসহ ১৫-২০ জনের দালাল চক্র। অন্যদিকে সিরাজ, হানিফ, ফারুকসহ আরও অনেকেই তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। গ্যাসের অবৈধ সংযোগ থেকে অগ্নিকান্ডে নারী ও শিশুসহ গত দুই বছরে সাভার ও আশুলিয়া এবং নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, শতাধিক মানুষ দগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। এদিকে সিলিন্ডার গ্যাসের বোতলের দাম বেড়েই চলেছে, ওষুধের দোকান, মুদি দোকানসহ বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে দুই শ্রেণীর গ্রাহক সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন, এদের মধ্যে এক শ্রেণি হলো রাজধানী ঢাকাসহ সাভার আশুলিয়ায় ও বিভিন্ন জেলা উপজেলা ও থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে এবং শহরের বাসা বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিকেরা। আরেকটি হলো বিভিন্ন আবাসন কোম্পানিগুলো। তাদের মধ্যে অনেকেই গ্রাহকদের গ্যাসের পাইপলাইনের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। আবাসন কোম্পানির অনেকেই বলেন, এখন গ্যাসের সংযোগ না পেলে তাদের প্লট, জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে না। তারা অনেকেই দাবি করেন যে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ব্যবসা বাণিজ্য ভালো না, এখন বন্যায় মানুষের অভাব বাড়ছে। এর মধ্যে আবার গ্যাস সংযোগ নতুন করে আর কেউ পাচ্ছেন না, এতে গ্রাহকরা বেশি বিপাকে পড়েছেন।
জানা গেছে, ২০১৮ইং সালে এলএনজি আমদানি শুরুর পর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা গ্যাসের সংযোগ নতুন করে শুরু হওয়ার কথা নীতিনির্ধারণী মহলেও শুনা যাচ্ছিল। তখন ঢাকা ও সাভার, আশুলিয়া এবং নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলায় অবৈধ সংযোগের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দেয় দালাল চক্র সিন্ডিকেটগুলো। গ্রাহকদের তারা আশ্বাস দেয়, কিছুদিন পরে গ্যাসের নতুন বৈধ সংযোগ দেওয়া শুরু করলে তারা এগুলোকে বৈধ করে দেবেন। কিন্তু এখন সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পালায় এই গ্রাহকদের সংযোগও কাটা পড়ছে। জানা গেছে, সরকারি ভাবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বেশ জোরেসোরেই মাঠে নেমেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ, একটি অভিযানে সরকারের লক্ষাধিক টাকা খরচ হচ্ছে, অভিযানের দুইদিন পর আবার সেখানে অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়, আবার অভিযান চালানো হয়, এতে সরকারের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে কিছুদিন আগে জ্বালানি বিভাগ উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়ে তা বাস্তবায়নের আদেশ দিয়েছে। সূত্র জানায়, ডিমান্ড নোট ইস্যু হওয়া এবং টাকা জমা দেওয়া গ্রাহকদের আবেদনও বাতিল করা হবে। তাদের অর্থ ফেরত দেবে সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিগুলো। বিতরণ সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, নতুন সংযোগের জন্য ডিমান্ড নোট ইস্যু হওয়া এবং প্রয়োজনীয় ফি জমা দেওয়া গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখের মতো। গ্যাস ও খনিজ সম্পদ খাতের নেতৃত্ব প্রদানকারী সংস্থা পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, বৈধ অবৈধ নানা উপায়ে এই শ্রেণির গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ হবে।
দেশে সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আলী ইকবাল মোঃ নুরুল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে গত বৃহস্প্রতিবার মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছি। গৃহস্থালিতে আর গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না। যেসব গ্রাহক সংযোগের জন্য আবেদন করেছেন এবং টাকা জমা দিয়েছেন, তাদের নাম আমাদের তথ্যভান্ডারে রয়েছে। আগামী রবিবার এ বিষয়ে আমরা একটি সভা করে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের রোডম্যাপ তৈরি করবো। বিঃ বা সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। দেশে গ্যাস বিতরণে নিয়োজিত অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, পশ্চিমা ল গ্যাস কোম্পানি ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি। এই সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, আগামী সোমবার সভা করে তারা সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের রূপরেখা ঠিক করবেন। উক্ত ব্যাপারে জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। নানা প্রলোভন দেখিয়ে জনগণকে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নিতে বাধ্য করে কিছু দালাল চক্র। আবার অনেক গ্রাহকও নানাভাবে তদবির-প্রচেষ্টায় অবৈধ সংযোগ নেন। এখন স্থায়ীভাবে আবাসিক সংযোগ বন্ধ হওয়ায় নতুন করে অবৈধ সংযোগ নেওয়া অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাবে। জানা গেছে, ঢাকার প্রধান শিল্পা ল আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বাসা বাড়িতে প্রায় লক্ষাধিক অবৈধ সংযোগ রয়েছে।
সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিঃ ব্যবস্থাপক (জোবিঅ) প্রকৌশলী আবু সাদাৎ মোহাম্মাদ সায়েম এর কাছে গত তিন বছরের অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, সাভার ও আশুলিয়ায় তিতাস গ্যাসের বৈধ গ্রাহক সংখ্যা ৫২ হাজারের বেশি হবে। শিল্প গ্রাহক সংখ্যা ১৫০০। গ্যাসের অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারী দালালদের বিরুদ্ধে সাভার থানায় ৬টি ও আশুলিয়ায় ৪২টি মামলা করা হয়েছে। গ্যাসের অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারী দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও তিনি জানান। এক স্থানে ৬-৭ বার অভিযান করা হলেও আবার অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়। তাহলে সরকারের কত টাকা খরচ হচ্ছে এর হিসাব জানা দরকার। সরকার প্রতি বছরে কত টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে এটাও জানতে চায় সচেতন মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *