মোঃ সাইফুল ইসলাম,মনিরামপুর(যশোর)প্রতিনিধি ঃ
আট বছর আগে যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। পাঁচ লাখ মানুষের জন্য নির্মিত হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি সেবার মান । প্রয়োজনীয় ওষুধ, চিকিৎসক এবং লোকবল না থাকায় উন্নতি হয়নি এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা। ৫০ শয্যা তো দূরের কথা, ৩১ শয্যার লোকবলেরই সংকট দীর্ঘ দিনের। পাওয়া যায় না এক্স-রে, আলট্রাসনো সেবা। মেলে না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ। রোগীদের মানসম্মত খাবার না পাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। করোনা মহামারী শুরুর পর থেকে দুই বছরের অধিক সময় ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কমিটির সভা হচ্ছে না। সভা না হওয়ায় নানা সমস্যায় হাসপাতালটি জর্জরিত হলেও সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তন্ময় বিশ্বাস বলছেন, ‘করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর তিন বার কমিটির সভা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারিনি।’ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্র সূত্রে জানা গেছে, এখানে দুটি আলট্রাসনো যন্ত্র রয়েছে। তবে দুটোই বিকল হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। টেকনিশিয়ানের অভাবে কাজে আসছে না এক্স-রে যন্ত্রও। ১০টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদের বিপরীতে আছেন মাত্র দুজন। এর মধ্যে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জাহাঙ্গীর হোসেনের কাগজে কলমে এখানে পদায়ন হলেও তিনি কাজ করেন সদর হাসপাতালে। অজ্ঞান (অ্যানেসথেসিয়া) চিকিৎসক মুজাহিদুলকে কেশবপুর হাসপাতালে দিয়ে সেখানকার প্রসূতি চিকিৎসক আয়েশা আক্তারকে তিন দিন মনিরামপুরে এনে সপ্তাহে রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার চলে অস্ত্রোপচারের (সিজার) সেবা। সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ায় এ হাসপাতালে চিকিৎসা কর্মকর্তার পাঁচটি নতুন পদ সৃষ্টি হয়। এ পদগুলোতে চিকিৎসক তো নেই। উল্টো ৩১ শয্যার জন্য চিকিৎসকের দুটি পদ খালি আছে। খালি রয়েছে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার (আরএমও) পদও। তা ছাড়া চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে কাগজে কলমে তিনজনের এখানে পদায়ন থাকলেও, তাঁদের একজন রোগী দেখেন কেশবপুরে এবং বাকি দুজন দায়িত্ব পালন করেন যশোর সদর হাসপাতালে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন পর মনিরামপুর হাসপাতালের দন্ত বিভাগে বিউটি বিশ্বাস নামের নতুন একজন চিকিৎসকের পদায়ন হয়েছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় ঠিকঠাক রোগীর সেবা দিতে পারছেন না তিনি। প্যাথলজি বিভাগে ২০ ধরনের পরীক্ষার সুযোগ থাকলেও সবগুলো জোটে না। নিয়মিত সিজারের ব্যবস্থা না থাকায় জরুরি সময়ে অন্তঃসত্ত¡া নারীদের মানহীন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার যেতে হচ্ছে। হাসপাতালে নিয়মিত ভর্তি রোগীর চাপ বেড়েছে। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রায়ই ভর্তি থাকছেন ৫৫-৬০ জন রোগী। বহুদিন ধরে খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে এসব রোগীদের। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তন্ময় বিশ্বাস বলেন, ‘ছয় মাস আগে আমি যোগদান করে খাবারের মান বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। ভর্তি প্রতি রোগীর জন্য নিয়মিত বরাদ্দ ১২৫ টাকা। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় ঠিকাদার এত অল্প টাকায় ভালো খাবার দিতে পারছেন না। নতুন করে সরকার রোগী প্রতি খাবারের বরাদ্দ দ্বিগুণ করেছে। দু-এক মাসের মধ্যে কার্যকর হলে, আশা করছি খাবারের মান নিয়ে রোগীদের অভিযোগ থাকবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওষুধের সংকট কিছুটা আছে। সরকারি বরাদ্দের অর্ধেক ওষুধ হাতে পেয়েছি। এ সপ্তাহে বাকি ওষুধ পাব।’ তখন সমস্যা অনেকটা মিটে যাবে।’
