উলিপুরে বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও ঘরে ফিরতে পারছে না মানুষ, বেড়েছে দূর্ভোগ

রংপুর
জাহিদ আল হাসান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
আমাগো কাইয়ো খাইব্যার দেয় নাই, বানের আগে যা জমান আছিলো তাই খায়া বাঁইচা আছি।’
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভারী বর্ষন আর পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র বেষ্টিত ইউনিয়নগুলো। বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে মানুষের ঘর-বাড়ি, গবাদিপশুসহ সবজি ক্ষেত। বন্যা কবলিত ইউনিয়নের মানুষ ও গবাদিপশু গাদাগাদি করে ঠাই নিয়েছে গুচ্ছ গ্রামগুলোতে। সংকট সৃষ্টি হয়েছে খাদ্য, গো খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির। তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহার হওয়া নৌকাগুলো দেখলেই ত্রাণের আসায় তেড়ে আসছে বানভাসিরা। ভাসমান চরে গুচ্ছ গ্রামগুলোতে আশ্রিত মানুষরা বলছেন, আমরা সরকারি বে-সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পাই না।
শনিবার(২৫ জুন) ব্রহ্মপুত্র ঘুরে দেখা গেছে, পানিতে তলিয়ে গেছে ঘর-বাড়ি, কৃষকের আবাদসহ গবাদিপশুর আশ্রিত জায়গাগুলো। ডুবন্ত ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে সুখের চরে জেগে থাকা আশ্রয়ণ প্রকল্প গুচ্ছ গ্রাম ও চর ঘুগুমারির গুচ্ছ গ্রামে। চর ঘুঘুমারিতে আশ্রয়ণের ঘরগুলো এখনো বিতরণ করা সম্ভব না হলেও সেখানে ৬০টি ঘরে আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন চরের প্রায় তিন শতাধিক মানুষ। সুখের চরে জাগ্রত গুচ্ছ গ্রামে আশ্রয়নের ঘর রয়েছে ৪০টি সেখানেও আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন চর থেকে ভেসে আসা প্রায় দুইশতধিক মানুষ। মানুষের সাথে আশ্রয় নিয়েছে তাদের গবাদি পশুপাখিগুলো। সেখানে খাদ্য সংকটে পড়েছে মানুষ ও গবাদিপশুপাখি। দুটি আশ্রয়ণের উচু জায়গায় শত শত মানুষের জন্য টিউবওয়েল রয়েছে মাত্র দুটি। পানির সংকট দুর করার জন্য দুর-দুরান্তে নৌকা বাইয়ে বিশুদ্ধ পানির খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছে আশ্রিতরা। স্যানিটেশন ব্যবস্থাও একে বাড়ে নাজুক। বানের পানি নামতে শুরু করলেও ঘরে ফেরার সাহস পাচ্ছে না নিম্নাঞ্চলের মানুষ। এখনো বাড়ির আঙ্গিনা দিয়ে স্রোত বয়ে যাচ্ছে। চরাঞ্চলগুলোতে নেই বে-সরকারি সংস্থা এনজিও’র কার্যক্রম। সকল প্রকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত চরের বানভাসিরা। প্রতি বছর জেগে থাকা চরের মাটির উপর যে কৃষি ফসল ফলায় তাই দিয়ে বছর পার করে তারা। এবারের বন্যায় চিনা বাদাম, পাট ক্ষেত ,সবজি জমি সব তলিয়ে গেছে। উৎপাদন সংকটসহ পুষ্টিহীনতায় পরার সম্ভাবনাও দেখা দিবে ভাবছে চরের মানুষ। সুখের চর গুচ্ছ গ্রামে দক্ষিন চর, নাউয়ার চর থেকে এসে আশ্রয় নেয়া, ‘সাইদুল, আকবর মোল্লা, নার্গিছরা জানালেন, আমরা নয়দিন থেকে গুচ্ছ গ্রামে আছি আমাগো কাইয়ো খাইব্যার দেয় নাই, বানের আগে আমাগো যা জমান আছিলো তাই খায়া বাঁইচা আছি।’ একই কথা জানালেন, ঘুঘুমারি গুচ্ছ গ্রামে আশ্রয় নেয়া, জহুরা, ফিরোজা, শিকদার। 
জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করে বলছেন, সরকারি সাহায্য যা পাচ্ছি তা দিয়ে বানে ভাসা মানুষদের কাছে পৌছা সম্ভব হচ্ছে না। বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া জানান, দুধকুমার, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র নদী চতুরদিকে তাঁর ইউনিয়নটিকে ঘিরে রেখেছে, প্রতিদিন শতশত ঘর-বাড়ি নদীতে বিলীন হচ্ছে, সেই সাথে সরকারি যে সাহায্য ইতোমধ্যে পেয়েছি তা অপ্রতুল। এদিকে শুক্রবার (২৫ জুন) বিকালে হাতিয়া ইউনিয়নে একটি আশ্রয় কেন্দ্র ঠাই নিয়েছে বানভাসিরা। আশ্রিত ভেপো (৯০), রুস্তম জানালেন, ‘হামার এতি এলাও কাইয়ো খাবার দেই নাই ব্যাহে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল কুমার জানান, সরকারি সাহায্য যেটুকু আসছে সেটুকু নির্ভূলভাবে বন্যা এফ্যাক্ট এলাকাগুলোতে বিতরণ করা হচ্ছে। গো খাদ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, কোম্পানিতে অর্ডার করা হয়েছে সময়মত সেগুলো বানভাসিদের মাঝে পৌছে দেয়া হবে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *